কোটা প্রথা মেধাবীদেরকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে

 

বাংলাদেশে সমস্যার অভাব নেই। অসংখ্য জাতীয় সমস্যায় জর্জরিত দেশের জনগণ। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বেকার সমস্যা। আর বেকার সমস্যার অন্যতম কারণ বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে নানারকম কোটা সংরক্ষণ করা। কোটা প্রথার গ্যাঁড়াকলে পড়ে অনেক শিক্ষিত তরুণ বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং অনেক মেধাবী লোক উপযুক্ত পদে চাকরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। অন্যদিকে কোটার ফাঁক দিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদকে অলঙ্কৃত না করে বরং কলুষিত করে।

কোটা প্রথার যৌক্তিকতা খুঁজতে হলে প্রথমে দেখতে হবে কেন এ প্রথা। আমাদের দেশে কোটা প্রথার উদ্দেশ্য বিভিন্ন। এক. দুর্বল বা অসহায় নাগরিকদের সুযোগ প্রদান, যেমন প্রতিবন্ধী কোটা; দুই. শিক্ষিত হওয়ার প্রতি উৎসাহিতকরণ, যেমন মহিলা কোটা; তিন. বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মান প্রদান, যেমন মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটা ইত্যাদি। উদ্দেশ্যগুলো বিবেচনা করলে প্রচলিত কোটা সংরক্ষণ যৌক্তিক মনে হতে পারে। তবে যখন দেখা যায় কিছু নাগরিকের জন্য এসব কোটা সংরক্ষণ করতে গিয়ে অন্য নাগরিকদের প্রতি অবিচার করা হয় বা রাষ্ট্রে অন্য কোনো বড় সমস্যা দেখা দেয়, তখন কোটা প্রথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক প্রতীয়মান হয়। যেমন বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী কোটা রয়েছে ৬০ শতাংশ, আর ২০ শতাংশ রয়েছে পোষ্য, প্রতিবন্ধী ইত্যাদি কোটা। এই ৮০ শতাংশ কোটা পূরণ করতে গিয়ে কোটার বাইরে মেধাবীদের জন্য অবশিষ্ট থাকে শুধুই ২০ শতাংশ পদ! তার মানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ হয় মাত্র ২০ শতাংশ! দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান তাহলে কী করে উন্নত হবে? নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে গিয়ে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা এখন বড় শোচনীয়।

বিসিএসে মেধা তালিকা থেকে মাত্র ৪৫ শতাংশ নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ আসে কোটা থেকে। এছাড়া নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একই কোটা সংরক্ষণ করা হয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে মাত্র ৩০ শতাংশ পূরণ করা হয়! মেধাবীদের আসন এভাবে সীমিত করে দেয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার মেধাকে রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে পারে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আবার বিদেশ গিয়ে বিদেশের জন্য তার মেধা খরচ করে, আমরা যাকে বলি মেধা পাচার। এই মেধা পাচার যে আমাদের সিস্টেমেটিক ত্র“টির কারণে হয়, তা নীতিনির্ধারকদের বুঝতে মনে হয় আরও কয়েক যুগ লেগে যাবে!

২০০৬ সালে আমি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। এ পদে সে বছর পুরো দেশ থেকে মাত্র ৮৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল, তবু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তখন ৩০ শতাংশ মহিলা কোটা পূরণ আবশ্যক হওয়ায় আমি ওই সনদ দিয়ে এখনও একটি চাকরি পাইনি। কী ছিল আমার অপরাধ? এদেশে আমার মতো কত হতভাগা এভাবে প্রথম শ্রেণীর সার্টিফিকেট নিয়েও তৃতীয় শ্রেণীর জীবনযাপন করে, তার হিসাব কে রাখে!

আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো যৌক্তিক পন্থা না খুঁজে মনগড়া পন্থাই বেশি অবলম্বন করি। যার ফলে দেশে একটি সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে নতুন অনেক সমস্যার জন্ম হয়। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য চাকরিতে তাদের জন্য ৬০ বা ৩০ শতাংশ আসন রাখার কি কোনো বিকল্প ছিল না? নারী শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক ও উপবৃত্তিমূলক করেই একে উৎসাহিত করা যেত, নারীদের জন্য চাকরিতে পৃথক কোটা সংরক্ষণের প্রয়োজন হতো না। এভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত ভাতা নির্ধারণ করেই তাদের অসহায়ত্ব দূর করা যেত, তাদের জন্য চাকরিতে কোটা রাখার প্রয়োজন হতো না।

দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের সন্তানদের জন্যও সম্মানজনক ও উপযুক্ত ভাতা বা প্রয়োজনে আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে তাদের প্রতি যথেষ্ট সুবিচার করা হতো, তাদের জন্য পদে পদে কোটা রাখা আবশ্যক হতো না।

২১ অক্টোবর যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে কোটা প্রথা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা থাকলেও নাতি-পুতিদের জন্য নয়।’ এমন সাহসী বক্তব্য বাংলাদেশে খুব কমই উচ্চারিত হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত ও সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে; কিন্তু চাকরিতে তাদের জন্য আলাদা কোটা না রেখে সবার জন্য চাকরিতে প্রবেশের সমান সুযোগ রাখা উচিত।

আমার কথার অর্থ এই নয় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনি, নারী, প্রতিবন্ধী এদের চাকরিতে প্রবেশাধিকার দেয়া উচিত নয়। আমার কথা হচ্ছে, কোনো কোটা ছাড়াই দেশের সব নাগরিকের জন্য চাকরিতে প্রবেশের সমান সুযোগ রাখা উচিত। প্রতিযোগিতা করে- মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোক বা কৃষকের সন্তান হোক, প্রতিবন্ধী কি নারী হোক- মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরাই যখন চাকরি পাবে, তখন কমে যাবে বৈষম্য, বেকার সমস্যা এবং মেধা পাচার। আশা করি, দেশ সে পথেই এগোবে। আর ভুল পথে চলা নয়।

উল্লেখ্য, লেখাটি দৈনিক যুগান্তরের উপসম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়েছে ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ‘‘কোটা নয়, মেধার হোক জয়’’ শিরোনামে।

শিশুদের পরীক্ষা তুলে নেয়ায় লাভ, নাকি ক্ষতি?

