মেয়েদের বিয়ের জন্য ১৮ বছর বয়সী নয়, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত করা উচিত!

মেয়ে বা ছেলের বিয়ের বয়স নিয়ে রাষ্ট্রের মাথাব্যথা কি সঙ্গত? একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে আমার মনে হয় এটাও একটা ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়। বিয়ের পর একটি দম্পতি বাচ্চা নেবে কি নেবে না বা কখন বাচ্চা নেবে, তা যেমন সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়, তেমনি একজন নাগরিক কখন বিয়ে করবে, ২০ বছর বয়সে, নাকি ৩৫ বছর বয়সে, নাকি ৬৮ বছর বয়সে, নাকি ৮০ বছর বয়সে, নাকি আদৌ বিয়ে করবে না তা নিয়ে মাথাঘামানোও রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। একজন নাগরিক ব্যবসা করবে নাকি চাকরি করবে; দেশে উপার্জন করবে, নাকি বিদেশ গিয়ে উপার্জন করবে, এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ যেমন অযৌক্তিক, তেমনি একজন নাগরিক তার বিয়ের প্রয়োজন হলে কখন বিয়ে করবে, সেক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের নাক গলানো অনভিপ্রেত। এটা অবশ্যই ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল। ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হলে রাষ্ট্রের যদি ক্ষতি হতো, তাহলে রাষ্ট্র এ নিয়ে আইন করতে পারতো।

কিন্তু সম্প্রতি দেশে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ নামে ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের বয়স রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিয়ের জন্য মেয়েদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর বেঁধে দিয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ করার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আইনানুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেয়া যাবে না। এমনকি কোনো মেয়েকে এ বয়সের আগে বিয়ে দিলে তা বাল্যবিবাহ বলে পরিগণিত হবে এবং এটা দন্ডনীয় অপরাধ বলেও সাব্যস্ত হবে! প্রশ্ন হচ্ছে, ১৮ বছর পূর্ণ হবার পরই কি মেয়েরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়? ১৮ বছরের আগে উপযুক্ত হয় না?
এটা সবাই জানে যে, একজন মেয়ে বা ছেলে বিয়ের প্রতি আগ্রহী হয় তার শরীরে যৌনশক্তি আসার পর। যৌনশক্তি আসার পর কোনো ছেলে বা মেয়ে আর বালক বা বালিকা থাকে না, হয়ে যায় যুবক-যুবতী। যুবক বা যুবতী হবার পরই তারা বিয়ের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হয়ে যায়। কোনো বয়সে পৌঁছার আর প্রয়োজন হয় না। আর এটাও আমরা সবাই জানি সব মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বয়সে যৌনশক্তির অধিকারী হয় না। একেক জন একের বয়সে এসে যৌনশক্তি লাভ করে। কেনো কোনো মেয়ে ১২ বছর বয়সেও যৌনশক্তি লাভ করে ফেলে আবার কেউ কেউ ১৩, ১৪ বা ১৫ বছর বয়সে এসে যৌনশক্তির অধিকারী হয়ে থাকে। ছেলেরা সাধারণতঃ ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে যৌনশক্তির অধিকারী হয়ে থকে।
দেশের একজন নাগরিকের পেটে ক্ষুধা লাগলে খাবে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মাথা ঘামানো যেমন বাড়াবাড়ি, একজন নাগরিকের বৈধ পথে যৌনক্ষুধা নিবারণের পথেও রাষ্ট্র বাধা দেয়ার কোনো মানে নেই।

মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর নির্ধারণের জন্য নারীরা কেন আন্দোলন করে, তার উদ্দেশ্য নারী নেত্রীরাও হয়তো ভালোভাবে জানে না। গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সংখ্যার দৈনিক যুগান্তরের শেষ পৃষ্ঠায় দেখলাম একটি প্রতিবেদন, ‘১৮ বছরের নিচে কন্যাশিশুদের বিয়ে হবে ‘সর্বনাশা আইন’।’
শিরোনাম দেখে ভাবলাম একটু পড়ে দেখি কিভাবে এটা ‘সর্বনাশা’ হবে! দেখলাম নারী নেত্রীরা বলছেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে আঠারোর নিচে কন্যাশিশুদের বিয়ে দেয়া মানে নারী ধর্ষণের পথকে সুগম করা। এ আইনের সুবিধা নেবে কাজী, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রভাবশালী ব্যক্তি, বাবা-মা ও ধর্ষক।’ প্রতিবেদনটির শেষদিকে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, ‘আইন শিথিল করে ১৮ বছরের নিচে কোনো কন্যাকে বিয়ে দেয়া হলে তা হবে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়।’
নারী নেত্রীদের প্রথম বক্তব্যটি হলো আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ রাখার বিরুদ্ধে। এমন সুযোগ রাখা হলে নাকি ধর্ষনের পথ সুগম হবে। প্রশ্ন হলো, এমন সুযোগ না রাখা হলে কি ধর্ষণ কমবে? দৈনিক প্রত্রিকায় প্রতিদিন ধর্ষনের যে সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়, নারী নেত্রীরা কি সেগুলো দেখতে পান না? তারা কী করেন সেগুলো বন্ধে? গত ১৯ ডিসেম্বর প্রত্রিকায় দেখলাম ঢাকা থেকে একটি মেয়েকে অপহরণ করে কক্সবাজার নিয়ে একমাস আটক রেখে ধর্ষণ করে মানুষরূপী কিছু পশু। একমাস পর আবার তাকে যেখান থেকে অপহরণ করা হয়েছে, সেখানে রেখে যাওয়া হয়। প্রতিদিনই ধর্ষনের এরকম অনেক সংবাদ দেখি পত্রিকায়। পাঁচ-ছয় বছরের আক্ষরিক অর্থের শিশুরাও প্রায়ই ধর্ষিত হয়। কিন্তু নারী নেত্রীদেরকে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যায় না। তাহলে ১৮ বছরের আগে বিয়ের সুযোগ রাখা হলে ধর্ষণ নিয়ে তাদের এতো আশংকা কেন?
এবার নারী নেত্রী আয়শা খানমের কথায় আসি। তিনি বলতে চান ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দিলে তা হবে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়। এর মানে কিন্তু এটাও যে, ১৮ বছর বয়সে বা এরপর বিয়ে হলে তাতে নারীর জীবনমান উন্নত হবে এবং নারী-ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে। এতে মনে হয় নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন ১৮ বছর বয়সের সাথে সম্পর্কিত। এ বয়সের আগে তাদের বিয়ে হয়ে গেলে তাদের জীবনে কোনো উন্নতি আসবে না। বিষয়টা আসলে এমন নয়। বরং নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজন নারী শিক্ষাকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর চাহিদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। এসব করা হলে নারীর বিয়ে ১৮ বছরের আগে হোক বা পরে, তার জীবনে উন্নতি আসবেই।
১৮ বছর বয়স হলেই মেয়েরা পরিণত হয় বা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয় এবং এর আগে তাদের বিয়ে দিলে তা বাল্যবিবাহ হয়ে যায়, এমন কথার আরেকটি মানে হচ্ছে, মেয়েরা ১৮ বছরের আগে যুবতীই হয় না, তারা বালিকা থেকে যায়! ‘ষোড়শী’ বলে যে একটি শব্দ আছে, সে শব্দের মানে তখন ‘ষোল বছরের যুবতী’ না হয়ে হবে ‘ষোল বছরের শিশুকন্যা’! বড়ই হাস্যকর।
জাপানে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর (‘ঐতিহ্য’ থেকে প্রকাশিত ‘জাপান কাহিনী’, পৃ-৫৯, লেখক: আশির আহমেদ)। আমাদের চেয়ে অনেক অনেক উন্নত দেশ জাপান যদি ষোল বছরের একটি মেয়েকে যুবতী বলে স্বীকৃতি দিতে পারে, আমরা পারবো না কেনো? আঠারো বছর পর্যন্ত একটি মেয়েকে বিয়ে থেকে বাধা দিয়ে রাখায় আমাদের কী লাভ! মেয়ের অভিভাবক যদি মেয়েটি প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পর তার জন্য উপযুক্ত পাত্র পায়, তাহলে তাকে বিয়ে দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের বাধার সম্মুখীন হওয়া কোনোভাবেই একটি সভ্য রাষ্ট্রে কাম্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রে যান, দেখবেন সেখানে প্রায় সব রাজ্যেই ১৮ বয়সের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে কোর্ট বা তাদের অভিভাবকের সম্মতিতে হতে পারে। কোনো কোনো রাজ্যে এ বিয়ে সর্বনিম্ন ১২ বছরে হয়ে থাকে। এমনকি একটি রাজ্যে বিয়ের কোনো সর্বনিম্ন বয়সসীমা নেই! (দৈনিক যুগান্তর, পৃ-২৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬)। নারী বা পুরুষের বিয়ের ক্ষেত্রে এটাই হওয়া উচিত কোনো দেশের স্বাভাবিক নিয়ম।

