ছেলেধরা আতঙ্ক : বাস্তব, নাকি গুজব?

গত কয়েকদির ধরে সমাজ ছেয়ে গেছে ‘‘ছেলেধরা’’ আতঙ্কে। বিষয়টা আমার নলেজে এসেছে গতকাল (৮ জুলাই)। চতুর্থ শ্রেণির নিপা নামক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফোন করে কুশল বিনিময়ের পর বললেন, ‘স্যার, সবাই বলে, ছেলেধরা (পোলাচোর) নাকি বের হয়েছে?’’ আমি বললাম, ‘‘পোলাচোর’’ বের হলে আপনার তো মাথাব্যথা নেই, কারণ আপনার হচ্ছে মেয়ে!’ তিনি আমার কথায় না হেসে পারলেন না। আমি বললাম, ‘আপনি কোত্থেকে জানলেন পোলাচোর বের হবার কথা?’ তিনি বললেন, ‘লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে নাকি গতকাল একজন পোলাচোর ধরা খেয়েছে।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো ঘটনা কতটুকু সত্য।’ পরে অনলাইনে খোঁজ করে দেখলাম, লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে মানুষ পোলাচোর সন্দেহ করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে- এমন একটা সংবাদ দৈনিক মানবজমিনের অনলাইনে পাওয়া গেছে। আমি বুঝতে পারলাম, এই তিলকেই মানুষ তাল বানিয়ে যে যেভাবে পারছে একজন আরেক জনের নিকট প্রচার করছে।

বাংলাদেশ গুজবের দেশ। আমি শৈশব থেকে এ পর্যন্ত অনেকবার এমন ‘‘ছেলেধরা বের হওয়া’’র কথা শুনেছি। ছোট ছিলাম বলে আগে বিশ্বাস করতাম, ভয়ে ভয়ে থাকতাম। কিন্তু বড় হবার পর যখন দেখেছি, আমাদের সমাজে কয়েক বছর পরপরই এরকম গুজব ছড়ায়,পাশাপাশি আমরা গুজবে বিশ্বাসী একটা বিশেষ জাতি, তখন থেকে এমন গুজবগুলো আমাকে ভয় লাগাতে পারে না।

মোবাইল ফোন বিস্ফোরিত হয়ে মারা যাওয়া, বাঁশের পানি খাওয়া, পিতলের ১ টাকার কয়েন চড়া দামে বিক্রি হওয়া, রাক্ষস বের হয়ে মানুষকে জীবিত খেয়ে ফেলা, মাছ মাংস রাখা ফ্রিজ পুলিশ ভাংচুর করা- এমন নিত্যনতুন গুজব আমাদের সমাজে কয়েক বছর পরপরই ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষকে আতঙ্কিত করেছে।
তবে ছেলেধরা বের হওয়ার গুজবটি একেবারে ভিন্ন। কারণ অন্য গুজবগুলো শুধু একবার ছড়িয়েছে, শুধু এ গুজবটি বার বার ছড়াচ্ছে।
আজ পঞ্চম শ্রেণিতে ক্লাস চলাকালীন সময় শাহেদুল নামক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফোন করে বললেন, ‘স্যার, শাহেদুল কি স্কুলে গেছে?’ আমি বললাম, ‘এসেছে। কিন্তু কেন এ প্রশ্ন করলেন?’ তিনি বললেন, ‘সবাই বলছে, ‘‘কল্লাকাটা’’ নাকি বের হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘‘আপনাদের বাড়ির কারো কল্লা (মাথা) কেটে নিয়েছে নাকি?’ তিনি বললেন, ‘‘পোদ্দার বাজার বোর্ড অফিসে নাকি কল্লাকাটা একজনকে ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘আমি আসল খবর জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।’ তাঁর ফোন কেটে আমি পোদ্দারবাজার ‘বাজার কমিটি’র সেক্রেটারী হারুন ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বোর্ড অফিসে নাকি একজন কল্লাকাটা চোরকে ধরে ধোলাই দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘কই, নাতো! এসবই গুজব।’ আমি এরপর বোর্ঢ অফিসের নিকটস্থ ‘মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার্স’ দোকানের সাইফুল ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বোর্ড অফিসে নাকি কল্লাকাটা একজনকে ধরে আটকে রাখা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘কে বলেছে আপনাকে?’ আমি বললাম, ‘আমাদের স্কুলের একজন অভিভাবক বলেছে।’ তিনি বললেন, ‘সব ভুয়া খবর!’
আমি পরে গুগলে ‘‘ছেলেধরা গুজব’’ লিখে সার্চ করে দেখলাম, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এরকম অসংখ্য সংবাদের লিঙ্ক চলে এলো। অধিকাংশই এরকম- ‘‘ছেলেধরা গুজবে গণধোলাই’’।
কিছুক্ষণ আগে আমাদের চতুর্থ শ্রেণির রায়হান নামক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খবর নিয়ে এলেন, সুবহানপুর বাজারে (চাটখিল, সদর, নোয়াখালী) নাকি একজন ‘পোলাচোর’কে ধরে গনধোলাই দেয়া হয়েছে। আমি ঐ বাজারের নিকটস্থ আমাদের এক আত্মীয়কে ফোন করে জানলাম, একজন অপরিচিত লোক নাকি ঘোরাঘুরি করছিল। মানুষ তাকে ছেলেধরা ভেবে ধরে গনধোলাই দিয়েছে। শেষে স্থানীয় চেয়ারম্যান নাকি তাকে ৩০০ টাকা দিয়ে বিদায় করেছে!