 

শিশুশিক্ষার্থীদের উপর পরীক্ষাটা অনেক আগ থেকেই আমার কাছে একটা বোঝা বলে মনে হচ্ছিল। তাই ‘পরীক্ষার ভারে পিষ্ট শৈশব’ এ রকম শিরোনামে একটা লেখায় হাত দেয়ার সুযোগ খুঁজছিলাম। শেষে ২০ মার্চ যুগান্তরে দেখলাম একটি অভাবিত সংবাদ- ‘তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকছে না।’

পরদিন ২১ মার্চ প্রথম আলোয়ও একই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক খুশি হলাম প্রধানমন্ত্রীর এ চমৎকার নির্দেশের কথা জেনে।

আমার বিশ্বাস, দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হবেন। দু-তিনজনের সঙ্গে আলোচনা করে আমার বিশ্বাসের বাস্তবতাও টের পেলাম। বাংলাদেশে এমন অনেক অনিয়ম আছে, যুগ যুগ ধরে যেগুলো চলতে থাকার কারণে মানুষ এখন অনিয়মগুলোকেই নিয়ম বলে চূড়ান্তভাবে বিশ্বাস করে ফেলেছে। তাই এসব কোনো অনিয়মকে নিয়মে আনতে গেলে চারদিকে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।

আরো পড়ুন: প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামো কেমন হওয়া উচিত?

একটা বিষয় খুব কম মানুষই উপলব্ধি করেন, শৈশবকালটা মেধা বিকাশের সময়; মেধা যাচাইয়ের সময় নয়। শুধু এজন্য পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের কোনো পরীক্ষা নেয়া হয় না। এসময় শিশুরা খেলবে, শিখবে, আনন্দ করবে। শুনে শিখবে, দেখে শিখবে, পড়ে শিখবে। কিছু শিখতে না শিখতেই কোমলমতি শিশুদের জ্ঞান যাচাই করতে যাওয়াটা ঠিক কিনা, একবার ভেবে দেখলেই শিশুদের পরীক্ষা করার অযৌক্তিকতা সহজেই হৃদয়ঙ্গম হবে।

আমাদের কাছের দেশ হলেও জাপানের কথা আমরা অনেকেই জানি না। জাপানে ১৯৮৮ সালে পড়তে যাওয়া আশির আহমেদ নামক এক বাংলাদেশি এখন জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। ‘জাপান কাহিনি’ নামক একটা বই তিনি বের করেন ২০১৫ সালে। এরপর প্রতিবছর বইটির নতুন নতুন খণ্ড বের হতে থাকে। এ বছর বইমেলায় বইটির ৫ম খণ্ড বের হয়েছে। বইটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘(জাপানে) প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। শিশুদের এসময়টি মেধা বিকাশের সময়, মেধা যাচাইয়ের সময় নয়।’ [পৃষ্ঠা-৩৪]

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আলোচনায় তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশ দেন, সে আলোচনায় ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ওইসব দেশে বাচ্চাদের কোনো পরীক্ষা নেই।’ [যুগান্তর, ২০ মার্চ ২০১৯] মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের কথা জেনে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। একটি প্রশ্ন হল- তাহলে বছর শেষে শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশন দেয়া হবে কীভাবে? আমি জানি না, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিষয়টা এমন নয় যে, পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশন দেয়ার কোনো যৌক্তিক উপায় নেই।

একটা উপায় এমন হতে পারে- প্রত্যেক বিষয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শ্রেণী পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে একটা নম্বর দেবেন, সেই নম্বরের ওপরই শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেয়া, না দেয়াটা নির্ভর করবে। আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে- যদি একটা শ্রেণীতে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকে, তাহলে তাদের মেধাক্রম কি শিক্ষকদের ওই অনুমান করা নম্বরের ওপর ভিত্তি করে সহজে নির্ণয় করা যাবে। প্রশ্নটির উত্তরের জন্য দেখুন ‘জাপান কাহিনি’ বইটির প্রথম খণ্ড।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ক্লাসে কে ধনী, কে গরিব, কে প্রথম, কে দ্বিতীয়- এসব বৈষম্য যেন তৈরি না হয়; তার জন্য যথেষ্ট সতর্ক থাকেন (জাপানের) স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্লাসে রোল নং ১ মানে এই নয় যে, একাডেমিক পারফরমেন্স তার সবচেয়ে ভালো। রোল নং তৈরি হয় নামের বানানের ক্রমানুসারে। [জাপান কাহিনি ১ম খণ্ড, আশির আহমেদ, ঐতিহ্য, পৃষ্ঠা-৫৯]

পড়তে পারেন: প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করুন!

শিক্ষকদের মূল্যায়নে যেসব শিক্ষার্থী প্রমোশন পাবে, তারা ওপরের শ্রেণীতে উঠে যাবে। তাদের রোল নং হবে তাদের নামের বানানের ক্রমানুসারে। যাদের নামের প্রথম অক্ষর ‘এ’, তাদের নাম ডাকা হবে আগে, যাদের নামের প্রথম অক্ষর ‘বি’, তাদের নামগুলো আসবে এরপর। যেভাবে সেলফোনের ‘ফোনবুকে’ সেভকরা নামগুলো এ, বি, সি, ডি ক্রমানুসারে সাজানো হয়ে থাকে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এক অনর্থক প্রতিযোগিতার মনোভাবও দূর হবে। শিক্ষার্থীরা খুশি মনে, খেলার ছলে, খুব স্বাধীনভাবে শিখবে; মেধার বিকাশ ঘটাবে।

শৈশবেই শিশুদের পরীক্ষার মতো যুদ্ধে নামিয়ে দিলে শিশুদের জীবন হয়ে যায় কঠিন। আমাদের দেশে অবস্থা এমন- অভিভাবকরা শিশুর জন্মের পর যত আগে তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারেন, মনে করেন শিক্ষার্থীরা তত বেশি এগিয়ে যাবে।

এটা ভাবেন না- প্লে­, নার্সারি নামের শ্রেণীগুলোতে পড়ে তার শিশুটি অনার্স, মাস্টার্স পাস করে ফেলবে না। অথচ জাপানে ‘শতকরা ১০০ ভাগ শিশুই ৬ বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়। কারও বয়স জানতে সিমপ্লি­ জিজ্ঞাসা করুন, সে কোন ক্লাসে পড়ে। তার সঙ্গে ৫ যোগ করে ফেলুন।’ [জাপান কাহিনি, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৯]

আমরা উন্নত হচ্ছি না শুধু গৎবাঁধা ধারণা নিয়ে বসে থাকার কারণে। পাশের দেশে কী হচ্ছে, তা খোঁজ রাখার আগ্রহ নেই। আশা করি, এ কথাগুলো জানার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে কেউ কুণ্ঠাবোধ করবে না।

লেখাটি দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয় ৩ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ‘‘শিশুদের পরীক্ষা তুলে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ’’ শিরোনামে।

কোটাপ্রথা কেন বাতিল করা উচিত?