যৌন হয়রানী নিয়ে ইদানিং অনেক আলোচনা হচ্ছে। এর কারণ এবং এ থেকে পরিত্রাণের অনেক উপায়ও খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাবি না, প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরও মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে না পারা এই যৌন হয়রানির একটি প্রধান কারণ। অনেক অভিভাবক তার মেয়ে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরও মেয়েটির বয়স ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কারণে মেয়েটি পথে ঘাটে বখাটে কর্তৃক ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অনেক মেয়ে অপহরণ এবং ধর্ষণেরও শিকার হয়। রাষ্ট্র যদি একজন অভিভাবক থেকে ১৮ বছরের আগে তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার অধিকার কেড়ে না নিতো, তাহলে সমাজে ইভটিজিং, ধর্ষণ, অপহরণ, ধর্ষণের পর হত্যা, মেয়েদের আত্মহত্যার অনেক ঘটনা ঘটতো না।
পত্রিকার প্রায় প্রতিদিনই দেখি দেশের অনেক জায়গায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে (মানে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে, তা ১৭ হোক, ১৬ হোক বা আরো কম) ভন্ডুল করে দিয়ে কখনো বরকে, কখনো কাজীকে, কখনো কনের বাবাকে, কখনো বরের বাবাকে জেল দেয়া হয়েছে বা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। আমার মনে হয় না, কোনো অভিভাবক তার মেয়ে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার আগেই শিশুকালে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেয়। হয়তো তার বয়স অল্প; তেরো/চৌদ্দ বা পনেরো/ষোল বছর, তবে অবশ্যই প্রাপ্তবয়ষ্ক। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কী ক্ষতি? রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের কল্যাণ কামনা করে থাকে তাহলে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে যাতে তারা খুব অল্প বয়সে বা প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে তাদের মেয়েদের বিয়ে না দেয়।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটা রাষ্ট্রে নানা রকম সংকট সৃষ্টি করে। যেখানে সেই জনসংখ্যার আধিক্য রোধ করার জন্য এদেশে রাষ্ট্রীয় শক্ত কোনো আইন নেই, রাষ্ট্র কেবল ‘ছেলে হোক, মেয়ে হোক, দু’টি সন্তানই যথেষ্ট’ জাতীয় শ্লোগান প্রচার করেই ক্ষান্ত থাকে, সেখানে কম বয়সে বিয়ে দিলে রাষ্ট্রে কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্র এ ব্যাপারে শক্ত আইন করে বসে আছে!

নিবন্ধটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাতে পারেন এই পেইজে গিয়ে: https://www.facebook.com/nurahmad.bangladeshi/posts/168860311386362?__tn__=K-R

প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামো কেমন হওয়া উচিত?

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নকাঠামো প্রণয়ন করে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)’। এখানে শুধু প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একই কাঠামোয় পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। প্রথমে বর্তমান কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

বর্তমান কাঠামোয় প্রথমে একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয় পাঠ্যবই থেকে। অনুচ্ছেদটির উপর ভিত্তি করে ১নং থেকে ৪নং পর্যন্ত প্রশ্ন করা হয়। ১নং প্রশ্নে আসে বাম পাশের শব্দের সাথে ডান পাশের অর্থের মিল করা অথবা শূন্যস্থান পূরণ করা। ২নং প্রশ্নে আসে সত্য/মিথ্যা নির্ণয় করা। ৩নং প্রশ্নে আসে প্রশ্নের উত্তর লেখা এবং ৪নং প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত একটি রচনা আসে।

এরপর একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয় পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘আনসীন প্যাসেজ’। সেটির উপর ভিত্তি করে ৫নং থেকে ৮নং পর্যন্ত প্রশ্ন করা হয়। ৫নং প্রশ্নে আসে প্রদত্ত শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা। ৬নং প্রশ্নে আসে সত্য/মিথ্যা নির্ণয় করা। ৭নং প্রশ্নে আসে প্রশ্নের উত্তর লেখা এবং ৮নং প্রশ্নে আসে অনুচ্ছেদটির উপর ভিত্তি করে একটি পত্র লেখা।

পড়তে পারেন: প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করুন!

৯নং প্রশ্নে আসে প্রদত্ত বাক্য ব্যবহার করে ‘ডব্লিউ-এইচ কোশ্চেন’ তৈরি করা, ১০নং প্রশ্নে আসে Short Questions using informative instructions, ১১নং প্রশ্নে আসে দিন, মাস, সময় ইত্যাদি তথ্য ব্যবহার করে শূন্যস্থান পূরণ করা অথবা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া। ১২নং প্রশ্নে আসে প্রদত্ত শব্দগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে অর্থবোধক বাক্য তৈরি করা। ১৩নং প্রশ্নে আসে ফর্ম পূরণ করা।

১. বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়াতে সঙ্গত কারণেই আমাদের দেশের শিশুরা মায়ের কোল থেকে শিখতে শুরু করে বাংলা ভাষা। সমাজের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চর্চিত হওয়ার কারণে শিশুরা অল্প বয়সেই এবং সহজেই বাংলা ভাষা আয়ত্ব করে ফেলে। দেশের প্রায় সব প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) শিশুরা বাংলা মাধ্যমেই পড়াশুনা করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুরা মাত্র একটি ইংরেজি মাধ্যম বইয়ের বিপরীতে অন্তত পাঁচ-পাঁচটি বাংলা মাধ্যম বই চর্চা করে। তাই বাংলা পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হলেও শিশুরা উত্তর দিতে মোটামুটি সক্ষম হয়। কিন্তু ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা। মাতৃভাষা বাংলা হওয়ায় এবং শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে সবসময় বাংলা ভাষা চর্চা করায় শিশুরা ইংরেজি পাঠ্যবইগুলো বুঝতেই হিমশিম খায়। শিক্ষক যতই পড়ান না কেন, অনেক শিশু ইংরেজি পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারে না, ইংরেজি ভাষা আয়ত্ব করা দূরের কথা। ইংরেজি বইয়ের পড়াগুলো দেখে দেখে পড়তেও অনেকের ঘাম ছুটে যায়। এজন্য ইংরেজি পাঠ্যবই থেকে কোনো অনুচ্ছেদ পরীক্ষায় এলে সেই অনুচ্ছেদ-ভিত্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেও যেখানে ওরা বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়, সেখানে পাঠ্যবইবহির্ভূত অনুচ্ছেদ (আনসীন প্যাসেজ) দেয়া হলে অনেক শিশু প্রথমতঃ অনুচ্ছেদটিই বুঝতে পারে না, অনুচ্ছেদভিত্তিক প্রশ্নগুলো (৫নং থেকে ৮নং) বুঝা দূরের কথা! তাহলে কেন প্রাথমিক স্তরের শিশুদেরকে ইংরেজি পাঠ্যইয়ের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হয়? তা-ও আবার ৩১ মার্কসের প্রশ্ন!

২. একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদেরকে সেই বিষয়েই প্রশ্ন করতে পারেন, যে বিষয়টি তাদেরকে শিখিয়েছেন। যে বিষয় তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদেরকে শেখাননি, তাদেরকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধরুন, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজি পড়ান। ইংরেজি পরীক্ষায় তিনি যদি শিক্ষার্থীদেরকে জাপানী ভাষা থেকে প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীরা কি কিছু পারবে? কেন পারবে না? কারণ ঐ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদেরকে কখনো জাপানী ভাষা পড়াননি। এভাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব সময় পড়ানো হয় পাঠ্যবইয়ের ইংরেজি পড়াগুলো। সারাবছর শেখানো হয় পাঠ্যবই, পরীক্ষার সময় তাকে পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকেও প্রশ্ন করাটা কি সম্পূর্ণ অনুচিত নয়? পাঠ্যবইয়ের বাইরের যে অনুচ্ছেদটি পরীক্ষায় দেয়া হয়, যদি এমন শর্ত থাকতো, সেই অনুচ্ছেদের সবগুলো শব্দ এবং বাক্যের ফরম্যাট পাঠ্যবইয়ে থাকতে হবে, শুধু সেই রকম অনুচ্ছেদ দেয়া যেতো পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে। কিন্তু এভাবে কি দেয়া হয়? অনুচ্ছেদটির উপর ভিত্তি করে যে প্রশ্নগুলো (৫নং থেকে ৮নং) করা হয়, শুধু সেই প্রশ্নগুলোর অর্থ উদ্ধার করতেও অনেক শিশুর বেশ বেগ পেতে হয়, উত্তর দেয়া তো পরের বিষয়। কারণ সেসব প্রশ্নের মধ্যে এমন অনেক শব্দ থাকে, যেগুলোর অর্থ শিশুরা পাঠ্যবইয়ে শেখেনি। যে শব্দগুলোর অর্থ শিশুরা এখনো শেখার সুযোগ পায়নি, সে শব্দগুলো ব্যবহার করে তাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তারা কিভাবে প্রশ্ন বুঝবে? প্রশ্নই যদি না বুঝে, তাহলে উত্তর দেবে কিভাবে?

৩. পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নের ৭নং প্রশ্নে এমন অনেক প্রশ্নও করা হয়, যেগুলোর উত্তর অনুচ্ছেদটিতে সরাসরি নেই। এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়, যেন শিশুরা সেগুলো নিজ থেকে বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হয়। প্রাথমিক স্তরের একজন বাংলাভাষী শিশুকে ইংরেজিতে এমন প্রশ্ন করার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে, কেউ কি বলতে পারবেন?

উচ্চশিক্ষায় (স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়) পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন করা যেতে পারে। কারণ সে পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষার ওপর মোটামুটি একটা ধারণা লাভ করতে পারে। কিন্তু উপহাসের বিষয় হচ্ছে, আমাদের স্নাতকে বাংলায় (আবশ্যিক) এখনো পাঠ্যবইবহির্ভূত কোনো অনুচ্ছেদ দেয়া হয় না বা প্রশ্ন করা হয় না, অথচ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজিতে পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হয়!

৪. ৮নং প্রশ্নে আসে ব্যক্তিগত পত্রলিখন। পত্রলিখন কেন একসময় মানুষকে শেখানো হতো, এই প্রশ্নের উত্তর যাদের জানা নেই, তারাই এই স্মার্টফোন-ইন্টার্নেটের যুগেও, চিঠিপত্রের অচলাবস্থার এই যুগেও পত্রলিখনের অভ্যাস ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে যখন ই-মেইলের ব্যবহার শেখানো হয়, তখন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে শিখতে বাধ্য করা হয় পত্রলিখন! ‘প্রাথমিক শিক্ষা’র মানে বুঝতেও অনেকের কষ্ট হয় হয়তো।

৫. ‘ডব্লিও-এইচ কোশ্চেন’ আমরা ছাত্রজীবনে পড়ে এসেছি স্নাতকে। এখন তা নেমে এসেছে তৃতীয় শ্রেণিতে পর্যন্ত! কেন, তৃতীয় শ্রেণি থেকেই এই নিয়মটার চর্চা করতে হবে কেন? বীজগণিতের মতো ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে চর্চা করলে হয় না? প্রাথমিক স্তরে গ্রামারের আরো সহজ নিয়ম দেয়া যেতে পারে।

৬. একটা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে অনুবাদ চর্চা করা কতটা প্রয়োজন, তা যে কোনো বিজ্ঞ লোক বলতে পারবেন। কিন্তু নিদারুণ পরিতাপের বিষয়, প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কোনো অনুবাদ চর্চার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ‘বাংলা থেকে ইংরেজি’ এবং ‘ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ’, এই দু’টি কমন আইটেম যেখানে ইংরেজি প্রশ্নকাঠামোয় থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত, সেখানে এগুলোর একটিও নেই! অথচ আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের বাংলা (আবশ্যিক) প্রশ্নকাঠামোয় ‘ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ’ করা বাধ্যতামূলক!

৭. শব্দার্থ লেখা এবং বাক্যরচনাও ইংরেজি ভাষাচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামোয় এই দু’টিরও কোনোটি স্থান পায়নি। প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি পাঠ্যবই কি ভাষাচর্চার অংশ হিসেবে পড়ানো হয়, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, বুঝতে কষ্ট হয়।

৮. ডায়ালগ বা সংলাপ চর্চাও নিঃসন্দেহে ভাষা চর্চার আবশ্যকীয় অংশ। কিন্তু প্রাথমিকের বর্তমান ইংরেজি প্রশ্নকাঠামোয় সংলাপের উপর কোনো প্রশ্নই নেই! পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইতে অনেকগুলো (২০টির মতো) সংলাপ রয়েছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির বইতেও অনেকগুলো রয়েছে। অথচ পরীক্ষায় কোনো সংলাপ না আসায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সেগুলো ভালোভাবে চর্চা না করলেও কোনো অসুবিধা হয় না। পরীক্ষায় না এলে শিক্ষার্থীরা কেন সেগুলো ভালোভাবে চর্চা করতে যাবে!

