'ডিম আগে, না মুরগী আগে?' এক শাশ্বত ধাঁধাপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তরের মীমাংসা নাকি নেই! অথচ এই এক প্রশ্নের আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় অকাট্যভাবে। বিশ্বাস না হলে বাকি অংশ পড়ুন...
কেউ বলে, ডিম আগে; কেউ বলে, মুরগী আগে। উভয় পক্ষের পক্ষে শক্ত (!) যুক্তি থাকার কারণে কোনো পক্ষই প্রতিপক্ষের যুক্তি মেনে নিতে চান না। এখনো বিশ্বের অনেক জ্ঞানী মানুষের কাছে এক সমাধানহীন প্রশ্ন এটি।
যারা মনে করে, ডিম আগে অস্তিত্ব লাভ করেছে,
পরে সেই ডিম থেকেই মুরগী হয়েছে এবং এভাবেই মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে, তাদের যুক্তি হলো, যেহেতু ডিম থেকেই মুরগীর বাচ্চা জন্ম নেয়, তাই পৃথিবীতে ডিমই আগে আসার কথা। তাই, যারা বলে মুরগী আগে এসেছে, তাদেরকে বলতে হবে, ডিম ছাড়া কিভাবে সেই মুরগীটি এসেছে?!
আরো পড়তে পারেন: স্র্রষ্টা বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?
অন্যদিকে যারা বলে, ডিম নয়, বরং মুরগীই পৃথিবীতে আগে এসেছে, তাদের যুক্তি হলো, মুরগী ছাড়া ডিমের অস্তিত্ব যেহেতু্ সম্ভব নয়, আর মুরগী থেকেই যেহেতু কেবল ডিম হতে পারে, তাই আগে মুরগী অস্তিত্ব লাভ করেছে, এরপর সেই মুরগী ডিম দিয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়ার মাধ্যমেই মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে। তাই যারা বলে ডিম আগে এসেছে, তাদেরকে বলতে হবে কোনো মুরগী ছাড়া কিভাবে পৃথিবীতে ডিম অস্তিত্ব লাভ করেছে?
প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নটির অবতারণা প্রথমে যেই ব্যক্তি করেছে এবং এখনো যারা প্রশ্নটির সদুত্তর খুঁজে অস্থির হচ্ছে, তাদের চিন্তাশক্তিএকেবারে অগভীর। কারণ প্রশ্নটি যে একেবারেই অবান্তর! যেহেতু, শুধু একটা ডিম বা একটা মুরগী থেকে পৃথিবীতে মোরগের বংশবিস্তার কখনোই সম্ভব নয়!
যদি শুধু একটা ডিম প্রথমে অস্তিত্বে আসতো, তাহলে ওই ডিমে ‘তা’ দেয়ার জন্য একটি মুরগীর প্রয়োজন নিশ্চয়ই হতো। তাছাড়া ডিম থেকে বাচ্চা হতে হলে যে মুরগীটি ডিম পেড়েছে, ডিম পাড়ার আগে তার সাথে কোনো ‘মোরগ’ -এর শারীরিক সম্পর্ক অবশ্যই প্রয়োজন হতো।
কোনো মুরগী-ই ডিমটিতে ‘তা’ দেয়া ছাড়া এবং ডিম পাড়ার আগে সেই মুরগীর সাথে কোনো একটি মোরগের শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া সেটি থেকে বাচ্চা হবার প্রশ্নই আসে না। অপরদিকে যদি মনে করা হয়, প্রথমে একটিমাত্র মুরগী পৃথিবীতে অস্তিত্বলাভ করেছে এবং সেই মুরগীর ডিম থেকেই মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে, তাহলে এই প্রশ্ন থেকে যায়, যদি মুরগীটি ডিম দেয়, তাহলে কোনো মোরগের সাথে দৈহিক মিলন ছাড়া তো ডিমগুলোতে বীজ হবে না, তবু কী করে মুরগীটির ডিম থেকে বাচ্চা হলো?!
আসলে কোনো একটি ডিম বা মাত্র একটি মুরগী থেকে পৃথিবীতে মোরগের বংশবিস্তার হয়নি; একইসাথে একজোড়া মোরগ-মুরগীর আবির্ভাবের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, ১. অন্য প্রায় সব দিক থেকে একই রকম, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন লিঙ্গের দু’টি প্রাণি একই সাথে পৃথিবীতে কোত্থেকে এলো? ২. মাত্র কোনো এক লিঙ্গের এরকম একটি প্রাণি কেনো এলো না? ৩. তাছাড়া দু’লিঙ্গের দু’টি প্রাণি পৃথিবীর দু’প্রান্তে আবির্ভুত না হয়ে একসাথে একই জায়গায় আবির্ভুত হলো কেনো?
