মেয়েদের বিয়ের জন্য ১৮ বছর বয়সী নয়, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত করা উচিত!

মেয়ে বা ছেলের বিয়ের বয়স নিয়ে রাষ্ট্রের মাথাব্যথা কি সঙ্গত? একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে আমার মনে হয় এটাও একটা ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়। বিয়ের পর একটি দম্পতি বাচ্চা নেবে কি নেবে না বা কখন বাচ্চা নেবে, তা যেমন সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়, তেমনি একজন নাগরিক কখন বিয়ে করবে, ২০ বছর বয়সে, নাকি ৩৫ বছর বয়সে, নাকি ৬৮ বছর বয়সে, নাকি ৮০ বছর বয়সে, নাকি আদৌ বিয়ে করবে না তা নিয়ে মাথাঘামানোও রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। একজন নাগরিক ব্যবসা করবে নাকি চাকরি করবে; দেশে উপার্জন করবে, নাকি বিদেশ গিয়ে উপার্জন করবে, এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ যেমন অযৌক্তিক, তেমনি একজন নাগরিক তার বিয়ের প্রয়োজন হলে কখন বিয়ে করবে, সেক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের নাক গলানো অনভিপ্রেত। এটা অবশ্যই ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল। ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হলে রাষ্ট্রের যদি ক্ষতি হতো, তাহলে রাষ্ট্র এ নিয়ে আইন করতে পারতো।

কিন্তু সম্প্রতি দেশে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ নামে ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের বয়স রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিয়ের জন্য মেয়েদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর বেঁধে দিয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ করার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আইনানুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেয়া যাবে না। এমনকি কোনো মেয়েকে এ বয়সের আগে বিয়ে দিলে তা বাল্যবিবাহ বলে পরিগণিত হবে এবং এটা দন্ডনীয় অপরাধ বলেও সাব্যস্ত হবে! প্রশ্ন হচ্ছে, ১৮ বছর পূর্ণ হবার পরই কি মেয়েরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়? ১৮ বছরের আগে উপযুক্ত হয় না?
এটা সবাই জানে যে, একজন মেয়ে বা ছেলে বিয়ের প্রতি আগ্রহী হয় তার শরীরে যৌনশক্তি আসার পর। যৌনশক্তি আসার পর কোনো ছেলে বা মেয়ে আর বালক বা বালিকা থাকে না, হয়ে যায় যুবক-যুবতী। যুবক বা যুবতী হবার পরই তারা বিয়ের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হয়ে যায়। কোনো বয়সে পৌঁছার আর প্রয়োজন হয় না। আর এটাও আমরা সবাই জানি সব মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বয়সে যৌনশক্তির অধিকারী হয় না। একেক জন একের বয়সে এসে যৌনশক্তি লাভ করে। কেনো কোনো মেয়ে ১২ বছর বয়সেও যৌনশক্তি লাভ করে ফেলে আবার কেউ কেউ ১৩, ১৪ বা ১৫ বছর বয়সে এসে যৌনশক্তির অধিকারী হয়ে থাকে। ছেলেরা সাধারণতঃ ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে যৌনশক্তির অধিকারী হয়ে থকে।
দেশের একজন নাগরিকের পেটে ক্ষুধা লাগলে খাবে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মাথা ঘামানো যেমন বাড়াবাড়ি, একজন নাগরিকের বৈধ পথে যৌনক্ষুধা নিবারণের পথেও রাষ্ট্র বাধা দেয়ার কোনো মানে নেই।

মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর নির্ধারণের জন্য নারীরা কেন আন্দোলন করে, তার উদ্দেশ্য নারী নেত্রীরাও হয়তো ভালোভাবে জানে না। গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সংখ্যার দৈনিক যুগান্তরের শেষ পৃষ্ঠায় দেখলাম একটি প্রতিবেদন, ‘১৮ বছরের নিচে কন্যাশিশুদের বিয়ে হবে ‘সর্বনাশা আইন’।’
শিরোনাম দেখে ভাবলাম একটু পড়ে দেখি কিভাবে এটা ‘সর্বনাশা’ হবে! দেখলাম নারী নেত্রীরা বলছেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে আঠারোর নিচে কন্যাশিশুদের বিয়ে দেয়া মানে নারী ধর্ষণের পথকে সুগম করা। এ আইনের সুবিধা নেবে কাজী, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রভাবশালী ব্যক্তি, বাবা-মা ও ধর্ষক।’ প্রতিবেদনটির শেষদিকে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে, ‘আইন শিথিল করে ১৮ বছরের নিচে কোনো কন্যাকে বিয়ে দেয়া হলে তা হবে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়।’
নারী নেত্রীদের প্রথম বক্তব্যটি হলো আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ রাখার বিরুদ্ধে। এমন সুযোগ রাখা হলে নাকি ধর্ষনের পথ সুগম হবে। প্রশ্ন হলো, এমন সুযোগ না রাখা হলে কি ধর্ষণ কমবে? দৈনিক প্রত্রিকায় প্রতিদিন ধর্ষনের যে সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়, নারী নেত্রীরা কি সেগুলো দেখতে পান না? তারা কী করেন সেগুলো বন্ধে? গত ১৯ ডিসেম্বর প্রত্রিকায় দেখলাম ঢাকা থেকে একটি মেয়েকে অপহরণ করে কক্সবাজার নিয়ে একমাস আটক রেখে ধর্ষণ করে মানুষরূপী কিছু পশু। একমাস পর আবার তাকে যেখান থেকে অপহরণ করা হয়েছে, সেখানে রেখে যাওয়া হয়। প্রতিদিনই ধর্ষনের এরকম অনেক সংবাদ দেখি পত্রিকায়। পাঁচ-ছয় বছরের আক্ষরিক অর্থের শিশুরাও প্রায়ই ধর্ষিত হয়। কিন্তু নারী নেত্রীদেরকে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যায় না। তাহলে ১৮ বছরের আগে বিয়ের সুযোগ রাখা হলে ধর্ষণ নিয়ে তাদের এতো আশংকা কেন?
এবার নারী নেত্রী আয়শা খানমের কথায় আসি। তিনি বলতে চান ১৮ বছরের আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দিলে তা হবে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়। এর মানে কিন্তু এটাও যে, ১৮ বছর বয়সে বা এরপর বিয়ে হলে তাতে নারীর জীবনমান উন্নত হবে এবং নারী-ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে। এতে মনে হয় নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন ১৮ বছর বয়সের সাথে সম্পর্কিত। এ বয়সের আগে তাদের বিয়ে হয়ে গেলে তাদের জীবনে কোনো উন্নতি আসবে না। বিষয়টা আসলে এমন নয়। বরং নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজন নারী শিক্ষাকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর চাহিদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। এসব করা হলে নারীর বিয়ে ১৮ বছরের আগে হোক বা পরে, তার জীবনে উন্নতি আসবেই।
১৮ বছর বয়স হলেই মেয়েরা পরিণত হয় বা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয় এবং এর আগে তাদের বিয়ে দিলে তা বাল্যবিবাহ হয়ে যায়, এমন কথার আরেকটি মানে হচ্ছে, মেয়েরা ১৮ বছরের আগে যুবতীই হয় না, তারা বালিকা থেকে যায়! ‘ষোড়শী’ বলে যে একটি শব্দ আছে, সে শব্দের মানে তখন ‘ষোল বছরের যুবতী’ না হয়ে হবে ‘ষোল বছরের শিশুকন্যা’! বড়ই হাস্যকর।
জাপানে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর (‘ঐতিহ্য’ থেকে প্রকাশিত ‘জাপান কাহিনী’, পৃ-৫৯, লেখক: আশির আহমেদ)। আমাদের চেয়ে অনেক অনেক উন্নত দেশ জাপান যদি ষোল বছরের একটি মেয়েকে যুবতী বলে স্বীকৃতি দিতে পারে, আমরা পারবো না কেনো? আঠারো বছর পর্যন্ত একটি মেয়েকে বিয়ে থেকে বাধা দিয়ে রাখায় আমাদের কী লাভ! মেয়ের অভিভাবক যদি মেয়েটি প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পর তার জন্য উপযুক্ত পাত্র পায়, তাহলে তাকে বিয়ে দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের বাধার সম্মুখীন হওয়া কোনোভাবেই একটি সভ্য রাষ্ট্রে কাম্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রে যান, দেখবেন সেখানে প্রায় সব রাজ্যেই ১৮ বয়সের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে কোর্ট বা তাদের অভিভাবকের সম্মতিতে হতে পারে। কোনো কোনো রাজ্যে এ বিয়ে সর্বনিম্ন ১২ বছরে হয়ে থাকে। এমনকি একটি রাজ্যে বিয়ের কোনো সর্বনিম্ন বয়সসীমা নেই! (দৈনিক যুগান্তর, পৃ-২৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬)। নারী বা পুরুষের বিয়ের ক্ষেত্রে এটাই হওয়া উচিত কোনো দেশের স্বাভাবিক নিয়ম।