৯. পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন নিয়ে আরো কিছু কথা না বললেই নয়। সরকার নোট ও গাইডবই নিষিদ্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হতে পারছে না। কেন এক্ষেত্রে সফল হতে পারছে না, তার কারণ অনুসন্ধান করলে পরীক্ষায় পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন করাটাকেও একটা মস্ত বড় কারণ বলে মনে হবে। শুধু পাঠ্যবই চর্চা করলেই যে পাঠ্যবইবহির্ভূত অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করা যাবে না এবং পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া কষ্টকর হবে, যারা প্রশ্নকাঠামোয় পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করেছেন, বিষয়টা তারাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন। গাইড ও নোটবইয়ের চাহিদা সৃষ্টি করেছে পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন, এই কথায় দ্বিমত পোষণ করবেন, এমন সচেতন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। গাইড ও নোটবই নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে অবশ্যই পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন বাদ দিতে হবে সকল শ্রেণির প্রশ্নকাঠামো থেকে।

১০. প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য যে প্রশ্নকাঠামো প্রণয়ন করা হয়, সে কাঠামোই তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় অনুসৃত হয়) এখন শতভাগ সৃজনশীল বা যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ইত্যাদি দক্ষতার উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন) করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সৃজনশীল বা যোগ্যতাভিত্তিত প্রশ্নের সাথে পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নের সম্পর্ক কী? সঠিক উত্তর হচ্ছে, কোনো সম্পর্ক নেই। যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন আর পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন কখনোই এক নয়। যদি এক হতো, তাহলে পাঠ্যবই থেকে এখন আর কোনো প্রশ্নই করা হতো না, সব প্রশ্ন পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে করা হতো। যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের জন্য পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন আবশ্যক নয়। বরং এটা শিক্ষার্থীদের উপর অবিচার। পাঠ্যবই থেকেই শতভাগ যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন করা উচিত। যেভাবে গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে (বাংলা এবং ইংরেজি ব্যতীত) প্রশ্ন করা হয়, যেভাবে এখন ইংরেজিতে ৩১ শতাংশ পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন ব্যতীত অবশিষ্ট প্রশ্নগুলো পাঠ্যবই থেকেই করা হয়।

১১. পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন করা হলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে তা চর্চা করবে বা প্রস্তুতি নেবে, যারা প্রশ্নকাঠামোয় পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তারা এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন না। এরচেয়ে বরং পাঠ্যবইয়ে বেশি বেশি পাঠ অন্তর্ভুক্ত করে শতভাগ যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন পাঠ্যবই থেকে করা হলে, শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে আরো বেশি ইংরেজি শিখবে, আরো বেশি ইংরেজি চর্চার সুযোগ পাবে। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পর্যাপ্ত পাঠ আছে, চতুর্থ শ্রেণির বইয়েও যেগুলো আছে, চলে। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে আরো বেশি পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ আছে। এই কাজটা অবশ্য ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’-এর। ‘নেপ’-এর পক্ষ থেকে এনসিটিবি’কে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

১২. কিছুদিন আগে আমার হাতে এসেছে একটি ইংরেজি প্রশ্ন, যা প্রণয়ন করা হয়েছে কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে। ২০১৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষার আগে সকল পরীক্ষায় উপজেলা/থানাভিত্তিক প্রশ্ন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঐ প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হতো। এখন অবশ্য বিদ্যালয়-ভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। কোতোয়ালী থানার ঐ প্রশ্ন দেখে আমি রীতিমতো অবাক এবং মুগ্ধ হই। সেখানে একদিকে কোনো পাঠ্যবইবহির্ভূত অনুচ্ছেদই রাখা হয়নি, অন্যদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শব্দার্থ, বাক্য রচনা, সংলাপ, বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ, এমনকি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও! তবে নেপ-এর কাঠামো সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করতে না পেরে হয়তো পত্রলিখন বাদ দিতে পারেনি। তবু তাদের এই ভিন্ন পথে চলা আমাকে বিস্মিত করেছে। নেপ-এর নির্দিষ্ট কাঠামোর বাইরে গিয়ে তারা যে প্রশ্নকাঠামো অনুসরণ করেছে, যে কোনো বিজ্ঞ লোক সেটিকে একটি আদর্শ কাঠামো বলেই রায় দেবেন। কোতোয়ালী থানার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের যেসব শিক্ষার্থী ঐ প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে, সেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষিত অভিভাবকগণকে নেপ-এর কাঠামো অনুসরণে প্রণীত একটি প্রশ্ন এবং কোতোয়ালী থানার ঐ প্রশ্ন দিয়ে যদি তুলনা করতে বলা হয়, আমার বিশ্বাস, তারা কোতোয়ালী থানার কাঠামোকেই উত্তম বলে অভিমত দেবেন। আশা করি ‘নেপ’ বিষয়টা গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে এবং বর্তমান কাঠামো বাদ দিয়ে ইংরেজির জন্য প্রাথমিক স্তরের উপযোগি একটি নতুন আদর্শ কাঠামো প্রণয়ন করবে।

প্রশ্নপত্র:


নূর আহমদ : শিক্ষক ও গবেষক

ধূমপানের চেয়ে ই-সিগারেট বেশি ক্ষতিকর

ধূমপানকে সারাবিশ্বেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রচার করা হয়। ‘ধূমপান ক্যান্সারের কারণ’, ‘ধূমপানে স্ট্রোক হয়’, ‘ধূমপান মৃত্যু ঘটায়’-  এরকম আরো অনেক জঘণ্য কথা ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচার করা হয় বিশ্বব্যাপী। শেষে ধূমপানের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট আবিষ্কৃত হয়।  অনেক সচেতন মানুষ ধূমপান ছেড়ে ই-সিগারেটের দিকে ঝোঁকে।
কিন্তু দেখা যায় ধূমপানে মানুষের যা ক্ষতি হয়, ই-সিগারেটে ক্ষতি হয় তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। ধূমপান করে কোনো মানুষ মারা যাবার ঘটনা যখন এ পর্যন্ত কোথাও ঘটতে দেখা যায়নি, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ২৬ জন মানুষ মারা গেছে ই-সিগারেট ব্যবহার করায়।
দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত ‘ই-সিগারেটে বাড়ছে বিপদ’ শিরোনামে ১৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট দেখুন:

ই-সিগারেটে বাড়ছে বিপদ। বাংলাদেশে এটা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না হলেও ক্ষতিকর এই সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছেই। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ জন মারা গেছে ই-সিগারেট ব্যবহার করায়। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ অঙ্গরাজ্যে এক হাজার ৩০০-এর বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলেছে সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল (সিডিসি)। বাংলাদেশে মূলত চীনের তৈরি অত্যন্ত সস্তা দামের ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। আগে তো অভিজাত এলাকার নামী-দামি দোকানে পাওয়া যেত এবং ব্যবহারকারীও ছিল অভিজাত পাড়ার উঠতি বয়সের তরুণেরা। এখন সাধারণ সুপার মার্কেটের ফুটপাথেও পাওয়া যাচ্ছে ই-সিগারেট। আবার ব্যবহারকারীর সামাজিক অবস্থানেরও পরিবর্তন ঘটেছে। সাধারণ পরিবারের উঠতি বয়সের তরুণদের রাস্তায় যেতে যেতে ই-সিগারেট টানতে দেখা যাচ্ছে। আবার এর মধ্যে যোগ হয়েছে তরুণীরা। রিকশায় বসে অথবা বন্ধুর সাথে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে তরুণীদেরও ই-সিগারেট টানতে দেখা যাচ্ছে আজকাল।
ই-সিগারেট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ই-সিগারেট থেকে ফুসফুস জটিলতায় ভুগছে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ-তরুণীরা। ই-সিগারেট থেকে সৃষ্ট রোগটি নিয়ে আলোচনা ও এর চিকিৎসা দেয়ার সুবিধার্থে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল (সিডিসি) ই-সিগারেট-জনিত রোগটিকে বলেছে ‘ইভালি’। ইভালি ‘ই-সিগারেট অর ভ্যাপিং প্রোডাক্ট ইউজ-অ্যাসোসিয়েটেড লাং ইনজুরি’র সংক্ষিপ্ত রূপ।
গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার দ্বিগুণ ঝুঁকি রয়েছে। আমেরিকান হার্ট ফাউন্ডেশন জার্নালে ২০১৮-এর আগস্টে এ-বিষয়ক গবেষণায় হার্ট অ্যাটাকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বলেছে।
কিন্তু সিডিসি বলছে, ই-সিগারেটের কারণে ফুসফুসের রোগ বাড়ছে। তামাকজাত সিগারেট পানে অভ্যস্ত ধূমপায়ীদের চেয়ে যারা ই-সিগারেট পান করে তাদের হার্ট অ্যাটাকের তিন গুণ ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলোÑ যারা তামাকজাত সিগারেট ও ই-সিগারেট দুটোই পান করেন একই সাথে, অধূমপায়ীদের থেকে এদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পাঁচ গুণ। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকো ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেছেন, প্রায় ৬৬ শতাংশ ই-সিগারেটে অভ্যস্তরা একই সাথে তামাকজাত ধূমপানও করে থাকেন।
ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট তৈরি করা হয় নিকোটিনের স্ট্রে দিয়ে এবং এর সাথে অন্যান্য গন্ধযুক্ত তরল যুক্ত করে। ই-সিগারেট বাজারজাত করা হয়েছিল ধূমপানের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে। বস্তুত ই-সিগারেট মোটেই ক্ষতিহীন নয়। এই সিগারেট তামাকের চেয়ে একটু কম মাত্রায় কার্সিনোজেন (ক্যান্সার উৎপাদক) তৈরি করে। তবে ই-সিগারেট আল্ট্রা ফাইন কণা তৈরি করে, যা ফুসফুস ও দেহের বায়ু চলাচলের রাস্তার ক্ষতি করে। এ ছাড়া এটি কার্ডিওভাস্কুলার ও ক্যান্সারহীন ফুসফুসের রোগের সাথে যুক্ত টক্সিন তৈরি করে। গবেষণা প্রতিবেদনের শেষে গবেষকেরা অবশ্য বলেছেন, ই-সিগারেট প্রকৃতপক্ষে ধূমপানের কোনো স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়। সবচেয়ে ভালো হয় ধূমপায়ীরা যদি তামাক অথবা ই-সিগারেট কোনোটাই ব্যবহার না করেন।
তরুণরা মনে করে ই-সিগারেট তামাকের চেয়ে ক্ষতিকর নয় অথবা একেবারেই ক্ষতিকর নয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে ই-সিগারেটেও নিকোটিন থাকতে পারে। অনেক সময় এর মধ্যে নিকোটিনের পরিমাণ তামাকজনিত সিগারেটের চেয়ে বেশিও হয়ে থাকে।
বাষ্পজাত ধোঁয়া হয় বলে এটাকে ক্ষতিকর মনে করে না ই-সিগারেট ব্যবহারকারীরা। এটাকে কেবল পানি দিয়েই তৈরি করে না। এর মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে এবং রয়েছে খুব ক্ষতিকর ক্ষুদ্র কণা (পার্টিকল)। এই কণাগুলো অতিসূক্ষ্ম বলে এটা ফুসফুসে জ্বলা-পোড়ার মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে। ই-সিগারেট ফুসফুসের ডিএনএর ক্ষতি করে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ফর দ্য মলিক্যুলার সায়েন্সে প্রকাশিত গত ৭ অক্টোবরের গবেষণায় বলা হয়েছে, ই-সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে ৫৪ সপ্তাহে ৪০ ইঁদুরের মধ্যে ২২.৫ শতাংশের ফুসফুস ক্যান্সার হয়েছে।

নয়াদিগন্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লিঙ্ক: 
http://www.dailynayadiganta.com/miscellaneous/448869

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে সম্প্রতি নির্মমভাবে হত্যা করে ছাত্রলীগের পদবিধারী কিছু সদস্য। আবরারকে খুন করার পর সারাদেশের মানুষ বেদনায় মর্মাহত হয়। মর্মাহত হবার কিছু কারণ হচ্ছে- ১. আবরার কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী ছিল না, বরং বেশ মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিল, যে শুধু বুয়েটেই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেডিকেল কলেজেও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল; ২. আবরারকে বলতে গেলে বিনা অপরাধেই হত্যা করা হয়েছে; ৩. আবরার কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়নি, কোনো পেশাদার খুনি বা ছিনতাইকারীর হাতেও নিহত হয়নি, বরং নিহত হয়েছে বুয়েটেরই বেশ কয়েকজন ছাত্রের হাতে এবং ৪. আবরারকে হত্যা করা হয়েছে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় ধরে নৃশংসভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বুয়েটের যে ছাত্ররা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তারা কোনো সাধারণ ছাত্র নয়, তারা ছিল একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের সদস্য। সাধারণ ছাত্র হলে আবরার হত্যার কারণে মানুষ হয়তো এতো কষ্ট পেতো না। তাই আবরার হত্যার পর ছ্ত্রারাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয় সর্বত্র। অবশ্য শুধু আবরার হত্যার পর থেকেই নয়, যখন থেকে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের দ্বারা খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নানান ঘটনা ঘটতে শুরু করলো, তখন থেকেই দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ঐসব মানুষ, যাদের সাথে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সরাসরি সম্পর্ক নেই, তারা ছ্ত্রারাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্নভাবে। অপরদিকে ছ্ত্রারাজনীতি নিষিদ্ধ না করা বা বহাল রাখার পক্ষে সব সময় একটা বিশেষ শ্রেণিকে সরব থাকতে দেখা যায়। এরা কারা? এরা হচ্ছে তারা, যারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি বড় দলের একজন উর্ধ্বতন নেতাকে ‘‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা আত্মহত্যার সামিল’’ এমন কথা বলতে শোনা যায়। [কালের কণ্ঠ অনলাইন ১৫ অক্টোবর, ২০১৯]
‘‘আবরার হত্যা: বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি কি বন্ধ হওয়া উচিত?’’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘বুয়েটের ইলেক্ট্রনিক এন্ড ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী যিনি নিজেকে রাহাত নামে পরিচয় দিতে চান, তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত।
‘‘আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলছে তা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। এসব অত্যাচারগুলা বন্ধ হতে হলে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত’’ বলেন রাহাত।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন দাবি মানতে চাইছেন না ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা। তারা বলছেন, ছাত্র রাজনীতি নয় বরং ছাত্র রাজনীতির নামে যে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের রাজনীতি শুরু হয়েছে তা বন্ধ হওয়া উচিত।’
এভাবে দেখা যায় যারাই ছাত্ররাজনীতি বহাল রাখার কথা বলছেন, তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তারা মুখে অন্য উদ্দেশ্যের কথা বললেও তাদের মনে লুকিয়ে থাকে যে উদ্দেশ্য, তা হলো, ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের দলের আধিপত্য বিস্তার করা বা ধরে রাখা।
শুধু এই বিষয়টা সবার সামনে পরিষ্কার হলে সবাই সহজেই বুঝতে পারবে, ছাত্ররাজনীতি বহাল রাখার কথা যারা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য দেশের কল্যাণ সাধন নয়, বরং শুধু নিজ দলের কল্যাণ সাধন করা।
ছ্ত্রারাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক, যারা চান না, তারা বলে থাকেন, ভাষা আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ অনেক আন্দোলনে ইতিপূর্বে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাই ছ্ত্রারাজনীতি নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না।
যারা এমন কথা বলছেন, তারা সচেতনভাবে অথবা অসচেতনভাবে একটা কথা ভুলে থাকেন, ছ্ত্রারাজনীতি এবং ছাত্রআন্দোলন এক নয়। ছ্ত্রারাজনীতির অবদান হিসেবে যেসব উদাহরণ তারা দিচ্ছেন, সবই মূলতঃ ছাত্রআন্দোলনেরই ফসল, ছ্ত্রারাজনীতির নয়। এ প্রসঙ্গে অতীতের যেসব ইস্যুর কথা তারা সচরাচর উল্লেখ করে থাকেন, দেখা যায় সেখানে ‘ছাত্র’দের ভূমিকার কথাই তারা বলছেন, তাদের মুখ দিয়ে ভুলেও ‘ছ্ত্রারাজনীতি’ কথাটি আসে না!
তাই ছাত্ররাজনীতি দেশের কোনো উপকারে কখনো এসেছে, বলা ঠিক হবে না, বরং ছাত্রআন্দোলনই বিভিন্ন ইস্যুতে জাতির উপকারে এসেছে, এখনো ছাত্রআন্দোলনই দেশ এবং জাতির স্বার্থে কাজ করছে, ছাত্ররাজনীতি নয়। বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত যে প্রতিবেদনের কথা একটু আগে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে আরো বলা হয়, ‘‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় ছাত্র রাজনীতির অনেক অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যতগুলো বড় আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোটা বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ২০০৬ সালে শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান বিরোধী আন্দোলন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন।
এসব আন্দোলনের কোনটাই রাজনৈতিক দলের সহযোগি ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগে হয়নি।
বরং অনেক আন্দোলন যেমন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ রয়েছে।’’
দেশের সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই চায় না ছাত্ররাজনীতি বহাল থাক। কারণ ছাত্ররাজনীতি যদি কোনো উপকারে আসে বলে স্বীকার করে নেয়া হয়, তবু যেসব ক্ষতি করে, তা উপকারের চেয়ে হাজার গুণে বেশি। ছাত্ররাজনীতির কারণে যেসব ক্ষতি হয়, তন্মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে মানুষ খুন। শুধু একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করাই বিষয়টার ভয়াবহতা উপলব্ধির জন্য হয়তো যথেষ্ট হতে পারে। ১৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘‘শিক্ষাঙ্গন না রণাঙ্গন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭ বছরে ৪২ খুন’’ শিরোনামে। শুধু একটি প্রতিষ্ঠানেই যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৪২ জন মানুষ খুন হতে পারে ছাত্ররাজনীতির কারণে, তাহলে পুরো দেশে এ পর্যন্ত কত শত মানুষ খুন হয়েছে, তা ভাবলেই আঁতকে উঠবে যে কোনো বিবেকবান মানুষ।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও ছাত্র আন্দোলনে তো কোনো বাধা নেই। কারণ ছাত্র আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কিত নয়। দেশে ছাত্ররাজনীতি বর্তমান থাকার পরও যখন কোটা বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান বিরোধী আন্দোলন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন হতে পারলো, তখন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার প্রশ্নে এবং যে কোনো জাতীয় সংকটে ছাত্ররা আন্দোলন করতে পারবে। ছাত্র আন্দোলনের এখনও কোনো নেতিবাচক দিক দেখা যায়নি, কিন্তু ছাত্ররাজনীতি অন্য কোনো ক্ষতি না করলেও এ পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, যাদের মধ্যে ছিল শিক্ষক এবং মেধাবী অনেক শিক্ষার্থী।
অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি বক্তব্য উল্লেখ করার মাধ্যমে ইতি টানছি এ নিবন্ধের। বক্তব্যটি ১২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ‘‘একটি হত্যাকান্ড, অনেক প্রশ্ন’’ শিরোনামের একটি কলামের অন্তর্ভুক্ত।
‘‘ফাহাদ হত্যাকান্ড এ যুক্তিকেই জোরালো করল যে, লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কোনো ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারে; কিন্তু তা হতে হবে শুধু ছাত্রদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কিত। ছাত্ররা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাবে না। জাতীয় রাজনীতির বিষয়টি ছেড়ে দিতে হবে জাতীয় নেতাদের কাছে। কোনো দল কোনো ক্যাম্পাসে তাদের ছাত্রসংগঠনকে স্বীকৃতি দেবে না। জাতীয় দলগুলোর সমর্থক থাকতেই পারে; কিন্তু ক্যাম্পাসে তা প্রকাশ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে তা সংসদে পাস করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এমন একটি আইন প্রণয়ন করা জরুরি, যেখানে দলীয় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে।’’
নূর আহমদ : শিক্ষকnurahmad786@gmail.com

