ধূমপানের ক্ষতির কোনো বাস্তব ঘটনা কারো জানা আছে?
আমাদের বাড়ির দক্ষিণের বাড়ির কাজী জাহাঙ্গীর নামক একজন লোকের সাথে একদিন ধূমপান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা হল। তিনি বললেন, ‘ধূমপানে কার কী ক্ষতি হয়েছে, আমি জানি না। ধূমপানে কোনো ক্ষতি হয় বলেও আমি মনে করি না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি একটা ঘটনা বললেন। বললেন, ‘কিছুদিন আগে চন্দ্রগঞ্জ একটি হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের সাথে দেখা করি, যিনি একজন প্রফেসরও ছিলেন। আমার সমস্যাগুলো শুনে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি ধূমপান করেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ স্যার, আমি ধূমপান করি।’ তিনি বললেন, ‘আপনি আর ধূমপান করতে পারবেন না।’ আমি বললাম, ‘স্যার, আপনি আপনার এই চিকিৎসা পেশায় কতদিন ধরে আছেন?’ তিনি বললেন, ‘ত্রিশ বছরের বেশি।’ আমি বললাম, ‘আপনি এ পেশা ছেড়ে দিন।’ তিনি বললেন, ‘এটা কিভাবে সম্ভব?’ আমি বললাম, ‘চল্লিশ বছর ধরে আমি যেটা (ধূমপান) করে আসছি, তা কি একদিনে বন্ধ করা সম্ভব?’ চিকিৎসক তখন বললেন, ‘ঠিক আছে। তাহলে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিন।’ তিনি বললেন, ‘এবারের কথাটি রাখা যায়।’
২৩ এপ্রিল ২০১৮। আমাদের নিকটস্থ বাজারের একটি দোকান থেকে মুরগী কিনছি। দোকানদার আমার জন্য মুরগী জবাই করে ড্রেসিং করে দিচ্ছেন আর কথা বলছেন দোকানে উপবিষ্ট একজন বয়স্ক লোকের সাথে। লোকটির বয়স হবে ৭০/৭৫ এর মতো। দোকানদার লোকটিকে তার পরিচিত একজন লোকের অপারেশনের কথা জানাচ্ছেন, অপারেশন করতে নাকি তার জন্য চার ব্যাগ রক্ত লেগেছে। আমি কথাটা শুনে সামান্য কৌতুহলবশত জানতে চাইলাম, ‘লোকটিকে কেন অপারেশন করা হয়েছে?’ দোকানদার বললো, ‘তার পিত্তথলীতে নাকি ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া গেছে।’
ক্যান্সারের কথা শুনে আমি এবার প্রশ্ন করলাম, ‘লোকটি ধূমপান করতো নাকি?’ আমার প্রশ্ন শুনে দোকানদার কিছু বলার আগেই দোকানে উপবিষ্ট ঐ লোকটি উত্তর দিলেন এরকম, ‘সবাই ধূমপানের অনেক ক্ষতির কথা বলে। আসলে কিন্তু ধূমপান করলে মানুষের এসব কোনো ক্ষতি হয় না। এসব কথা ভুয়া।’ দেখলাম লোকটা নিজের মতামত প্রকাশে বেশ সাহসী। তার কাছ থেকে আমার কিছু শেখার আছে। তাকে আরেকটু বাজিয়ে দেখলাম। তিনি পরে বললেন, ‘আমার বাবা কখনো ধূমপান করতেন না। তবু যক্ষায় ভুগে তিনি মারা গেছেন। অথচ সবাই যক্ষার জন্য ধূমপানকে দায়ী করে।’ তাঁর কথার মাঝখানে আমি বললাম, ‘আমার নানা কখনো ধূমপান করতেন না। অথচ হাঁপানীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। শেষে তাঁর ক্যান্সারও দেখা দেয় এবং ক্যান্সারেই তিনি মারা যান। অথচ ছোটকাল থেকে শুনে আসছি ধূমপানে নাকি মানুষের হাঁপানি হয়।’ লোকটি শেষে তাঁর নিজ সম্পর্কে একটা ছোট গল্প বললেন, ‘১৮ বছরের মতো আগে একবার আমি শারীরিক এক সমস্যায় ভালো একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। চিকিৎসক আমাকে এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ধূমপান করেন?’ আমি স্বীকার করলাম। চিকিৎসক তখন বললেন, ‘আপনাকে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।’ আমি চিকিৎসককে বললাম, ‘স্যার, আমি ধূমপান ছাড়তে পারবো না। ছাড়লে আমাকে ধূমপান করতে না পারার একটি অতৃপ্তি নিয়ে মরতে হবে।’ আমি দোকান থেকে চলে আসার সময় লোকটির পরিচয় নিলাম। লোকটি হচ্ছে দোকানদারের চাচা।
আমাদের বিদ্যালয়ের একজন মহিলা শিক্ষকের স্বামী সৌদি আরবে কর্মরত। ধূমপানের কথা উঠলে তাঁর স্বামী নাকি মাঝে মাঝে তাঁকে বলেন, ‘সৌদি আরবে বসবাসরত ফিলিপাইনের অনেক মহিলা অহরহ ধূমপান করেন। কই, তাদের তো কোনো ক্ষতি হতে দেখি না!’
আরেকটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। গত ২৬ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার আমাদের দত্তপাড়া বাজারে একটি মুদি দোকানে গেলাম দু’টি জিনিস কেনার জন্য। দোকানদার আমাকে যখন জিনিসগুলো মেপে দিচ্ছেন, তখন পাশের চা দোকানী এলো তাঁর জন্য চা নিয়ে। চা দিয়ে যাবার সময় মুদি দোকানী ওই চা দোকানীকে বললেন, ‘একটি সিগারেটও নিয়ে আসবেন।
আমি এরপর মুদি দোকানীকে বললাম, ভাই, সিগারেট খাচ্ছেন কয় বছর ধরে?” তিনি বললেন, “দশ-বারো বছর হবে।
আমি বললাম, ‘এ পর্যন্ত কোনো ক্ষতি হয়েছে?’
তিনি বললেন, ‘না, এখনো কোনো ক্ষতি হয়নি।’
আমি বললাম, ‘ধূমপান করার কারণে কোনো ক্ষতি হয়েছে, এমন কাউকে দেখেছেন?’
তিনি বললেন, ‘ক্ষতি তো অবশ্যই হয়।’
আমি বললাম, ‘ক্ষতি হয়, ঠিক আছে। তবে আপনি কি কাউকে দেখেছেন, ধূমপান করার কারণে তার কোনো ক্ষতি হতে?’
তিনি বললেন, ‘না। তবে দেখেন না, সিগারেটের প্যাকেটে অনেক ক্ষতির কথা লেখা থাকে? ক্ষতি নিশ্চয় হয়।’
আমি বললাম, ‘লেখা থাকে, ঠিক আছে এবং সবাইকে বলতে শুনি, ধূমপান করলে এই ক্ষতি-ওই ক্ষতি হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তবে কারো ধূমপান করে কোনো ক্ষতি হতে কখনো দেখেছেন?’
তিনি বললেন, ‘দেখিনি।’
আমি বললাম, ‘আমিও দেখিনি। কিন্তু চারদিকে শুধু ধূমপানে ক্যান্সার হয়, এই হয়-ওই হয় বলতে শুনি। বাস্তবে কিন্তু ধূমপানে কারো ক্ষতি হতে দেখা যায় না। শুধু অর্থ অপচয় আর কারো কারো মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া ছাড়া ধূমপানে তেমন কোনো ক্ষতি হতে দেখা যায় না। মদপানে ক্ষতি হতে আমরা অহরহ দেখি। কিন্তু ধূমপানে ক্ষতি হবার কথা একটা বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার।’
শুধু এ মুদি দোকানীর সাথে নয়, আমি আরো অনেকের সাথে অনেক সময় বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি। দেখেছি, খোদ অনেক ধূমপায়ী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ধূমপান ক্ষতিকর। কিন্তু যখন বলি, ‘এ পর্যন্ত আপনার কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা?’ তখন বলেন, ‘আমার এখনো কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে হতে পারে।’ আবার যখন প্রশ্ন করি, ‘আপনি কি এমন কোনো লোককে দেখেছেন, ধূমপান করার কারণে তার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়েছে?’ তখন দেখা যায়, ধূমপানের কারণে ক্ষতির শিকার হয়েছেন, এমন বাস্তব কোনো লোকের উদাহরণ তেমন কেউই খুঁজে পাচ্ছেন না।
ধূমপান বা তামাক সেবনে যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্ট্রোক হয় না, তা স্পষ্ট করার জন্য অনেক কথা বলা হয়েছে। তবে এসব ভয়ঙ্কর রোগের মত ক্যান্সারের জন্যও যে ধূমপান বা তামাক সেবন দায়ী নয়, তা স্পষ্ট করা সত্যিই অনেক কঠিন। এ অনুচ্ছেদে এ পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার বাস্তব যে উদাহরণগুলো দেয়া হয়েছে, সে উদাহরণগুলোর সাথে ধূমপান বা তামাক সেবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেগুলোতে প্রমাণিত হয়, ধূমপান ছাড়াও ক্যান্সার হতে পারে।
ক্যান্সারের কোনো কারণ কি এখনো আবিষ্কৃত হয়েছে?