কোটা প্রথা নিয়ে দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে তুমুল আন্দোলন হচ্ছে। বিশেষ করে কোটা সংস্কার নিয়ে। কিন্তু কোটা বাতিল নিয়ে খুব কম মানুষ কথা বলছে। শেষে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা ‘পুরোপুরি বাতিল’ করার ঘোষণা দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আপাতত আন্দোলন বন্ধ আছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির আগে অনেকে কোটা বাতিল না করে কোটা সংস্কারের কথা বলছেন।

এটা ঠিক, দেশের সব মানুষ কোটাপ্রথার বিরুদ্ধে নয়। বেশির ভাগই তারা, যারা কোনো-না-কোনো কোটার আওতায় আছেন। যারা কোনো রকম কোটার আওতায় নেই, আমার মনে হয় না, তারা কেউ কোটা বহাল রাখা বা কোটা সংস্কারের পক্ষে। যারা কোনো রকম কোটার আওতায় নেই, দেশের সেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বছরের পর বছর কোটাভুক্ত মানুষের দাপটে সরকারি চাকরি লাভ করা থেকে একধাপ পিছিয়ে থাকেন, অনেকটা বঞ্চিত হন, সেদিকে কি লক্ষ করা জরুরি নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরিতে বিভিন্নভাবে যারা কোটার সুবিধা নিচ্ছেন, দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর তুলনায় তাদের সংখ্যা খুবই কম। সরকারি চাকরিতে পদসংখ্যাও সীমিত। এই সীমিতসংখ্যক পদের জন্য কোটার সুবিধাপ্রাপ্ত সীমিতসংখ্যক মানুষ সব সময় অগ্রাধিকার লাভের কারণে দেশের মেধাবী ও দক্ষ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সব সময় উপেক্ষিত থাকছে, নিজেদের অকর্মণ্য ভাবছে এবং হতাশ জীবন কাটাচ্ছে। এ জন্য কোটাপ্রথা সংস্কার না করে পুরোপুরি বাতিল করাই উচিত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এ হিসেবে ঠিকই। কোটাপ্রথার মতো একটি মেধাপরিপন্থী প্রথা দেশ থেকে বিতাড়িত করার এখনই সময়। দেশের বেশির ভাগ মানুষ কোটা বাতিলের পক্ষে। অনেকে হয়তো মুখে সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু অন্তরে অন্তরে ঠিকই চান, কোটাপ্রথা পুরোপুরি বাতিল হোক। সব রকম কোটা বাদ দিয়ে বেসরকারি চাকরির মতোই সরকারি চাকরিতেও পুরোপুরি যোগ্যতা এবং মেধার ভিত্তিতেই জনবল নিয়োগ দেয়া উচিত।

কোটা সংস্কার না করে পুরোপুরি বাতিল করে দিলে যারা এখন বিভিন্ন কোটার আওতায় আছেন, তারা কি একেবারে অচল হয়ে যাবেন? ভর্তি বা চাকরিতে তাদের জন্য কোটা রাখাই কি তাদের প্রতি রাষ্ট্রের একমাত্র করণীয়? তা ছাড়া অনেক কোটা সংরক্ষণের উপযোগিতা এখন নেই বললেই চলে।

সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য আলাদা কোটা সংরক্ষণ করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন চাকরিতে ভিন্ন ভিন্ন হারে। একটা সময় ছিল, যখন নারীশিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল কম। নারীশিক্ষার প্রতি দেশের মানুষকে আগ্রহী করে তুলতেই তখন বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা চালু করা হয়। মহিলা কোটার সর্বোচ্চ ক্ষেত্র হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ মহিলা কোটা সংরক্ষণ করা হয়। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশে এখন এমন অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে একজন পুরুষ শিক্ষকও নেই, শতভাগ মহিলা শিক্ষক! বিষয়টা অনেকেই জানেন। কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় প্রতি গ্রামেই রয়েছে।

সময় বদলে গেছে। চাকরিতে মহিলা কোটা সংরক্ষণ করাসহ নারীশিক্ষার ব্যাপারে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে দেশে নারীশিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। সরকার নারীদের জন্য স্নাতক পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু করেছে। নারীশিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করার কারণে তারা এখন শিক্ষার প্রতি খুবই আগ্রহী। নারীদের জন্য চাকরিতে কোটা না রাখলেও তারা নিজ মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি লাভ করতে পারে। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ, ব্যাংক-বীমাসহ বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান, যেখানে মহিলা কোটা বা অন্য কোনো কোটা নেই, তবু শত শত নারী এখন বেশ দক্ষতা ও সুনামের সাথে চাকরি করছেন। সরকারি চাকরির বাজারটাও এখন সবার জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত করে দিলে নারী হোক বা পুরুষ, কেবল যোগ্য ও মেধাবীরাই সরকারি পদগুলো অলঙ্কৃত করার সুযোগ পাবে। এতে দেশের সামগ্রিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। আরেকটা কথা হচ্ছে, নারীদের জন্য কোটা রাখলে পুরুষরা কি পিছিয়ে পড়ে না? অবহেলিত হয় না? বিষয়টা নারী-পুরুষ সমানাধিকারের পরিপন্থী কি না, তা ভেবে দেখা দরকার।

শারীরিকভাবে অক্ষম দেশের নাগরিকরা, যাদের প্রতিবন্ধী বলা হয়, তাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা রাখার পক্ষে অনেকেই সোচ্চার। বলে থাকেন, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনস্বরূপ এবং তারা যাতে নিজেদের সমাজ, রাষ্ট্র বা পরিবারের বোঝা মনে না করে, তাই তাদের জন্য চাকরিতে কোটা রাখা উচিত। কিন্তু এটা ভাবেন না যে, কেবল চাকরিতে কোটা রাখাই তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের পথ নয় বরং শারীরিকভাবে অক্ষম যারা পড়াশোনায় আগ্রহী, তাদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা, তাদের সব শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা এবং তাদের পর্যাপ্ত উপবৃত্তির ব্যবস্থা রাখা হলে তারা শিক্ষিত হয়ে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবে। পড়াশুনা শেষে তারা নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করবে। চাকরি পেলে তো ভালো, না পেলে তাদের জন্য পর্যাপ্ত ভাতার ব্যবস্থা করা হলে তারা তাদের জীবনকে অভিশপ্ত মনে করবে না। তা ছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী সবাই আর পড়াশোনা করার সুযোগ পায় না। অনেক অশিক্ষিত মানুষ প্রতিবন্ধী হয় পরিণত বয়সে এসে বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। তাদের জন্য চাকরিতে কোটা রাখলেও তারা উপকৃত হওয়ার সুযোগ পাবে না। সুতরাং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা না রেখে তাদের চলার মতো সম্মানজনক ভাতা প্রদান করাই হবে যুক্তিযুক্ত।

আর প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে শিক্ষিত হবে, তাদের জন্য আর ১০ জনের মতো চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ তো থাকছেই।

কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিণতি নিয়ে অনেককে বেশ সরব হতে দেখা যায়। কারো কারো বক্তব্যে মনে হয়, কোটা মানেই যেন শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া দেশে আর কোনো কোটা নেই! এমনকি প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার কারণে কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ বহাল রাখার পক্ষে নতুন করে আন্দোলন হতে দেখা যায়। এতে মনে হয়, মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের পরিবার রাষ্ট্র থেকে আর কোনো রকম সুবিধা ভোগ করছে না। চাকরিতে তাদের জন্য কোটা সংরক্ষণের দায়িত্বই শুধু রাষ্ট্র তাদের জন্য পালন করছে! বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মাসে সম্মানজনক সম্মানী ভাতা দেয়া হচ্ছে (তাদেরকে বিজয় দিবস ভাতা প্রদানের কথাও উঠেছে সম্প্রতি), মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে পৃথক মন্ত্রণালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এমনকি মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য আলাদাভাবে নিয়োগের ব্যবস্থাও করা হয়, যেখানে অন্যরা আবেদন করতে পারে না।

এটা অনস্বীকার্য, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা এবং তাদের বংশধরেরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখেন। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কোটা ছাড়া যে সুবিধাগুলো তারা পাচ্ছেন, সেগুলোর সাথে আরো কিছু যোগ করা যেতে পারে। যেমন জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে, মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের প্রত্যেকের জন্য সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের বংশধরের জন্য সরকারিভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসব করা হলে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য আলাদা কোটা না রাখলেও চলবে। বরং চাকরিতে প্রবেশের পথ সবার জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত থাকলে শুধু মেধাবীরাই দেশের সেবা করার সুযোগ পাবে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোক বা না হোক।

দেশের আরো কিছু দুর্বল ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী আছে, তাদের জন্য চাকরিতে কোটা ছাড়াও অনেক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকার নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে, দেশের বড় বড় শহরে বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার তৈরি করতে পারে, দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরের জন্য অভাবনীয় সব পদক্ষেপ নিতে পারে, সে সরকার দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যতীত অনেক কিছুই করতে পারে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণই বিশেষ, দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার একমাত্র পন্থা নয়।

কোটার ফাঁদে পড়ে দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। দেশের মেধা কাজে লাগছে অন্য দেশে। এ মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ধরে রাখার জন্য কোটাপ্রথা পুরোপুরি বাতিলের বিকল্প নেই। দেশে বেকার সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনেও কোটাপ্রথার কিছুটা হলেও দায় রয়েছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় কোটাপ্রথাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করলে পুরো জাতি উপকৃত হবে; সবাই নিজ মেধা ও যোগ্যতাবলে চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করবে, কোটার ফাঁকে কম মেধাবীরা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সুযোগ পাবে না।

nurahmad786@gmail.com

লেখাটি দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত হয় ১২ জুন ২০১৮ তারিখে ‘‘কোটা বাতিল নয়, সংস্কার করা উচিত’’ শিরোনামে।

প্রাথমিকে কেন ‘পাবলিক পরীক্ষা’?

পঞ্চম শ্রেণি-শেষে বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশব্যাপী একযোগে সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে। কিছু দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দুটি নাকি কোনো পাবলিক পরীক্ষা নয়, এগুলো শ্রেণি-উত্তীর্ণের পরীক্ষা মাত্র। অথচ দেখা যায় সম্পূর্ণরূপে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার আদলে পরীক্ষা দুটি গ্রহণ করা হয়। যেমন- অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মতো পরীক্ষা দুটির জন্য পরীক্ষার্থীরা সরকারিখাতে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়, নিজ বিদ্যালয়ে নয়, অন্য একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়, প্রশ্ন তৈরি করা হয় জাতীয় পর্যায়ে, পরীক্ষা চলাকালীন সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক সার্বক্ষণিক পরীক্ষা পরিদর্শন করা হয়, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় সরকারিভাবে, সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করে ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে ফলাফল প্রকাশ করা হয়, ফলাফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়, এমনকি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সরকারি সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়। অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার সাথে এতো সব মিল থাকা সত্ত্বেও কেন এ পরীক্ষা দুটিকে পাবলিক পরীক্ষা বলা যাবে না, তা বোধগম্য নয়।

আমরা জানি, যেভাবে মাত্র এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট দিয়েই অনেক চাকরি পাওয়া যায়, তেমনি অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট দিয়েও বিভিন্ন সরকারি অফিসে চাকরি নেয়া যায়। তবে পঞ্চম শ্রেণির সার্টিফিকেট এখনও কর্মক্ষেত্রে কোনো কাজে আসে না। এজন্য অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার সাথে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার উল্লেখযোগ্য কোনো বৈসাদৃশ্য আর থাকে না। শুধু পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার সাথে মাত্র এ একটি পার্থক্য থাকে। মাত্র একটি পার্থক্য দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাকে অন্য পাবলিক পরীক্ষাগুলো থেকে আলাদা করা যায় কিভাবে, যখন সেগুলোর সাথে পরীক্ষাটির তাৎপর্যপূর্ণ অনেক মিল রয়েছে?

পরীক্ষা দুটিকে শ্রেণি-উত্তীর্ণের পরীক্ষা বলারও কী অর্থ থাকতে পারে, যখন শ্রেণি-উত্তীর্ণের অন্য পরীক্ষাগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে এ পরীক্ষা নেয়া হয়? শ্রেণি-উত্তীর্ণের পরীক্ষা বলতে হলে পরীক্ষাগুলো আগের মতো তৃতীয়, চতুর্থ বা ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার মতোই নিতে হবে। যতোদিন এগুলো আগের মতো নেয়া না হবে, ততোদিন এগুলোকে ‘পাবলিক পরীক্ষা’ হিসেবেই মানুষ গুরুত্ব দেবে।

আরো পড়ুন: প্রাথমিকের ইংরেজি প্রশ্নকাঠামো কেমন হওয়া উচিত?

২০১৫ সালের পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের বিদ্যালয়ের চারজন খুব মেধাবী শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি মাত্র ইংরেজিতে ‘এ’ গ্রেড পাবার কারণে। অথচ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী সবগুলো বিষয়ে ‘এ প্লাস’ না পেলেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাও এক্ষেত্রে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মতোই। শুধু প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ব্যতিক্রম। পঞ্চম শ্রেণীতে যখন মাত্র এক বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড পেলেই তার ‘এ প্লাস’ মিস হয়ে যায়, তখন অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসি এসব পরীক্ষায় তিন-চার বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড পেলেও গড় ফলাফলে ‘এ প্লাস’ কিন্তু মিস হয় না! এদিক থেকে বলা যায় পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাটা অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার চেয়েও উচ্চস্তরের পাবলিক পরীক্ষা!