যৌন হয়রানী নিয়ে ইদানিং অনেক আলোচনা হচ্ছে। এর কারণ এবং এ থেকে পরিত্রাণের অনেক উপায়ও খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাবি না, প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরও মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে না পারা এই যৌন হয়রানির একটি প্রধান কারণ। অনেক অভিভাবক তার মেয়ে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরও মেয়েটির বয়স ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কারণে মেয়েটি পথে ঘাটে বখাটে কর্তৃক ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অনেক মেয়ে অপহরণ এবং ধর্ষণেরও শিকার হয়। রাষ্ট্র যদি একজন অভিভাবক থেকে ১৮ বছরের আগে তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার অধিকার কেড়ে না নিতো, তাহলে সমাজে ইভটিজিং, ধর্ষণ, অপহরণ, ধর্ষণের পর হত্যা, মেয়েদের আত্মহত্যার অনেক ঘটনা ঘটতো না।
পত্রিকার প্রায় প্রতিদিনই দেখি দেশের অনেক জায়গায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে (মানে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে, তা ১৭ হোক, ১৬ হোক বা আরো কম) ভন্ডুল করে দিয়ে কখনো বরকে, কখনো কাজীকে, কখনো কনের বাবাকে, কখনো বরের বাবাকে জেল দেয়া হয়েছে বা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। আমার মনে হয় না, কোনো অভিভাবক তার মেয়ে প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার আগেই শিশুকালে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেয়। হয়তো তার বয়স অল্প; তেরো/চৌদ্দ বা পনেরো/ষোল বছর, তবে অবশ্যই প্রাপ্তবয়ষ্ক। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কী ক্ষতি? রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের কল্যাণ কামনা করে থাকে তাহলে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে যাতে তারা খুব অল্প বয়সে বা প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে তাদের মেয়েদের বিয়ে না দেয়।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটা রাষ্ট্রে নানা রকম সংকট সৃষ্টি করে। যেখানে সেই জনসংখ্যার আধিক্য রোধ করার জন্য এদেশে রাষ্ট্রীয় শক্ত কোনো আইন নেই, রাষ্ট্র কেবল ‘ছেলে হোক, মেয়ে হোক, দু’টি সন্তানই যথেষ্ট’ জাতীয় শ্লোগান প্রচার করেই ক্ষান্ত থাকে, সেখানে কম বয়সে বিয়ে দিলে রাষ্ট্রে কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্র এ ব্যাপারে শক্ত আইন করে বসে আছে!

নিবন্ধটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাতে পারেন এই পেইজে গিয়ে: https://www.facebook.com/nurahmad.bangladeshi/posts/168860311386362?__tn__=K-R

প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামো কেমন হওয়া উচিত?