প্রশ্ন হচ্ছে, চিকিৎসা বিজ্ঞান যখন এখনও ক্যান্সারের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি এবং এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত যে, ক্যান্সারের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন ধূমপান বা তামাক সেবনকে ক্যান্সারের জন্য দোষারোপ করা কি ঠিক? ‘বাংলা ট্রিবিউন’ একটি অনলাইন পত্রিকায় ০৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদ দেখলাম, যার শিরোনাম: ‘ধূমপানে ক্যান্সার: প্রমাণ ছাড়া মানতে নারাজ ভারতের সর্বোচ্চ আদালত’। সংবাদটিতে বলা হয়, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি প্রশ্ন দেশটির অনেক মানুষকে অবাক করেছে। মঙ্গলবার একটি সিগারেটের রঙ্গিন প্যাকেট নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে অনাকর্ষণীয় করার এক আবেদনের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীর সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জানতে চান, ধূমপানের কারণে যে ক্যান্সার হয়, এর পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে কিনা। প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুর ও ইউ ইউ ললিত কাউন্সেল ঐশ্বওয়ারিয়া ভাটির কাছে জানতে চান, এটা কি সম্ভব যে, ধূমপানের কারণে ক্যান্সার হয়? ধূমপানে আসক্ত এলাহাবাদের এক অ্যাডভোকেট আদালতে এ আবেদন করেন। বর্তমানে তিনি জিহ্বা ও মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের বিচারপতিরা বলেন, এটা কিভাবে প্রমাণ করবেন? অনেক অধূমপায়ী আছেন যাদের ক্যান্সার হয়েছে। এছাড়া অনেক ধূমপায়ী আছেন যারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচেছিলেন।...’ [http://www.banglatribune.com/foreign/news/85161]
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মানুষ কমবেশ ধূমপান বা তামাক সেবন করে। অল্প কিছু দেশ আছে, যেখানে খুব কম মানুষ ধূমপান করে। বিশ্বের সব দেশে যদি শুধু ধূমপায়ী ও তামাক সেবনকারীরাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো এবং অধূমপায়ী ও তামাক সেবনমুক্ত মানুষগুলো ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতো, তাহলে নির্দ্বিধায় ধূমপান ও তামাক সেবনকে ক্যান্সারের জন্য একতরফাভাবে দায়ী করা যেতো। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত কোনো লোককে যখন দেখা যায়, সে ধূমপায়ী বা তামাকসেবী, তখন আর কিছু চিন্তা না করে ধূমপানকে দোষারোপ করাটা বিশ্বব্যাপী বেশ সাধারণ একটা প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এসব রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক যদি দেখেন, এরা ধূমপায়ী বা তামাকসেবী, তখন এদেরকে ধূমপান বা তামাক সেবন পুরোপুরি ছেড়ে দিতে বলেন। অথচ একই রোগে আক্রান্ত যারা ধূমপানে অভ্যস্ত নয়, তাদেরকে ধূমপান নয়, অন্য বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেন। অর্থাৎ রোগ একই, কারণ একেক জনের ক্ষেত্রে একেকটা! যদি কেউ ধূমপান করে, তাহলে তার রোগাক্রান্ত হবার জন্য আর কিছু নয়, ধূমপানকেই দায়ী করা হয় চোখ বন্ধ করে, আর ধূমপান না করলে অন্যটা দায়ী!