এটা নিশ্চয়ই একটা পরিকল্পিত বিষয়, যা কোনো মহশক্তিশালী সত্ত্বার কাজ। আল্লাহ তায়ালা সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নাম্বার আয়াতে বলেন - سُبْحٰنَ الَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ - "পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সকল জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যমীন যা উৎপন্ন করেছে তা থেকে, মানুষের নিজদের মধ্য থেকে এবং সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না ।" সুবহানাল্লাহ!
পড়তে পারেন একটি বিশেষ নিবন্ধ: ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা বিজ্ঞান-সৃষ্ট ভুত!
দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ‘‘ডিম আগে না মুরগি? জানুন সঠিক উত্তর’’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘‘২০১০ সালে এক বৃটিশ বিজ্ঞানী এক সুপার কম্পিউটারকে নিযুক্ত করলেন এই চিন্তার জন্য। সুপার কম্পিউটার ও বিজ্ঞানীরা মিলিতভাবে মুরগির জরায়ুতে এক স্পেশাল প্রোটিন পেল ওভোক্লেডিডিন-১৭ নামে। দেখা যাচ্ছে এই প্রোটিন ক্যালসিয়ামকে ক্যালসাইটিন ক্রিস্টাল বানিয়ে ডিমের খোলস বানাচ্ছে।
কুসুমের বৃদ্ধি ও নতুন মুরগির জন্ম হতে এই খোসা ও ফ্লুইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী শেফিল্ড ও ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ডিমের গঠন প্রক্রিয়ার ওপর সুপার কম্পিউটার জুম করেন। পরীক্ষা প্রমাণ করেছে ডিমের গঠনের জন্য ওসি-১৭ প্রোটিনের প্রয়োজন আবশ্যক।
এই প্রোটিনের ক্যালসিয়াম কার্বোনেটকে ক্যালসাইট ক্রিস্টালে পরিণত করে যা ডিমের শক্ত খোসার গঠন তৈরি করে। অনেক প্রাণীর শরীরের হাড়ের মধ্যেও ক্যালসাইট ক্রিস্টাল পাওয়া যায়। কিন্তু মুরগির শরীর যে কোনও প্রাণীর থেকে এই ক্রিস্টাল বেশি তাড়াতাড়ি তৈরি করে।
প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬ গ্রাম করে ক্যালসাইট ক্রিস্টাল তৈরি হয় মুরগির শরীরে। শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিয়ারিং মেটিরিয়াল বিভাগের ড. কলিন ফ্রিম্যান জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই মনে করা হত ডিম মুরগির আগে এসেছে। কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে মুরগি ডিমের আগে এসেছে।
ভারত ভিত্তিক দেওবন্দ মাদ্রাসার এক মুফতি বলেছেন, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)। তাকে আল্লাহ পাক পিতা মাতা ছাড়া সৃষ্টি করছেন এবং যুবক বয়স দান করছেন। তার সন্তান হচ্ছি আমরা, এজন্যই আমাদের বলা হয় আদম সন্তান।
এখন সেই সূত্রে প্রমাণিত হয় মানুষের মত সকল জীবের জম্ম মানুষ সৃষ্টির মতই। আদমের (আ.) মাধ্যমে যেমন আমরা ঠিক তেমন মুরগি থেকেই ডিম এবং পরে মুরগির জম্ম। এরকম সব প্রাণী তার পূর্ররূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি ডিম নয়, মুরগি আগে।
ইরান ভিত্তিক একজন ধর্মীয় নেতা বলছেন, আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনের ৫১ নম্বর সূরা যারিয়াতের ৪৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আমি প্রত্যেক প্রাণী সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। এতে প্রমাণিত হয় আগে বীজ নয়, প্রাণীকে অর্থাৎ মুরগিকেই আগে পাঠানো হয়েছে।’’
দৈনিক যুগান্তর: ২৫ আগস্ট ২০১৮, লিঙ্ক: https://www.jugantor.com/useful/83496
No comments:
Post a Comment