ছেলেধরা আতঙ্ক : বাস্তব, নাকি গুজব?

গত কয়েকদির ধরে সমাজ ছেয়ে গেছে ‘‘ছেলেধরা’’ আতঙ্কে। বিষয়টা আমার নলেজে এসেছে গতকাল (৮ জুলাই)। চতুর্থ শ্রেণির নিপা নামক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফোন করে কুশল বিনিময়ের পর বললেন, ‘স্যার, সবাই বলে, ছেলেধরা (পোলাচোর) নাকি বের হয়েছে?’’ আমি বললাম, ‘‘পোলাচোর’’ বের হলে আপনার তো মাথাব্যথা নেই, কারণ আপনার হচ্ছে মেয়ে!’ তিনি আমার কথায় না হেসে পারলেন না। আমি বললাম, ‘আপনি কোত্থেকে জানলেন পোলাচোর বের হবার কথা?’ তিনি বললেন, ‘লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে নাকি গতকাল একজন পোলাচোর ধরা খেয়েছে।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো ঘটনা কতটুকু সত্য।’ পরে অনলাইনে খোঁজ করে দেখলাম, লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে মানুষ পোলাচোর সন্দেহ করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে- এমন একটা সংবাদ দৈনিক মানবজমিনের অনলাইনে পাওয়া গেছে। আমি বুঝতে পারলাম, এই তিলকেই মানুষ তাল বানিয়ে যে যেভাবে পারছে একজন আরেক জনের নিকট প্রচার করছে।

বাংলাদেশ গুজবের দেশ। আমি শৈশব থেকে এ পর্যন্ত অনেকবার এমন ‘‘ছেলেধরা বের হওয়া’’র কথা শুনেছি। ছোট ছিলাম বলে আগে বিশ্বাস করতাম, ভয়ে ভয়ে থাকতাম। কিন্তু বড় হবার পর যখন দেখেছি, আমাদের সমাজে কয়েক বছর পরপরই এরকম গুজব ছড়ায়,পাশাপাশি আমরা গুজবে বিশ্বাসী একটা বিশেষ জাতি, তখন থেকে এমন গুজবগুলো আমাকে ভয় লাগাতে পারে না।