যে জনগোষ্ঠীর মানুষ ধূমপান করে না, তারা যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতো, তাহলে ধূমপানকে ক্যান্সারের কারণ ভাবতে বেশ একটা চিন্তা করতে হতো না। ধূমপান ছাড়াও অন্য অনেক অজ্ঞাত কারণে অসংখ্য মানুষ বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ধূমপানে আসক্ত এলাহাবাদের যে অ্যাডভোকেট ভারতের আদালতে ধূমপান সংক্রান্ত একটি বিষয়ে আবেদন করেছিলেন, তিনি ধূমপানের কারণেই যে জিহ্বা ও মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? টুথপেস্টের কারণেও অনেকের জিহ্বা ও মুখের ক্ষতি হতে পারে, কথাটা চিকিৎসা বিজ্ঞানই বলে। তাছাড়া ক্যান্সার শরীরের যে কোনো জায়গায় সৃষ্টি হতে পারে। ধূমপান না করলেও ক্যান্সার হয়তো তাকে ঠিকই আক্রমণ করতো।
নির্দিষ্ট করে ক্যান্সারের কোনো কারণ এখনও কেউ খুঁজে পায়নি। American Cancer Society’র অনলাইনে What is Cancer? শিরোনামের আরেকটি নিবন্ধের Why did this happen to me? উপশিরোনামে বলা হয়েছে, ‘‘People with cancer often ask, “What did I do wrong?” or “Why me?” Doctors don’t know for sure what causes cancer. When doctors can’t give a cause, people may come up with their own ideas about why it happened.
Some people think they’re being punished for something they did or didn’t do in the past. Most people wonder if they did something to cause the cancer.
If you’re having these feelings, you’re not alone. Thoughts and beliefs like this are common for people with cancer. You need to know that cancer is not a punishment for your past actions. Try to not blame yourself or focus on looking for ways you might have prevented cancer. Cancer is not your fault, and there’s almost never a way to find out what caused it. Instead, focus on taking good care of yourself now.’’ [ https://www.cancer.org/cancer/cancer-basics/what-is-cancer.html ]
এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘‘Doctors don’t know for sure what causes cancer. When doctors can’t give a cause, people may come up with their own ideas about why it happened.’’ অবাক লাগে, তবু মানুষ এটাসেটাকে ক্যান্সারের কারণ বলে প্রচার করে কিভাবে!
ধূমপানের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার সঠিক পন্থা
ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০০ জন লোকের উপর সমীক্ষা চালানোর কথা আমি একটু আগে লিখেছি। কথাটি লেখার দু’একদিন পর এক দরকারে আমাকে একটু অনলাইনের তথ্য জগতে প্রবেশ করতে হলো। সেখানে গত জানুয়ারিতে বৃটেনে পরিচালিত ধূমপান-সম্পর্কিত একটি গবেষণার ফলাফল দেখে চমকে যাই। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে) কর্তৃক পরিচালিত গবেষণাটির ফলাফল ‘ÔOne cigarette a day increases heart disease and stroke risk’’ শিরোনামে ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের BBC News -এ প্রকাশিত হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটির চুম্বকাংশ এখানে উল্লেখ করা হল।
‘‘Smokers need to quit cigarettes rather than cut back on them to significantly lower their risk of heart disease and stroke, a large BMJ study suggests.
People who smoked even one cigarette a day were still about 50% more likely to develop heart disease and 30% more likely to have a stroke than people who had never smoked, researchers said.
They said it showed there was no safe level of smoking for such diseases.
But an expert said people who cut down were more likely to stop. Cardiovascular disease, not cancer, is the greatest mortality risk for smoking, causing about 48% of smoking-related premature deaths.
While the percentage of adults in the UK who smoked had been falling, the proportion of people who smoked one to five cigarettes a day had been rising steadily, researchers said.