দেখা যায়, পঞ্চম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী এক বা একাধিক (সর্বোচ্চ পাঁচ) বিষয়ে ৯০ বা ৯৫-এর উপরে নাম্বার পাবার পরও অন্য একটি বিষয়ে ৮০ থেকে একটু কম নাম্বার পাবার কারণে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়, অথচ কেউ কেউ সব বিষয়ে মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ নাম্বার পেয়েও ‘এ প্লাসে’ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। এটা কি মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের কোনো মাপকাঠি হলো? এসব কারণে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অযৌক্তিক কারণে অনাকাক্সিক্ষত ফলাফল করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেমন হতাশ হয়, তেমনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং অভিভাবকগণও যারপরনাই ব্যথিত ও হতাশ হন। পঞ্চম শ্রেণিতে অতিরিক্ত বিষয় বা গ্রুপিয়াল বিষয় না থাকলেও সমস্যাটির কোনো যৌক্তিক সমাধান কি নেই? উপযুক্ত কোনো সমাধান খুঁজে না পেলে অযৌক্তিক পরীক্ষাটি থেকে শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মুক্তি দেয়াই শ্রেয়।

পড়তে পারেন: প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করুন!

শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধের জন্য সরকার খুবই আন্তরিক। ঝরে পড়া রোধের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক শিক্ষায় পরিণত করেছে, বিনামূল্যে বই দিচ্ছে, উপবৃত্তি প্রদান করছে, অনেক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাও করেছে। তবু ঝরে পড়ার কিছু ক্ষেত্র থেকেই যাচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া এক শিক্ষার্থীর মা সেদিন আমাদের বিদ্যালয় অফিসে এসে কান্নামাখা কণ্ঠে বললেন, তার ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ না হবার কারণে তার স্বামী নাকি তাকে এবং তার ছেলেটিকে প্রহার করেছে। এরকম অপ্রীতিকর ঘটনার কথা আমরা আর কখনো শুনিনি। প্রমোশন না দিলে ছেলেটি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বখে যাবে এমন আশঙ্কা তার বাবা-মা উভয়ের। কিন্তু তিন তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া ছেলেটিকে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রমোশন দিলে সে সমাপনী পরীক্ষায়ও অনুত্তীর্ণ হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ সবার মেধা সমান হয় না প্রকৃতিগত কারণেই। আর শত ফিডব্যাকেও কিছু কিছু শিক্ষার্থীকে পাশের যোগ্য করে গড়ে তোলা যায় না। এজন্য সমস্যা উভয়ের- শিক্ষক এবং অভিভাবক। এরকম শিক্ষার্থীদের প্রমোশন না দিলে এরা অনেক সময় ঝরে পড়ে আবার প্রমোশন দিলে সমাপনী পরীক্ষায় এদের পাশ করানো নিয়ে শিক্ষকরা মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যান। অনেক বিদ্যালয়ে এরকম অতি দুর্বল শিক্ষার্থীদের তাই প্রমোশন না দেয়ার ঘটনাও ঘটে। সমাপনী পরীক্ষা না হলে এসব শিক্ষার্থী তাই অন্ততঃ আরেকটা শ্রেণিতে অধ্যয়নের সুযোগ পেতো।

পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে আরো কিছু কথা রয়েছে। অনেক অভিভাবক তাদের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া বাচ্চার উপর পড়ালেখার জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে থাকেন যাতে খেলার সময়টুকুতেও বাচ্চাটি স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে পারে না, সময়মতো ঘুমোতে যেতে পারে না। বাচ্চা যেনো জিপিএ-৫ পেতে পারে, সেজন্য তাকে একাধিক টিউটরের কাছে পড়তে দিয়ে অভিভাবকগণ একদিকে যেমন নিজেদের পকেট খালি করেন, অপরদিকে বাচ্চার সামান্য অবসর সময়টুকুও ছিনিয়ে নেন। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পঞ্চম শ্রেণির জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেন এবং মোটা অংকের কোচিং ফিও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেন। অনেক বিদ্যালয়ে আবার শিক্ষকরা পঞ্চম শ্রেণিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্যান্য শ্রেণিতে ঠিকমতো পাঠদান করতে পারেন না। অধিক যোগ্য শিক্ষকরা পঞ্চম শ্রেণিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সমাপনী পরীক্ষাই শিশুদেরকে সরকার-নির্ধারিত বিনামূল্যে সরবরাহকৃত ছয়টি পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিশালাকৃতির দামী গাইডবই কিনতে এবং বহন করতে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছে। শুধু গাইড নয়, ‘মডেল টেস্ট’, ‘টেস্ট পের্পাস’ এরকম অনেক অতিরিক্ত বই কিনতেও অনেকটা বাধ্য করছে এ সমাপনী পরীক্ষা। সমাপনী পরীক্ষার জন্য প্রশ্নকাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়, শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই অধ্যয়ন করে সমাপনী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার অবকাশ থাকে না। পাঠ্যবইবহির্ভূত প্রশ্নগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য এবং সেগুলো চর্চা করার জন্য তারা গাইড-মডেল টেস্ট এসবের দ্বারস্থ হতেই হয়।

আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার কেন্দ্র সাধারণতঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কোনো উচ্চ বিদ্যালয়ে হয়ে থাকে। দেখা যায় অনেক কেন্দ্রে স্বাগতিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের (যিনি কেন্দ্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন) যোগসাজশে নিজেদের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে পরিচিত কক্ষ-পর্যবেক্ষক দিয়ে থাকেন এবং নিজেদের বাচ্চাদের ভালো ফলাফল নিশ্চিত করেন, যা প্রতিযোগিতায় পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে দেয়। সেক্ষেত্রে পার্শ¦বর্তী বিদ্যালয়গুলোর ফলাফল স্বাগতিক বিদ্যালয়ের অস্বাভাবিক ফলাফলের তুলনায় ম্লান হয়ে যাওয়ায় সেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ব্যথিত এবং হতাশ হন। ২০১৫ সালে একটা কেন্দ্রে এমনও হয়েছে বলে জানা যায়, একজন কক্ষ-পর্যবেক্ষককে পরপর চার দিন একই কক্ষে (স্বাগতিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কক্ষ) দেখে কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা চতুর্থদিন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কক্ষে নিয়ে যান। এছাড়া মফস্বলে বা গ্রামাঞ্চলে অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা একজন অন্যজন থেকে দেখে দেখে পরীক্ষা দেয়ার জন্য সুযোগ করে দেয়া হয়, যাতে কেউ অন্ততঃ ফেল না করে। কোথাও কোথাও আবার কক্ষ পর্যবেক্ষকগণ অতি উৎসাহী হয়ে পরীক্ষার্থীদেরকে ‘পাস নাম্বার’ বলে দেয়ার কথাও শোনা যায়। তাছাড়া পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নেও ছাড় এবং শিথিলতার জন্য পরীক্ষকদের জন্য ‘উপর’ থেকে নানারকম লিখিত ও মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে, যা এমনকি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বেলায়ও হয় না। কিছুদিন আগে মিডিয়ায় বেশ সাড়া জাগানো একটা গবেষণায়ও এমন চমকপ্রদ কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। এমন ঢিলেঢালা ‘পাবলিক পরীক্ষা’ চালু রাখার কী প্রয়োজন?