মোবাইল ফোন বিস্ফোরিত হয়ে মারা যাওয়া, বাঁশের পানি খাওয়া, পিতলের ১ টাকার কয়েন চড়া দামে বিক্রি হওয়া, রাক্ষস বের হয়ে মানুষকে জীবিত খেয়ে ফেলা, মাছ মাংস রাখা ফ্রিজ পুলিশ ভাংচুর করা- এমন নিত্যনতুন গুজব আমাদের সমাজে কয়েক বছর পরপরই ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষকে আতঙ্কিত করেছে।
তবে ছেলেধরা বের হওয়ার গুজবটি একেবারে ভিন্ন। কারণ অন্য গুজবগুলো শুধু একবার ছড়িয়েছে, শুধু এ গুজবটি বার বার ছড়াচ্ছে।
আজ পঞ্চম শ্রেণিতে ক্লাস চলাকালীন সময় শাহেদুল নামক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফোন করে বললেন, ‘স্যার, শাহেদুল কি স্কুলে গেছে?’ আমি বললাম, ‘এসেছে। কিন্তু কেন এ প্রশ্ন করলেন?’ তিনি বললেন, ‘সবাই বলছে, ‘‘কল্লাকাটা’’ নাকি বের হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘‘আপনাদের বাড়ির কারো কল্লা (মাথা) কেটে নিয়েছে নাকি?’ তিনি বললেন, ‘‘পোদ্দার বাজার বোর্ড অফিসে নাকি কল্লাকাটা একজনকে ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘আমি আসল খবর জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।’ তাঁর ফোন কেটে আমি পোদ্দারবাজার ‘বাজার কমিটি’র সেক্রেটারী হারুন ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বোর্ড অফিসে নাকি একজন কল্লাকাটা চোরকে ধরে ধোলাই দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘কই, নাতো! এসবই গুজব।’ আমি এরপর বোর্ঢ অফিসের নিকটস্থ ‘মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার্স’ দোকানের সাইফুল ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বোর্ড অফিসে নাকি কল্লাকাটা একজনকে ধরে আটকে রাখা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘কে বলেছে আপনাকে?’ আমি বললাম, ‘আমাদের স্কুলের একজন অভিভাবক বলেছে।’ তিনি বললেন, ‘সব ভুয়া খবর!’
আমি পরে গুগলে ‘‘ছেলেধরা গুজব’’ লিখে সার্চ করে দেখলাম, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এরকম অসংখ্য সংবাদের লিঙ্ক চলে এলো। অধিকাংশই এরকম- ‘‘ছেলেধরা গুজবে গণধোলাই’’।
কিছুক্ষণ আগে আমাদের চতুর্থ শ্রেণির রায়হান নামক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খবর নিয়ে এলেন, সুবহানপুর বাজারে (চাটখিল, সদর, নোয়াখালী) নাকি একজন ‘পোলাচোর’কে ধরে গনধোলাই দেয়া হয়েছে। আমি ঐ বাজারের নিকটস্থ আমাদের এক আত্মীয়কে ফোন করে জানলাম, একজন অপরিচিত লোক নাকি ঘোরাঘুরি করছিল। মানুষ তাকে ছেলেধরা ভেবে ধরে গনধোলাই দিয়েছে। শেষে স্থানীয় চেয়ারম্যান নাকি তাকে ৩০০ টাকা দিয়ে বিদায় করেছে!

প্রকৃতপক্ষে ছেলেধরার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। এই ঘটনাগুলো হচ্ছে পুরো ‘‘কান নিয়েছি চিলে’’র মতো বিষয়। এক লোকের মাথার উপর দিয়ে একটা চিল উড়ে গেল। একটু দূর থেকে অন্য একজন লোক ঐ লোককে বললো, ‘তোমার কান তো চিলে নিয়ে গেছে।’ লোকটির কথা শুনে ঐ লোক চিলের পিছে পিছে দৌড়তে শুরু করলো চিলের কাছ থেকে তার কান উদ্ধারের জন্য। পাশাপাশি এই বলে চিৎকার করতে লাগলো, ‘চিল আমার কান নিয়ে গেছে। কে কোথায় আছেন, বেরিয়ে আসুন। চিল থেকে আমার কান নিয়ে দিন!’
মানুষ তার চিৎকার শুনে তার সাথে চিলের পিছে পিছে দৌড়তে শুরু করলো। একসময় একজন লোক ঐ লোকটিকে বললো, ‘তুমি যে বলছো, চিল তোমার কান নিয়ে গেছে, তুমি কি তোমার কান ধরে দেখেছো, তোমার কান সত্যিই চিল নিয়ে গেছে কিনা!’ লোকটি বললো, ‘নাতো!’ এই বলে সে তার কানে হাত দিয়ে দেখলো, তার কান জায়গামতোই আছে, চিল নেয়নি। সে এতোক্ষণ অহেতুক চিলের পিছে দৌড়েছে।
আমরা যারা এখন ছেলেধরা বের হয়েছে বলে, শুনে ও ভেবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি, তাদের নিকট অনুরোধ, যার কাছ থেকে এমন সংবাদ শুনবেন, তাকে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করুন, ‘আপনার কোনো সন্তানকে কি ছেলেধরা নিয়ে গেছে?’ দেখবেন, কেউ আপনার প্রশ্নটির উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলবে না। শুধু বলবে, ‘অমুক বলেছে’, ‘ঐখানে ঘটেছে’ এমন সব কথা। যদি আপনার নিকটস্থ কারো বা আপনার সন্তানকে ছেলেধরা নিয়ে যায়, শুধু তখনিই ছেলেধরা বের হবার কথা বিশ্বাস করতে পারেন, না হয় মনে রাখবেন, এটা অপপ্রচার, একধরনের আতঙ্ক এবং সর্বোপরি গুজব।
নূর আহমদ, লক্ষ্মীপুর।

https://web.facebook.com/nurahmad.teacher

রিফাত হত্যা : দায় কার?