Their analysis of 141 studies, published in the BMJ, indicates a 20-a-day habit would cause seven heart attacks or strokes in a group of 100 middle-aged people. ...’’ [ http://www.bbc.com/news/health-42802191 ]
বিবিসি নিউজে ২৫ জানুয়ারির ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের দৈনিক ইত্তেফাক পরদিন ২৬ জানুয়ারি ‘ধূমপান কমিয়ে লাভ নেই, বৃটেনে নতুন গবেষণা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ধূমপানে ক্যান্সারের ঝুঁকি যে কম, এ গবেষণা তা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দু’ভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে। প্রথমে সরাসরি বলেছে, ‘ধূমপানের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ক্যান্সার নয়, বরং হৃদরোগ।’পরে ১০০ জন ধূমপায়ীর ওপর গবেষণা করে বলেছে, ‘তাদের সাত জনই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় (ক্যান্সারে নয়)।’
ধূমপানে যদি ক্যান্সার হতো, দিনে অন্তত ২০টি সিগারেট খান, এরকম ১০০ ধূমপায়ীর ওপর গবেষণায় তা অবশ্যই ধরা পড়তো। আসলে ধূমপানে ক্যান্সার হয় বলে যারা বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করেন, তাদের গবেষণা হয় উল্টো পথে। তারা কয়েকজন ক্যান্সার রোগীকে যখন দেখেন, এদের বেশিরভাগই ধূমপান করে, তখন আর কিছু না ভেবে মন্তব্য করেন, ধূমপানেই এদের ক্যান্সার হয়েছে। কিন্তু যারা ধূমপান করেন না, তাদের ক্ষেত্রে এসব গবেষক মনে করেন, বংশগত কারণে বা তেজস্ক্রিয়ার কারণে বা অজ্ঞাত কোনো কারণে তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। একটা রোগের জন্য ভালোভাবে না যাচাই করে একেক জনের ক্ষেত্রে একেকটা কারণকে দায়ী করাটা রোগটির সঠিক কারণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
ধূমপানের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার সঠিক পন্থা হতে পারে এমন- ১. কোনো একটি ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়ে যদি দেখা যায়, ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০০ জন রোগীর সবাই ধূমপায়ী অথবা ২. যেসব গোষ্ঠি বা শ্রেণির মানুষ সাধারণত ধূমপান করেন না বা যাদের মধ্যে হাজারেও একজন ধূমপান করেন না, যেমন বাংলাদেশের নারীরা বা আধ্যাত্মিক ভাবাধারায় শিক্ষিত মানুষরা, যদি দেখা যায়, তারা কেউই কখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হন না, বরং অন্যরা, যারা ধূমপানের সাথে জড়িত, তারাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তাহলেই ধূমপানে ক্যান্সার হয় বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
কিন্তু যদি দেখা যায়, ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে অল্প কিছু লোক ধূমপায়ী বা যেসব শ্রেণির মানুষ ধূমপান করেন না, তারাও অনেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তাহলে ধূমপানের সাথে ক্যান্সারকে সম্পর্কিত করা হবে মারাত্মক ভুল। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ধূমপায়ীও হতে পারে। কিন্তু এজন্য ধূমপানকে দায়ী করে বসাটা কি ঠিক?
ধূমপানকে দায়ী করা যেতো তখন, যখন ধূমপায়ী ছাড়া অন্য কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতো। কথায় কথায় ক্যান্সারের কারণকে অজ্ঞাত বলে মাঝে মাঝে আবার ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করার জন্য ধূমপানকে ক্যান্সারের জন্য দোষারোপ করে আমরা ধূমপানের ক্ষতি এবং ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ উভয় বিষয়ে নিজেদেরকেই বিভ্রান্তিতে ফেলে রাখছি।
বিএমজে’র গবেষণায় দৈনিক ২০টি সিগারেট খান, এমন ১০০ জন ধূমপায়ীর মধ্যে যে সাতজনকে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে, সে সাতজন যে ধূমপানের কারণেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন, তা কি কোনোভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে? গবেষণাটির ধারেকাছে না থেকেও আমি প্রবল বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, এ সাতজনের যারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে স্থূলতা, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমহীনতা এবং শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরলের আধিক্য- এ তিনটি বৈশিষ্ট্যের কোনো একটি বা একাধিকটি পাওয়া যাবে এবং এসব বৈশিষ্টের কারণেই আমি মনে করি, ধূমপানে এদের হার্ট অ্যাটাক হয়নি, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এসব কারণে।
আর এ সাতজনের যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কেন হয়েছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকাটাই শ্রেয় ছিল। কারণ ধূমপান করে না, এমন লোকেরাও অহরহ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় সারা বিশ্বেই। তাই ধূমপানেই যে এরা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে গেলে ভুলের সম্ভাবনা থেকে যায়।
ধূমপানে কি ফুসফুস ক্যান্সার হয়?