প্রকৃতপক্ষে ছেলেধরার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। এই ঘটনাগুলো হচ্ছে পুরো ‘‘কান নিয়েছি চিলে’’র মতো বিষয়। এক লোকের মাথার উপর দিয়ে একটা চিল উড়ে গেল। একটু দূর থেকে অন্য একজন লোক ঐ লোককে বললো, ‘তোমার কান তো চিলে নিয়ে গেছে।’ লোকটির কথা শুনে ঐ লোক চিলের পিছে পিছে দৌড়তে শুরু করলো চিলের কাছ থেকে তার কান উদ্ধারের জন্য। পাশাপাশি এই বলে চিৎকার করতে লাগলো, ‘চিল আমার কান নিয়ে গেছে। কে কোথায় আছেন, বেরিয়ে আসুন। চিল থেকে আমার কান নিয়ে দিন!’
মানুষ তার চিৎকার শুনে তার সাথে চিলের পিছে পিছে দৌড়তে শুরু করলো। একসময় একজন লোক ঐ লোকটিকে বললো, ‘তুমি যে বলছো, চিল তোমার কান নিয়ে গেছে, তুমি কি তোমার কান ধরে দেখেছো, তোমার কান সত্যিই চিল নিয়ে গেছে কিনা!’ লোকটি বললো, ‘নাতো!’ এই বলে সে তার কানে হাত দিয়ে দেখলো, তার কান জায়গামতোই আছে, চিল নেয়নি। সে এতোক্ষণ অহেতুক চিলের পিছে দৌড়েছে।
আমরা যারা এখন ছেলেধরা বের হয়েছে বলে, শুনে ও ভেবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি, তাদের নিকট অনুরোধ, যার কাছ থেকে এমন সংবাদ শুনবেন, তাকে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করুন, ‘আপনার কোনো সন্তানকে কি ছেলেধরা নিয়ে গেছে?’ দেখবেন, কেউ আপনার প্রশ্নটির উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলবে না। শুধু বলবে, ‘অমুক বলেছে’, ‘ঐখানে ঘটেছে’ এমন সব কথা। যদি আপনার নিকটস্থ কারো বা আপনার সন্তানকে ছেলেধরা নিয়ে যায়, শুধু তখনিই ছেলেধরা বের হবার কথা বিশ্বাস করতে পারেন, না হয় মনে রাখবেন, এটা অপপ্রচার, একধরনের আতঙ্ক এবং সর্বোপরি গুজব।
নূর আহমদ, লক্ষ্মীপুর।

https://web.facebook.com/nurahmad.teacher

রিফাত হত্যা : দায় কার?