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নকাঠামো প্রণয়ন করে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)’। এখানে শুধু প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একই কাঠামোয় পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। প্রথমে বর্তমান কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

বর্তমান কাঠামোয় প্রথমে একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয় পাঠ্যবই থেকে। অনুচ্ছেদটির উপর ভিত্তি করে ১নং থেকে ৪নং পর্যন্ত প্রশ্ন করা হয়। ১নং প্রশ্নে আসে বাম পাশের শব্দের সাথে ডান পাশের অর্থের মিল করা অথবা শূন্যস্থান পূরণ করা। ২নং প্রশ্নে আসে সত্য/মিথ্যা নির্ণয় করা। ৩নং প্রশ্নে আসে প্রশ্নের উত্তর লেখা এবং ৪নং প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত একটি রচনা আসে।

এরপর একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয় পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘আনসীন প্যাসেজ’। সেটির উপর ভিত্তি করে ৫নং থেকে ৮নং পর্যন্ত প্রশ্ন করা হয়। ৫নং প্রশ্নে আসে প্রদত্ত শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা। ৬নং প্রশ্নে আসে সত্য/মিথ্যা নির্ণয় করা। ৭নং প্রশ্নে আসে প্রশ্নের উত্তর লেখা এবং ৮নং প্রশ্নে আসে অনুচ্ছেদটির উপর ভিত্তি করে একটি পত্র লেখা।

পড়তে পারেন: প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করুন!

৯নং প্রশ্নে আসে প্রদত্ত বাক্য ব্যবহার করে ‘ডব্লিউ-এইচ কোশ্চেন’ তৈরি করা, ১০নং প্রশ্নে আসে Short Questions using informative instructions, ১১নং প্রশ্নে আসে দিন, মাস, সময় ইত্যাদি তথ্য ব্যবহার করে শূন্যস্থান পূরণ করা অথবা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া। ১২নং প্রশ্নে আসে প্রদত্ত শব্দগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে অর্থবোধক বাক্য তৈরি করা। ১৩নং প্রশ্নে আসে ফর্ম পূরণ করা।

১. বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়াতে সঙ্গত কারণেই আমাদের দেশের শিশুরা মায়ের কোল থেকে শিখতে শুরু করে বাংলা ভাষা। সমাজের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চর্চিত হওয়ার কারণে শিশুরা অল্প বয়সেই এবং সহজেই বাংলা ভাষা আয়ত্ব করে ফেলে। দেশের প্রায় সব প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) শিশুরা বাংলা মাধ্যমেই পড়াশুনা করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুরা মাত্র একটি ইংরেজি মাধ্যম বইয়ের বিপরীতে অন্তত পাঁচ-পাঁচটি বাংলা মাধ্যম বই চর্চা করে। তাই বাংলা পরীক্ষায় পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হলেও শিশুরা উত্তর দিতে মোটামুটি সক্ষম হয়। কিন্তু ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা। মাতৃভাষা বাংলা হওয়ায় এবং শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে সবসময় বাংলা ভাষা চর্চা করায় শিশুরা ইংরেজি পাঠ্যবইগুলো বুঝতেই হিমশিম খায়। শিক্ষক যতই পড়ান না কেন, অনেক শিশু ইংরেজি পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারে না, ইংরেজি ভাষা আয়ত্ব করা দূরের কথা। ইংরেজি বইয়ের পড়াগুলো দেখে দেখে পড়তেও অনেকের ঘাম ছুটে যায়। এজন্য ইংরেজি পাঠ্যবই থেকে কোনো অনুচ্ছেদ পরীক্ষায় এলে সেই অনুচ্ছেদ-ভিত্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেও যেখানে ওরা বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়, সেখানে পাঠ্যবইবহির্ভূত অনুচ্ছেদ (আনসীন প্যাসেজ) দেয়া হলে অনেক শিশু প্রথমতঃ অনুচ্ছেদটিই বুঝতে পারে না, অনুচ্ছেদভিত্তিক প্রশ্নগুলো (৫নং থেকে ৮নং) বুঝা দূরের কথা! তাহলে কেন প্রাথমিক স্তরের শিশুদেরকে ইংরেজি পাঠ্যইয়ের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হয়? তা-ও আবার ৩১ মার্কসের প্রশ্ন!

২. একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদেরকে সেই বিষয়েই প্রশ্ন করতে পারেন, যে বিষয়টি তাদেরকে শিখিয়েছেন। যে বিষয় তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদেরকে শেখাননি, তাদেরকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধরুন, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজি পড়ান। ইংরেজি পরীক্ষায় তিনি যদি শিক্ষার্থীদেরকে জাপানী ভাষা থেকে প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীরা কি কিছু পারবে? কেন পারবে না? কারণ ঐ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদেরকে কখনো জাপানী ভাষা পড়াননি। এভাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব সময় পড়ানো হয় পাঠ্যবইয়ের ইংরেজি পড়াগুলো। সারাবছর শেখানো হয় পাঠ্যবই, পরীক্ষার সময় তাকে পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকেও প্রশ্ন করাটা কি সম্পূর্ণ অনুচিত নয়? পাঠ্যবইয়ের বাইরের যে অনুচ্ছেদটি পরীক্ষায় দেয়া হয়, যদি এমন শর্ত থাকতো, সেই অনুচ্ছেদের সবগুলো শব্দ এবং বাক্যের ফরম্যাট পাঠ্যবইয়ে থাকতে হবে, শুধু সেই রকম অনুচ্ছেদ দেয়া যেতো পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে। কিন্তু এভাবে কি দেয়া হয়? অনুচ্ছেদটির উপর ভিত্তি করে যে প্রশ্নগুলো (৫নং থেকে ৮নং) করা হয়, শুধু সেই প্রশ্নগুলোর অর্থ উদ্ধার করতেও অনেক শিশুর বেশ বেগ পেতে হয়, উত্তর দেয়া তো পরের বিষয়। কারণ সেসব প্রশ্নের মধ্যে এমন অনেক শব্দ থাকে, যেগুলোর অর্থ শিশুরা পাঠ্যবইয়ে শেখেনি। যে শব্দগুলোর অর্থ শিশুরা এখনো শেখার সুযোগ পায়নি, সে শব্দগুলো ব্যবহার করে তাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তারা কিভাবে প্রশ্ন বুঝবে? প্রশ্নই যদি না বুঝে, তাহলে উত্তর দেবে কিভাবে?

৩. পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নের ৭নং প্রশ্নে এমন অনেক প্রশ্নও করা হয়, যেগুলোর উত্তর অনুচ্ছেদটিতে সরাসরি নেই। এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়, যেন শিশুরা সেগুলো নিজ থেকে বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হয়। প্রাথমিক স্তরের একজন বাংলাভাষী শিশুকে ইংরেজিতে এমন প্রশ্ন করার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে, কেউ কি বলতে পারবেন?

উচ্চশিক্ষায় (স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়) পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন করা যেতে পারে। কারণ সে পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষার ওপর মোটামুটি একটা ধারণা লাভ করতে পারে। কিন্তু উপহাসের বিষয় হচ্ছে, আমাদের স্নাতকে বাংলায় (আবশ্যিক) এখনো পাঠ্যবইবহির্ভূত কোনো অনুচ্ছেদ দেয়া হয় না বা প্রশ্ন করা হয় না, অথচ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজিতে পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে প্রশ্ন করা হয়!