প্রকাশ্যে দিবালোকে বরগুনায় রিফাতকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় পুরো জাতি স্তব্ধ। এর আগে গত কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছিল এরকম দিবালোকে আরেকটি খুনের ঘটনা নিয়ে। সবাই জানে তা হচ্ছে সোনাগাজীর নুসরাত হত্যার ঘটনা। এই দু’টি ঘটনাই শুধু নয়, এদেশে কিছুদিন পর পর এরকম নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কেন এমন হচ্ছে? অনেকে অনেক উত্তর দেবেন। অল্প কয়েকটি উত্তর নিয়ে এখানে আলোচনা করা হবে।
রিফাতকে সবার সামনে হত্যার সময় আশেপাশের অনেক মানুষ সেলফোনে ভিডিও করছিল। এই লোকগুলো ভিডিও না করে রিফাতকে রক্ষার চেষ্টা করেনি কেন, এই প্রশ্ন এখন দেশের অধিকাংশ মানুষের। মানুষ বলছে, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে আমরা বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করার পরিবর্তে তার ভিডিও ধারণ করার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিই, এই জন্যই চোখের সামনেই মানুষ খুন হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছে না। রিফাত হত্যার পর উচ্চ আদালতও এই সুরেই কথা বলল। ‘আদালত বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ঘটনা ঘটল, ভিডিও হল, দাঁড়িয়ে থাকল, কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি- এটাই সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র। এটা সমাজের ব্যর্থতার চিত্র। সারা দেশের মানুষ এ হত্যাকান্ডে মর্মাহত। দিনের আলোতে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য।’ [দৈনিক যুগান্তর, ২৮ জুন ২০১৯]
নিষ্ক্রীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের দোষ দেয়ার পেছনে যুক্তি কী? মুঠোফোনের ভিডিওতে দেখা যায়, রিফাতকে লম্বা দা দিয়ে উপর্যুপরি কোপাচ্ছিলেন দু’জন। যারা প্রত্যক্ষদর্শীদের দোষ দিচ্ছেন, তাদের নিকট প্রশ্ন, নিজেকে নিয়ে ভাবুন, এরকম ভয়ানক পরিস্থিতিতে আপনি কি নিজের জীবন বিপন্ন করে রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে যেতেন? লম্বা দা হাতে থাকা কাউকে আক্রমণরত ঘাতকদেরকে খালি হাতে মোকাবিলা করতে যাওয়া কার পক্ষে সম্ভব? অ্যাকশনধর্মী কোনো চলচ্চিত্রের নায়কও বাস্তবে এরকম কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে ‘চাচা আপন জান বাঁচা’ বলে নিজের জান নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে! শুধু সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষেই এরকম ঘটনার মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু কাউকেই তো সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়না! পুলিশের কন্ট্রোল নম্বর ৯৯৯ তো এখন প্রায় সবার জানা। তবু পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যেতে পারলো কী করে?
ঢাকা শহরে প্রায়ই ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটে। ‘ছিনতাইকারীকে গণধোলাই’ কথাটি লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখুন। এরকম অসংখ্য ঘটনা সম্বলিত সংবাদের লিঙ্ক পেয়ে যাবেন। এসব ছিনতাইকারীকে কারা গণধোলাই দিচ্ছে? কাউকে ছিনতাই করার সময় সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীরাই। ধর্ষণকারীকে, চোর-ডাকাতকে এরকম গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দের ঘটনা প্রায়ই এদেশে ঘটে। কিন্তু রিফাতকে আক্রমণের সময় আক্রমণকারীদেরকে প্রতিহত করে গণধোলাই দেয়া হয়নি কেন? আমার মতে অনেক কারণে। ১. রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারী, চোর, ডাকাত এরা হয় অপরিচিত। তাই এদেরকে গণধোলাই দিলে পরে আবার এদের পুণরাক্রমণের ভয় মনে কাজ করে না। কিন্তু রিফাতকে যারা আক্রমণ করেছে, তারা ছিল এলাকার প্রভাবশালী দাগী অপরাধী। এমনকি ইতিপূর্বে বিভিন্ন অপরাধে বারবার জেলে গিয়েও প্রত্যেকবার জামিন পেয়ে বেরিয়ে যাবার কারণে এরা হয়ে গেছে বেপরোয়া। এদের গায়ে আঁচড় লাগানোর সাহস তাই কারো হয়নি, প্রতিহত করা দূরের কথা। ২. এদের হাতে ছিল মারণাস্ত্র। নিজের জীবনকে বিপন্ন করে তাই কেউ এদেরকে প্রতিহত করার সাহস পায়নি। সুতরাং প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে দায়ী করার সুযোগ নেই। বরং আমার মনে হয়, প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাটি ভিডিও করে সর্বোচ্চ সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তারা এলাকার এসব ক্ষমতাধর বেপরোয়া অপরাধীদের অপরাধের ভিডিও করে তা আবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করাটাই তাদের বড় ধরনের সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। রিফাত হত্যার ভিডিও সামনে থাকার কারণেই প্রকৃত অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করা আইন-শৃ্খংলা বাহিনীর জন্যে এখন সহজ হচ্ছে।
রিফাত হত্যার দায় তাহলে কার? প্রথমতঃ সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজীসহ যারা রিফাতকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তাদের। পাশাপাশি নয়ন বন্ডসহ রিফাতের হত্যাকারীদেরকে যারা ইতিপূর্বে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং বিভিন্ন অপরাধে তাদেরকে বার বার জেলে নেয়ার পরও জেল থেকে বের হতে সাহায্য করেছে, তাদের। কারা তাদেরকে জেল থেকে বের হতে সাহায্য করেছে? ২৯ জুনের প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাব্বিরের বিষয়ে পুলিশ কখনোই কঠোর ছিল না। কারণ, এলাকার প্রভাবশালী মহল তাঁর প্রশ্রয়দাতা।’ [পৃষ্ঠা-২] একই তারিখের প্রথম আলোয় আরেকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘পুরোনো অপরাধী সাব্বির, রিফাতদের বিরুদ্ধে এখন নানা অভিযোগ উঠছে। তাহলে এত দিন পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার বলেন, সাব্বিরের বিরুদ্ধে দুটি মাদক, একটি অস্ত্রসহ আটটি মামলা রয়েছে। আটটি মামলাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। সব কটি মামলাতেই পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। আর রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল। তিনটিতেই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন। এ মামলাগুলোর তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।’ [পৃষ্ঠা-২]
এই প্রতিবেদনগুলোতে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা এটা সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট, সাব্বির, রিফাত ফরাজী এদের বেপরোয়া হবার পেছনে পুলিশ এবং আদালতেরও দায় রয়েছে। আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতিও যে নতুন নতুন হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পেছনে ভূমিকা রাখে, তা আবার প্রমাণিত হলো।
বাংলা ট্রিবিউনে জুন ২৭, ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ‘রিফাত খুনের ঘটনায় মন্ত্রীরা যা বললেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন ‘বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় কি বলা যায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে? বরগুনা বলেন, রূপগঞ্জ বলেন, কোনও ঘটনাই রাজনৈতিক নয়, রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি ঘটেনি। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে। এমন কোনও দেশ পাবেন না যেখানে সামাজিক অস্থিরতা নেই। তবে পুলিশ ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে।’
সেতুমন্ত্রী একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করলেন। কিন্তু একই রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেশে যদি কয়েকদিন পরপরই ঘটে, তা কি আর বিচ্ছিন্ন থাকে? তা তো সচরাচর হয়ে যায়, তাই না? তিনি আরও বললেন, এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে। না, এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে না, বরং আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ দেশ এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল ও অনুন্নত কিছু দেশেই বেশি ঘটে। ইউরোপের দেশগুলোর খোঁজ নিন, দেখবেন বাংলাদেশে এক বছরে যত জন মানুষ খুন হয়, ইউরোপের ১০টি দেশে ১০ বছরেও তত জন মানুষ খুন হয় না। সেতুমন্ত্রী আরও বললেন, ‘বরগুনা বলেন, রূপগঞ্জ বলেন, কোনও ঘটনাই রাজনৈতিক নয়।’ আমি তাঁর এই কথার সাথে কিছুটা একমত। তাঁর কথাটি এই অর্থে সঠিক যে, এই হত্যাকান্ড রাজনৈতিক কোনো কারণে হয়নি। কিন্তু তাঁর কথাটির সাথে আমার কিছুটা ভিন্নমতও আছে। কারণ তিনি যতোই বলেন, এই রকম ঘটনাগুলো রাজনৈতিক নয়, কিন্তু যখন দেখা যায়, এই হত্যাকান্ডগুলো যারা ঘটায়, তারা রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণেই হত্যাকান্ডগুলো ঘটানোর সাহস পায়। যদি এই সব হত্যাকান্ডের হোতারা একটা অপরাধের পর জেলে গিয়ে রাজনৈতিক কোনো প্রশ্রয় না পাবার কারণে বেরিয়ে আসার সুযোগ না পেতো, তাহলে দ্বিতীয় বারের মতো কোনো অপরাধ সংঘটনের সুযোগ পেতো না।
সেতুমন্ত্রী এই কথাগুলো বলে মূলত দায় এড়ানোরই চেষ্টা করেছেন। দায়িত্বশীল লোকদের এই দায় এড়ানোর মানসিকতাও দেশে এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের পুণরাবৃত্তির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
জানি না, কখন দেশের দায়িত্বশীল লোকরা দায়িত্বসচেতন হবেন, কখন আর রাজনীতিবিদরা কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ কখন পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারবে!
নূর আহমদ : শিক্ষকnurahmad786@gmail.com

দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত আমার কয়েকটি লেখা

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি লেখার লিঙ্ক:


দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ১২ জুন ২০১৮)

(প্রকাশকাল: ০৪ জুন ২০১৮)

(প্রকাশকাল: ১০ জুলাই ২০১৮)

(প্রকাশকাল : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯)


(প্রকাশকাল: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯)

৭. মানুষ কখন বংশগতভাবে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়? (প্রকাশকাল: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২)

দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ২৫ এপ্রিল ২০১৫)

(প্রকাশকাল: ০৪ এপ্রিল ২০১৫)

(প্রকাশকাল: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ইং )

দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

(প্রকাশকাল: ১২ জানুয়ারি ২০১৭)

(প্রকাশকাল: ২৭ জানুয়ারি ২০১৬)

দৈনিক ইত্তেফাকের লিঙ্ক: পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা আর নয়

দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ০৩ এপ্রিল ২০১৯)

(প্রকাশকাল: ১৫ জুলাই ২০১৫)


(প্রকাশকাল: ২৫ অক্টোবর ২০১৬)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

(প্রকাশকাল: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

(প্রকাশকাল: ০৫ অক্টোবর ২০১৬)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

(প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭)

কিন্তু যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে এখন আর লেখাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রথম আলো’য় প্রকাশিত লেখা:

(প্রকাশকাল: ১২ নভেম্বর ২০১৪)

জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ: জাতীয় বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করার উপায়