নতুন শিক্ষা আইনে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাই হবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পঞ্চম শ্রেণিতে বর্তমানে প্রচলিত এই সমাপনী পরীক্ষা আর থাকছে না। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিককে অষ্টম শ্রেনিতে উন্নীত করার জন্য সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থবহ এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে। প্রাথমিককে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়া যখন চলছেই তখন পঞ্চম শ্রেণির এই সমাপনী পরীক্ষা চালু রেখে আর কী লাভ? ২০১৬ সাল থেকেই পরীক্ষাটি বন্ধ করে দেয়া হোক। অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট যেহেতু অনেক সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, তাই অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষাটি চলমান রাখা যেতে পারে।

লেখাটি দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয় ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে ‘‘পঞ্চম শ্রেণিতে ‘পাবলিক পরীক্ষা’ আর নয়’’ শিরোনামে।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স কেন উন্মুক্ত রাখা উচিত?

চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে আমাদের দেশে অনেক আগ থেকে আন্দোলন চলছে। লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু এখনও এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নির্ধারিত। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করা যাবে, ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে একজন শিক্ষার্থী যত মেধাবী আর উচ্চশিক্ষিতই হোক না কেন, সরকারি চাকরিতে তার আর আবেদন করারই যোগ্যতা নেই! যুগের পর যুগ ধরে চালু থাকা এ নিয়ম পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দেশের মানুষ নানাভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। কেউ পাত্তা দিচ্ছে না তাদের যৌক্তিক দাবিকে।

৩০ বছর বয়স হয়ে গেলেই কি একজন মানুষের চাকরি করার সব কর্মশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়? ৫৯ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও আমাদের দেশের অনেক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নতুন করে চাকরি নিতে দেখা যায়। ৫৯ বছর বয়স হয়ে গেলেও, চাকরি না করলেও চলে, এমন অসংখ্য মানুষ যে দেশে নতুন কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে, সে দেশে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া একজন উচ্চশিক্ষিত বেকারের, যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে ভালো একটা চাকরির স্বপ্নে, তার জন্য শুধু ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়ার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে!

আরো পড়ুন: কোটাপ্রথা কেন বাতিল করা উচিত?

সেশান জট, নানারকম অবাঞ্চিত ছুটি, হরতাল, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনির্দিষ্টকালের জন্য ভার্সিটি বন্ধ, যেকোনো অজুহাতে পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন যে দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, সে দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমিত করার মানে যে মেধাবী বা উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের চাকরি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, কথাটি বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

“...অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীরা জানেই না ‘সেশন জট’ কাকে বলে, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা’ বলতে কী বোঝায় বা কিভাবে করতে হয় ‘পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন’।” কথাগুলো অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রদীপ দেব নামে এক বাংলাদেশীর লেখা ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ নামক একটি বই থেকে মীরা প্রকাশন, পৃ-৮৪ নেয়া। অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনো উন্নত দেশ, যেখানে ২৫-২৬ বছর বয়সে অনেকে শুধু মাস্টার্স নয়, পিএইচডিও সম্পন্ন করে ফেলে, সেসব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০-এর মধ্যে সীমিত করলে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা কাক্সিক্ষত চাকরিতে প্রবেশে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকের স্নাতকোত্তর শেষ হতে না হতে বয়স ৩০-এর কাছাকাছি চলে যায়।

মালেশিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মদ নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প ৭০ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ৬০ বছর বয়সে বিশ্বের একটি উন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে বাধাগ্রস্ত হননি। আমাদের দেশেও অনেক এমপি-মন্ত্রী আছেন, যারা ৬০-৭০ বা তার চেয়েও বেশি বয়সে এসব পদে নির্বাচিত হয়েছেন। কী অসুবিধা? কোনো অসুবিধা যদি না থাকে, তাহলে একজন শিক্ষিত তরুণ বেকার তার ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য একটি চাকরি নিতে বয়সের বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি হবে কেন? যতদিন মানুষের কর্মশক্তি থাকে, তত দিন মানুষ কাজ করবে, এটাই হওয়া উচিত নিয়ম। কিন্তু অল্প বয়সেই মানুষকে অকর্মণ্য, অযোগ্য, আনফিট গণ্য করে মানুষের জীবনকে হতাশাগ্রস্ত করার কী প্রয়োজন আছে! এতে তো হাতে ধরে দেশে বেকার সংখ্যা বাড়ানো হয়। ৩০ বছর বয়সী একজন তরুণকে চাকরিতে প্রবেশের আগেই অযোগ্যের কাতারে ফেলে দেয়াটা কতটুকু সঠিক, কতটুকু মানবিক, তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।

আমাদের দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩০ বছর বয়সের পরও চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ থাকে। অন্য সব প্রতিষ্ঠানে যখন সম্ভব, সরকারি চাকরিতে আরো বেশি সম্ভব হওয়া দরকার। কারণ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ একটি সরকারি চাকরি। বিশ্বের অনেক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। কানাডিয়ান সিভিল সার্ভিসে প্রবেশের বয়স ২০ থেকে ৬০ বছর, শ্রীলঙ্কায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২০ থেকে ৫৯ বছর। বিশ্বের আরো অনেক দেশে এরকম চাকরিতে প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সংবাদগুলো অবশ্যই অবাক করার মতো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাকরিতে প্রবেশের এ অবাধ সুযোগই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক।

[লেখাটি দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত হয় ০৪ জুন ২০১৮।]