৪. ৮নং প্রশ্নে আসে ব্যক্তিগত পত্রলিখন। পত্রলিখন কেন একসময় মানুষকে শেখানো হতো, এই প্রশ্নের উত্তর যাদের জানা নেই, তারাই এই স্মার্টফোন-ইন্টার্নেটের যুগেও, চিঠিপত্রের অচলাবস্থার এই যুগেও পত্রলিখনের অভ্যাস ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে যখন ই-মেইলের ব্যবহার শেখানো হয়, তখন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরকে শিখতে বাধ্য করা হয় পত্রলিখন! ‘প্রাথমিক শিক্ষা’র মানে বুঝতেও অনেকের কষ্ট হয় হয়তো।

৫. ‘ডব্লিও-এইচ কোশ্চেন’ আমরা ছাত্রজীবনে পড়ে এসেছি স্নাতকে। এখন তা নেমে এসেছে তৃতীয় শ্রেণিতে পর্যন্ত! কেন, তৃতীয় শ্রেণি থেকেই এই নিয়মটার চর্চা করতে হবে কেন? বীজগণিতের মতো ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে চর্চা করলে হয় না? প্রাথমিক স্তরে গ্রামারের আরো সহজ নিয়ম দেয়া যেতে পারে।

৬. একটা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে অনুবাদ চর্চা করা কতটা প্রয়োজন, তা যে কোনো বিজ্ঞ লোক বলতে পারবেন। কিন্তু নিদারুণ পরিতাপের বিষয়, প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কোনো অনুবাদ চর্চার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ‘বাংলা থেকে ইংরেজি’ এবং ‘ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ’, এই দু’টি কমন আইটেম যেখানে ইংরেজি প্রশ্নকাঠামোয় থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত, সেখানে এগুলোর একটিও নেই! অথচ আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের বাংলা (আবশ্যিক) প্রশ্নকাঠামোয় ‘ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ’ করা বাধ্যতামূলক!

৭. শব্দার্থ লেখা এবং বাক্যরচনাও ইংরেজি ভাষাচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামোয় এই দু’টিরও কোনোটি স্থান পায়নি। প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি পাঠ্যবই কি ভাষাচর্চার অংশ হিসেবে পড়ানো হয়, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, বুঝতে কষ্ট হয়।

৮. ডায়ালগ বা সংলাপ চর্চাও নিঃসন্দেহে ভাষা চর্চার আবশ্যকীয় অংশ। কিন্তু প্রাথমিকের বর্তমান ইংরেজি প্রশ্নকাঠামোয় সংলাপের উপর কোনো প্রশ্নই নেই! পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইতে অনেকগুলো (২০টির মতো) সংলাপ রয়েছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির বইতেও অনেকগুলো রয়েছে। অথচ পরীক্ষায় কোনো সংলাপ না আসায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সেগুলো ভালোভাবে চর্চা না করলেও কোনো অসুবিধা হয় না। পরীক্ষায় না এলে শিক্ষার্থীরা কেন সেগুলো ভালোভাবে চর্চা করতে যাবে!

৯. পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন নিয়ে আরো কিছু কথা না বললেই নয়। সরকার নোট ও গাইডবই নিষিদ্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হতে পারছে না। কেন এক্ষেত্রে সফল হতে পারছে না, তার কারণ অনুসন্ধান করলে পরীক্ষায় পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন করাটাকেও একটা মস্ত বড় কারণ বলে মনে হবে। শুধু পাঠ্যবই চর্চা করলেই যে পাঠ্যবইবহির্ভূত অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করা যাবে না এবং পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া কষ্টকর হবে, যারা প্রশ্নকাঠামোয় পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করেছেন, বিষয়টা তারাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন। গাইড ও নোটবইয়ের চাহিদা সৃষ্টি করেছে পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন, এই কথায় দ্বিমত পোষণ করবেন, এমন সচেতন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। গাইড ও নোটবই নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে অবশ্যই পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন বাদ দিতে হবে সকল শ্রেণির প্রশ্নকাঠামো থেকে।