প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনায় রিফাতকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় পুরো জাতি স্তব্ধ। এর আগে গত কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছিল এরকম দিবালোকে আরেকটি খুনের ঘটনা নিয়ে। সবাই জানে তা হচ্ছে সোনাগাজীর নুসরাত হত্যার ঘটনা। এই দু’টি ঘটনাই শুধু নয়, এদেশে কিছুদিন পর পর এরকম নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কেন এমন হচ্ছে? অনেকে অনেক উত্তর দেবেন। অল্প কয়েকটি উত্তর নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।
রিফাতকে সবার সামনে হত্যার সময় আশেপাশের অনেক মানুষ সেলফোনে ভিডিও করছিল। এই লোকগুলো ভিডিও না করে রিফাতকে রক্ষার চেষ্টা করেনি কেন, এই প্রশ্ন এখন দেশের অধিকাংশ মানুষের। মানুষ বলছে, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে আমরা বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করার পরিবর্তে তার ভিডিও ধারণ করার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিই, এই জন্যই চোখের সামনেই মানুষ খুন হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না। রিফাত হত্যার পর উচ্চ আদালতও এই সুরেই কথা বলল। ‘আদালত বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ঘটনা ঘটল, ভিডিও হল, দাঁড়িয়ে থাকল, কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি- এটাই সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র। এটা সমাজের ব্যর্থতার চিত্র। সারা দেশের মানুষ এ হত্যাকান্ডে মর্মাহত। দিনের আলোতে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য।’ [দৈনিক যুগান্তর, ২৮ জুন ২০১৯]
নিষ্ক্রীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের দোষ দেয়ার পেছনে যুক্তি কী? মুঠোফোনের ভিডিওতে দেখা যায়, রিফাতকে লম্বা দা দিয়ে উপর্যুপরি কোপাচ্ছিলেন দু’জন। যারা প্রত্যক্ষদর্শীদের দোষ দিচ্ছেন, তাদের নিকট প্রশ্ন, নিজেকে নিয়ে ভাবুন, এরকম ভয়ানক পরিস্থিতিতে আপনি কি নিজের জীবন বিপন্ন করে রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে যেতেন? লম্বা দা হাতে থাকা কাউকে আক্রমণরত ঘাতকদেরকে খালি হাতে মোকাবিলা করতে যাওয়া কার পক্ষে সম্ভব? অ্যাকশনধর্মী কোনো চলচ্চিত্রের নায়কও বাস্তবে এরকম কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে ‘চাচা আপন জান বাঁচা’ বলে নিজের জান নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে! শুধু সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষেই এরকম ঘটনার মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু কাউকেই তো সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়না! পুলিশের কন্ট্রোল নম্বর ৯৯৯ তো এখন প্রায় সবার জানা। তবু পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যেতে পারলো কী করে?
ঢাকা শহরে প্রায়ই ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটে। ‘ছিনতাইকারীকে গণধোলাই’ কথাটি লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখুন। এরকম অসংখ্য ঘটনা সম্বলিত সংবাদের লিঙ্ক পেয়ে যাবেন। এসব ছিনতাইকারীকে কারা গণধোলাই দিচ্ছে? কাউকে ছিনতাই করার সময় সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীরাই। ধর্ষণকারীকে, চোর-ডাকাতকে এরকম গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দের ঘটনা প্রায়ই এদেশে ঘটে। কিন্তু রিফাতকে আক্রমণের সময় আক্রমণকারীদেরকে প্রতিহত করে গণধোলাই দেয়া হয়নি কেন? আমার মতে অনেক কারণে। ১. রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারী, চোর, ডাকাত এরা হয় অপরিচিত। তাই এদেরকে গণধোলাই দিলে পরে আবার এদের পুণরাক্রমণের ভয় মনে কাজ করে না। কিন্তু রিফাতকে যারা আক্রমণ করেছে, তারা ছিল এলাকার প্রভাবশালী দাগী অপরাধী। এমনকি ইতিপূর্বে বিভিন্ন অপরাধে বারবার জেলে গিয়েও প্রত্যেকবার জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাবার কারণে এরা হয়ে গেছে বেপরোয়া। এদের গায়ে আঁচড় লাগানোর সাহস তাই কারো হয়নি, প্রতিহত করা দূরের কথা। ২. এদের হাতে ছিল মারণাস্ত্র। নিজের জীবনকে বিপন্ন করে তাই কেউ এদেরকে প্রতিহত করার সাহস পায়নি। সুতরাং প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে দায়ী করার সুযোগ নেই। বরং আমার মনে হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাটি ভিডিও করে সর্বোচ্চ সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তারা এলাকার এসব ক্ষমতাধর বেপরোয়া অপরাধীদের অপরাধের ভিডিও করে তা আবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করাটাই তাদের বড় ধরনের সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। রিফাত হত্যার ভিডিও সামনে থাকার কারণেই প্রকৃত অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করা আইন-শৃ্খংলা বাহিনীর জন্যে এখন সহজ হচ্ছে।
রিফাত হত্যার দায় তাহলে কার? প্রথমতঃ সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজীসহ যারা রিফাতকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তাদের। পাশাপাশি নয়ন বন্ডসহ রিফাতের হত্যাকারীদেরকে যারা ইতিপূর্বে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং বিভিন্ন অপরাধে তাদেরকে বার বার জেলে নেয়ার পরও জেল থেকে বের হতে সাহায্য করেছে, তাদের। কারা তাদেরকে জেল থেকে বের হতে সাহায্য করেছে? ২৯ জুনের প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাব্বিরের বিষয়ে পুলিশ কখনোই কঠোর ছিল না। কারণ, এলাকার প্রভাবশালী মহল তাঁর প্রশ্রয়দাতা।’ [পৃষ্ঠা-২] একই তারিখের প্রথম আলোয় আরেকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘পুরোনো অপরাধী সাব্বির, রিফাতদের বিরুদ্ধে এখন নানা অভিযোগ উঠছে। তাহলে এত দিন পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার বলেন, সাব্বিরের বিরুদ্ধে দুটি মাদক, একটি অস্ত্রসহ আটটি মামলা রয়েছে। আটটি মামলাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। সব কটি মামলাতেই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। আর রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল। তিনটিতেই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এ মামলাগুলোর তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।’ [পৃষ্ঠা-২]
এই প্রতিবেদনগুলোতে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা এটা সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট, সাব্বির, রিফাত ফরাজী এদের বেপরোয়া হবার পেছনে পুলিশ এবং আদালতেরও দায় রয়েছে। আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতিও যে নতুন নতুন হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পেছনে ভূমিকা রাখে, তা আবার প্রমাণিত হলো।
বাংলা ট্রিবিউনে জুন ২৭, ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ‘রিফাত খুনের ঘটনায় মন্ত্রীরা যা বললেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন ‘বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় কি বলা যায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে? বরগুনা বলেন, রূপগঞ্জ বলেন, কোনও ঘটনাই রাজনৈতিক নয়, রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি ঘটেনি। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে। এমন কোনও দেশ পাবেন না যেখানে সামাজিক অস্থিরতা নেই। তবে পুলিশ ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে।’
সেতুমন্ত্রী একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করলেন। কিন্তু একই রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেশে যদি কয়েকদিন পরপরই ঘটে, তা কি আর বিচ্ছিন্ন থাকে? তা তো সচরাচর হয়ে যায়, তাই না? তিনি আরও বললেন, এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে। না, এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে না, বরং আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ দেশ এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল ও অনুন্নত কিছু দেশেই বেশি ঘটে। ইউরোপের দেশগুলোর খোঁজ নিন, দেখবেন বাংলাদেশে এক বছরে যত জন মানুষ খুন হয়, ইউরোপের ১০টি দেশে ১০ বছরেও তত জন মানুষ খুন হয় না। সেতুমন্ত্রী আরও বললেন, ‘বরগুনা বলেন, রূপগঞ্জ বলেন, কোনও ঘটনাই রাজনৈতিক নয়।’ আমি তাঁর এই কথার সাথে কিছুটা একমত। তাঁর কথাটি এই অর্থে সঠিক যে, এই হত্যাকান্ড রাজনৈতিক কোনো কারণে হয়নি। কিন্তু তাঁর কথাটির সাথে আমার কিছুটা ভিন্নমতও আছে। কারণ তিনি যতোই বলেন, এই রকম ঘটনাগুলো রাজনৈতিক নয়, কিন্তু যখন দেখা যায়, এই হত্যাকান্ডগুলো যারা ঘটায়, তারা রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণেই হত্যাকান্ডগুলো ঘটানোর সাহস পায়। যদি এই সব হত্যাকান্ডের হোতারা একটা অপরাধের পর জেলে গিয়ে রাজনৈতিক কোনো প্রশ্রয় না পাবার কারণে বেরিয়ে আসার সুযোগ না পেতো, তাহলে দ্বিতীয় বারের মতো কোনো অপরাধ সংঘটনের সুযোগ পেতো না।
সেতুমন্ত্রী এই কথাগুলো বলে মূলত দায় এড়ানোরই চেষ্টা করেছেন। দায়িত্বশীল লোকদের এই দায় এড়ানোর মানসিকতাও দেশে এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের পুণরাবৃত্তির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
জানি না, কখন দেশের দায়িত্বশীল লোকরা দায়িত্বসচেতন হবেন, কখন আর রাজনীতিবিদরা কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ কখন পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারবে!
নূর আহমদ : শিক্ষকnurahmad786@gmail.com

দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত আমার কয়েকটি লেখা

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি লেখার লিঙ্ক:


দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ১২ জুন ২০১৮)

(প্রকাশকাল: ০৪ জুন ২০১৮)

(প্রকাশকাল: ১০ জুলাই ২০১৮)

(প্রকাশকাল : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯)


(প্রকাশকাল: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯)

৭. মানুষ কখন বংশগতভাবে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়? (প্রকাশকাল: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২)

দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ২৫ এপ্রিল ২০১৫)

(প্রকাশকাল: ০৪ এপ্রিল ২০১৫)

(প্রকাশকাল: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ইং )

দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

(প্রকাশকাল: ১২ জানুয়ারি ২০১৭)

(প্রকাশকাল: ২৭ জানুয়ারি ২০১৬)

দৈনিক ইত্তেফাকের লিঙ্ক: পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা আর নয়

দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ০৩ এপ্রিল ২০১৯)

(প্রকাশকাল: ১৫ জুলাই ২০১৫)


(প্রকাশকাল: ২৫ অক্টোবর ২০১৬)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

(প্রকাশকাল: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

(প্রকাশকাল: ০৫ অক্টোবর ২০১৬)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

(প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রথম আলো’য় প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ১২ নভেম্বর ২০১৪)

জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ: জাতীয় বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করার উপায়