বেশি আরাম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর


মানুষ এখন অতিরিক্ত আরামপ্রিয় হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল মানুষ যখন আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যায়াম করতো না বটে, তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে মানুষের অনেক বেশি ব্যায়াম হয়ে যেতো। এখন অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার পর ডাক্তারের পরামর্শে নয়, বলতে গেলে ডাক্তারের নির্দেশে যে পরিমাণ ব্যায়াম করে থাকে, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ব্যায়াম হতো। কিভাবে? হ্যাঁ, পরিশ্রমের কাজ করে করে। মানুষ আগে বেশি পরিশ্রমী ছিল। তাছাড়া অনেক রকম পরিশ্রম করতে মানুষ বাধ্যও হতো। যেমন : কৃষিসংক্রান্ত নানারকম কাজ করা, হেঁটে হেঁটে দূরের পথ পাড়ি দেয়া, সাংসারিক বিভিন্ন রকম পরিশ্রমের কাজ করা, মহিলাদের ঢেঁকিতে বিভিন্ন কাজ করা, গৃহস্থলীর অনেক শ্রমসাধ্য কাজ করা ইত্যাদি। এক কথায় আগেকার দিনে মানুষের শারীরিক শ্রমের কাজ ছিল বেশি। মানুষ খেতোও বেশি, পরিশ্রমও করতো বেশি। কিন্তু এখন মানুষের পরিশ্রমের কাজ অনেক কমে গেছে। পরিশ্রমের কাজ কমে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষ অলসও হয়ে গেছে। দূরের পথ পাড়ি দেয়ার জন্য মানুষ এখন হাঁটতে হয় না, হরেক রকম যানবাহন মানুষকে বসিয়ে বসিয়ে দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে। দূরের পথ নয়, সামান্য পথও মানুষ এখন হেঁটে যেতে চায় না। কয়েকমাস আগে একদিন আমি ট্যাক্সিতে করে বাসায় ফিরছিলাম। আমার পাশে একটা সিট খালি ছিল। পথে একজন ট্যাক্সিতে উঠলো। এক কিলোমিটার নয়, আধা কিলোমিটার যেতে না যেতেই তার গন্তব্য এসে গেলো! কেনো, এ সামান্য পথ কি তিনি হেঁটে ঁেহটে আসতে পারতেন না? এটা আমাদের আলসেমী বা আরামপ্রিয় হবার চরম বহিঃপ্রকাশ।

মহিলাদের এখন আর ঢেঁকিতে কাজ করতে হয় না, মেশিনেই সবকিছু হয়। আর ঢেঁকি তো ইতোমধ্যে যাদুঘরের আবশ্যকীয় উপাদানই হয়ে গেছে। জামাকাপড় এখন ধোয়া হয় ওয়াশিং মেশিনে। শুধু কাজ হচ্ছে বাজার থেকে কিনে আনবে আর গ্যাসের অটো চুলায় রান্না করে করে খাবে। বাজার থেকে আগে পুরুষরা বাজারের ব্যাগটাও হাতে বহন করে নিয়ে আসতো। কিছু পরিশ্রম হতো, ঘাম ঝরতো। আর এখন বাজারের ব্যাগ হাতে করে নিয়ে আসা দূরের কথা, অফিসের সামান্য পথও রিকশা বা গাড়িতে করে না গেলে প্রেষ্টিজ যেনো পুরোই পাংচার হয়ে যায়! যেসব বিল্ডিংয়ে লিফট আছে, সেসব বিল্ডিংয়েও মাত্র এক ফ্লোর উপরে বা নিচে যেতেও আমরা সিঁড়ি ব্যবহার না করে লিফট ব্যবহার করি!

পুরুষ-মহিলা সবাই পরিশ্রমের কাজ কমিয়ে দিয়ে আরামের জীবন বেছে নেয়ার এবং বসে বসে খাওয়ার পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। বেশি বেশি মুটিয়ে যাচ্ছি আর অল্প বয়সেই শরীরে বাসা বাঁধছে বিপজ্জনক সব রোগ। যেমন : ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্ট ব্লক বা হার্ট অ্যাটাক। রোগগুলোতে যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন, তারা জানেন জীবনটা তাদের কাছে কতো জটিল মনে হচ্ছে। চলাফেরায় সাবধান থাকতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, খাওয়া-দাওয়ায় নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, পছন্দনীয় খাবার মনভরে খাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে আর ওষুধ খেয়ে যেতে হচ্ছে। এ এক বড় দুর্বিষহ জীবন।

আরামপ্রিয় হয়ে আমাদের সুস্থ-সবল জীবন এখন ব্যারামে ব্যারামে বিধ্বস্ত। ঘামঝরানো শ্রম ছেড়ে দিয়ে আমরা এখন ভয়াবহ সব রোগে জর্জরিত। আমাদের অনেকের এখনো হুঁশ হয়নি। আমরা অনেকে এখনো মনে করি ডায়াবেটিস হচ্ছে বংশানুক্রমিক রোগ। বংশের কারো থাকলে নিজের এ রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের এ ধারণা কিভাবে সৃষ্টি হলো, বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। আজ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে শতকরা কয়জনের এ রোগ ছিলো, আর এখন শতকরা কয়জনের এ রোগ, তা একটু পরখ করলেই দেখা যাবে, উত্তরপুরুষদের এ রোগ বেশি; পূর্বপুরুষদের এ রোগ ছিলোই না বলতে গেলে। তাহলে উত্তরপুরুষদের কোত্থেকে এ রোগ ব্যাপকাকারে আক্রমণ করলো? শুধুমাত্র পরিশ্রম না করে বসে বসে খাওয়ার প্রবণতাই এ রোগ সৃষ্টি হবার জন্য প্রধানত দায়ী; বংশের কারো থাক বা না থাক।