১০. প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য যে প্রশ্নকাঠামো প্রণয়ন করা হয়, সে কাঠামোই তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় অনুসৃত হয়) এখন শতভাগ সৃজনশীল বা যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ইত্যাদি দক্ষতার উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন) করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সৃজনশীল বা যোগ্যতাভিত্তিত প্রশ্নের সাথে পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নের সম্পর্ক কী? সঠিক উত্তর হচ্ছে, কোনো সম্পর্ক নেই। যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন আর পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন কখনোই এক নয়। যদি এক হতো, তাহলে পাঠ্যবই থেকে এখন আর কোনো প্রশ্নই করা হতো না, সব প্রশ্ন পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে করা হতো। যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নের জন্য পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন আবশ্যক নয়। বরং এটা শিক্ষার্থীদের উপর অবিচার। পাঠ্যবই থেকেই শতভাগ যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন করা উচিত। যেভাবে গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে (বাংলা এবং ইংরেজি ব্যতীত) প্রশ্ন করা হয়, যেভাবে এখন ইংরেজিতে ৩১ শতাংশ পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন ব্যতীত অবশিষ্ট প্রশ্নগুলো পাঠ্যবই থেকেই করা হয়।

১১. পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন করা হলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে তা চর্চা করবে বা প্রস্তুতি নেবে, যারা প্রশ্নকাঠামোয় পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তারা এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন না। এরচেয়ে বরং পাঠ্যবইয়ে বেশি বেশি পাঠ অন্তর্ভুক্ত করে শতভাগ যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন পাঠ্যবই থেকে করা হলে, শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে আরো বেশি ইংরেজি শিখবে, আরো বেশি ইংরেজি চর্চার সুযোগ পাবে। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পর্যাপ্ত পাঠ আছে, চতুর্থ শ্রেণির বইয়েও যেগুলো আছে, চলে। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে আরো বেশি পাঠ অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ আছে। এই কাজটা অবশ্য ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’-এর। ‘নেপ’-এর পক্ষ থেকে এনসিটিবি’কে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

১২. কিছুদিন আগে আমার হাতে এসেছে একটি ইংরেজি প্রশ্ন, যা প্রণয়ন করা হয়েছে কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে। ২০১৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষার আগে সকল পরীক্ষায় উপজেলা/থানাভিত্তিক প্রশ্ন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঐ প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হতো। এখন অবশ্য বিদ্যালয়-ভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। কোতোয়ালী থানার ঐ প্রশ্ন দেখে আমি রীতিমতো অবাক এবং মুগ্ধ হই। সেখানে একদিকে কোনো পাঠ্যবইবহির্ভূত অনুচ্ছেদই রাখা হয়নি, অন্যদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শব্দার্থ, বাক্য রচনা, সংলাপ, বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ, এমনকি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও! তবে নেপ-এর কাঠামো সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করতে না পেরে হয়তো পত্রলিখন বাদ দিতে পারেনি। তবু তাদের এই ভিন্ন পথে চলা আমাকে বিস্মিত করেছে। নেপ-এর নির্দিষ্ট কাঠামোর বাইরে গিয়ে তারা যে প্রশ্নকাঠামো অনুসরণ করেছে, যে কোনো বিজ্ঞ লোক সেটিকে একটি আদর্শ কাঠামো বলেই রায় দেবেন। কোতোয়ালী থানার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের যেসব শিক্ষার্থী ঐ প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে, সেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষিত অভিভাবকগণকে নেপ-এর কাঠামো অনুসরণে প্রণীত একটি প্রশ্ন এবং কোতোয়ালী থানার ঐ প্রশ্ন দিয়ে যদি তুলনা করতে বলা হয়, আমার বিশ্বাস, তারা কোতোয়ালী থানার কাঠামোকেই উত্তম বলে অভিমত দেবেন। আশা করি ‘নেপ’ বিষয়টা গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে এবং বর্তমান কাঠামো বাদ দিয়ে ইংরেজির জন্য প্রাথমিক স্তরের উপযোগি একটি নতুন আদর্শ কাঠামো প্রণয়ন করবে।

প্রশ্নপত্র:


নূর আহমদ : শিক্ষক ও গবেষক