পরিশ্রম না করলে যে হার্টের রোগ হবার সম্ভাবনাও বেশি, তা নিয়েও একটু কথা বলা যাক। আমরা জানি, সাইকেল চালানোতেও বেশ পরিশ্রম হয়। কিন্তু সাইকেল চালানোর উপকারিতা-অপকারিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক অজ্ঞতা কাজ করে। আমরা অনেকেই মনে করি সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই মনে করি সাইকেল বেশি চালালে হার্টের সমস্যা হয় বা হার্ট দুর্বল হয়ে যায়। আমি ছোটবেলা থেকে অনেক মানুষের মুখেই এমন কথা শুনেছি। কখনো বিষয়টা নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করিনি। কয়েকমাস আগে একদিন আমি কর্মস্থল থেকে ফিরছিলাম। পথে আমার বন্ধু স্থানীয় এক লোকের সাথে দেখা হলো। কথায় কথায় তিনি আমাকে বললেন, ‘ভাই, সাইকেল না চালানোই ভালো। কারণ সাইকেল চালালে হার্টের সমস্যা হয়।’ তার কথা শুনে আমি সামান্য ভাবলাম। ভেবে তাকে বিনয়ের সাথে বললাম, ‘ভাই, সাইকেল চালানোর কারণে হার্টের সমস্যা হয়েছে, আপনি দেখেছেন, এমন মাত্র একটা লোক আমাকে দেখিয়ে দিন, বেশি নয়।’ আমার কথার কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তাহলে তিনি কথাটি বললেন কেনো? তিনি বলেছেন, কারণ সবাই এমন কথাই বলে। কিন্তু এটার কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের দেশে আমরা শুধু সাইকেল চালানোর অপকারিতার কথা বলে বেড়াই। চীন বা জাপানে মানুষ শুধু সাইকেল চালানোর উপকারিতার কথাই জানে। এজন্য তারা বেশি বেশি সাইকেল চালায়। ‘জাপান কাহিনী’ নামক একটা বইতে দেখলাম, জাপানে নাকি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সপ্তম শ্রেণি থেকে সকল শিক্ষার্থীকে সাইকেল চালিয়ে প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়, তাদের বাবা যতো বড় ধনী হোক না কেনো। সাইকেল বেশি বেশি চালায় বলেই এসব দেশের লোক মুটিয়ে যায় না, এদের শারীরিক ফিটনেসও দীর্ঘদিন ঠিক থাকে, এদের গড় আয়ুও সঙ্গত কারণেই বেশি। আর আমরা সাইকেল চালানোকে নিরুৎসাহিত করি বলে বেশি বেশি মুটিয়ে যাচ্ছি, বিভিন্ন রোগে অল্প বয়সে আক্রান্ত হয়ে মারাও যাচ্ছি। আমাদের দেশে এখন তো রিকশাগুলোতে মটর লাগিয়ে চালানো হয়। কিন্তু এর আগে বছরের পর বছর মানুষ পায়ে চেপেই রিকশা চালাতো। অন্তত বিশ বছর এভাবে রিকশা চালিয়েছে, এমন লোকের হার্টের সমস্যা হবার ঘটনা নেই বললেই চলে। কোনো? কারণ রিকশা চালাতে যথেষ্ট ঘামঝরানো শ্রম হয়। এই ঘামঝরানো শ্রম আমরা যতো বেশি করবো, আমাদের হার্ট ভালো থাকার সম্ভাবনা ততো বৃদ্ধি পাবে।

প্রেসারের অন্যতম কারণও আমার মনে হয় পরিশ্রম না করে বসে বসে খাওয়া। অধিকাংশ প্রেসারের রোগীর মধ্যে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা। আর যেসব লোক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে, তাদের ডায়াবেটিস, হার্ট উইকনেস যেমন খুব একটা হয় না, প্রেসারও তেমন একটা হয় না। এজন্য যারা রোগগুলো থেকে এখনও মুক্ত আছেন, তাদের উচিত বেশি বেশি কায়িক শ্রমের কাজ করা। শ্রম মানুষের শরীরকে সুঠাম রাখে, রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ রাখে। মনে রাখতে হবে, কায়িক শ্রম বলতে বুঝায় শরীর থেকে ঘাম বের হয় এমন কাজ করা। আপনি আপনার অফিসে বসে আছেন, বিদ্যুৎ নেই বলে আপনার শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই কোনো পরিশ্রমের কাজ নয়! আপনি কিভাবে নিয়মিত পরিশ্রম করবেন, আপনিই ঠিক করে নিন। অফিস যদি দু’তিন কিলোমিটারের মধ্যে হয়, সম্ভব হলে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে যাতায়াত করুন, না হয় সাইকেল চালিয়ে। বাজারের ব্যাগটি অতিরিক্ত ওজন না হলে হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটেই বাসায় নিয়ে আসুন। মনে রাখবেন, প্রেষ্টিজ রক্ষা করা আপনার স্বাস্থ্য রক্ষার চেয়ে অধিক মূল্যবান নয়। শেষে একটি সুখবর দিয়ে লেখা শেষ করছি। বসে বসে বেশি খেলে আপনি রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শেষে খেতেই পারবেন না। আর পরিশ্রম করে বেশি বেশি খেলেও আপনার শরীরে বিপজ্জনক কোনো রোগ বাসা বাঁধবে না। আপনি খেয়ে যেতে পারবেন দীর্ঘদিন, নিশ্চিন্তে। সুতরাং বেশি বেশি খাওয়ার জন্য বেশি বেশি পরিশ্রম করুন!

লেখাটি দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয় ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬।


এমএস ওয়ার্ডে বা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে গুণ ও ভাগ (×, ÷) চিহ্ন

মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে যোগ ও বিয়োগ এসব চিহ্ন টাইপ করার জন্য কীবোর্ডেই কী দেয়া আছে। কিন্তু গুণ ও ভাগ চিহ্ন ( × ও ÷) সরাসরি টাইপ করার জন্য কোনো কী নেই। দেয়া আছে * এবং / এই দু’টি কী।

এইজন্য গণিতের কোনো লেখা টাইপ করতে গিয়ে আমাদেরকে বেকায়দায় পড়তে হয়। ইনসার্টে প্রবেশ করতে হয়। ইনসার্টে প্রবেশ না করেই শুধু কীবোর্ড দিয়ে এই চিহ্ন দু’টি টাইপ করতে হলে আগে আপনাকে কীবোর্ডে ইংরেজি টাইপ করার অপশনগুলো সচল করতে হবে। Control+Alter+B দিয়ে ইংরেজি টাইপ করার অপশন চালুর পাশাপাশি ফন্টে গিয়েও Times New Roman চালু করে দিতে হবে।

এরপর গুণ চিহ্নের জন্য কি বোর্ডে Alt চেপে ধরে পর পর টাইপ করতে হবে 0215 সংখ্যাগুলো। তাহলেই ওয়ার্ডে পেইজে টাইপ হয়ে যাবে × চিহ্ন।

একইভাবে ভাগ চিহ্নের জন্য কি বোর্ডে Alt চেপে ধরে পর পর টাইপ করতে হবে 0247 সংখ্যাগুলো। তাহলেই ওয়ার্ডের পেইজে টাইপ হয়ে যাবে ÷ চিহ্ন।

একবার প্র্যাক্টিস করে দেখুন।

পড়তে পারেন একটি বিশেষ নিবন্ধ: ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা বিজ্ঞান-সৃষ্ট ভুত!

প্রথমবার গুণ বা ভাগ কোনো চিহ্ন টাইপ করার পর চিহ্নগুলো কপি পেস্ট করেও পরে একই ডকুমেন্টে ব্যবহার করতে পারবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

আমার দু’টি বই পড়তে পারবেন অনলাইনেই।

১. দীর্ঘজীবন লাভের উপায়

লিঙ্ক: https://waytogainlonglife.blogspot.com/2019/03/blog-post.html

২. করোনাভাইরাস কি সত্যিই কোনো ভাইরাস?

[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]

লিঙ্ক: https://coronavirusnurahmed.blogspot.com/2020/06/blog-post.html

৩. আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন?

লিঙ্ক: https://biliefingod.blogspot.com/2020/08/blog-post.html