তবে অনেকের মতে, ধূমপান এবং তামাক সেবন সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয়, শুধুমাত্র ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ২৯ মে ২০১৭ তারিখের দৈনিক ইনকিলাবে ‘ধূমপানের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে একটি লেখা (লেখক: আফতাব চৌধুরী) ছাপা হয়, যাতে বলা হয়, ‘ধূমপানের জোরে যারা ক্যান্সারে মারা যান, তারা বেশিরভাগ ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যান।’ এরপর আবার বলা হয়, ‘তামাক শুধু এক ধরনের ক্যান্সার উপহার দেয় না, বহু ধরনের ক্যান্সারের কারক। তামাক সেবনের জোরে খাদ্যনালী, স্বরনালী, কিডনী, অগ্নাশয়, জরায়ুমুখের ক্যান্সার হয়।’ ধূমপান ও তামাক সেবনের প্রতিক্রিয়াকে এখানে ভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে। প্রথমে ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হবার বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
১১ অক্টোবর ২০১৪ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে পাবনা মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেলের ‘ফুসফুস সুস্থ রাখার উপায়’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়। লেখাটিতে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হবার ৭টি কারণ উল্লেখ করা হয়, যেখানে ধূমপানের উল্লেখ নেই! কারণগুলো হল: ১. যক্ষ্মার জন্য ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২. মশার কয়েল থেকেও ফুসফুসের ভীষণ ক্ষতি হতে পারে। ৩. দুর্ঘটনা জনিত কারণে এবং ফুসফুসে আঘাতের কারণে এর ক্ষতি হয়। ৪. কয়লা খনিতে যারা কাজ করে তাদের যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন ফুসফুসের অসুখ দেখা যায়। ফলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫. ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া যাতে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে। এগুলো ফুসফুসের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ৬. দূষিত পরিবেশ ফুসফুসকে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ৭. বিভিন্ন খনি অঞ্চলে ফুসফুসের অসুখ বেশি হয়।
এই ৭টি কারণের কোনো একটি বা একাধিক কারণে যদি কারো ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ফুসফুসের ক্যান্সার হয়, তাহলে সে ধূমপান করুক বা না করুক, তাতে কী-ই বা আসে যায়! কিন্তু আমরা কী করি, ফুসফুসের ক্যান্সারে কেউ আক্রান্ত হলে যদি দেখি সে ধূমপান করে, তখন এক দৌড়ে দায়ী করে বসি ধূমপানকে। কারণ ধূমপান হচ্ছে একটা সর্বজনস্বীকৃত নেতিবাচক কাজ। মানুষের শরীরের সব রকম ক্ষতির জন্য ধূমপানকে দায়ী করা চলে, যদি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিটি ধূমপায়ী হয় আর ক্ষতিটির আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না যায়! দশ বছরের কম বয়সী শিশুরা সাধারণত ধূমপান করে না। এসব শিশুর পেটে মাঝে মাঝে কৃমি হয়। যদি এরা ধূমপান করতো, তাহলে এদের পেটের কৃমির জন্যও হয়তো ধূমপানকেই দায়ী করে বসা হতো!
৫ জুলাই ২০১৬ দৈনিক কালের কন্ঠে ‘ফুসফুস ভাল রাখার সহজ উপায়’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়। তাতে বলা হয়, ‘সমীক্ষা বলছে, ধূমপান না করেও শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দূষণের কারণে বহু মানুষের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ... ট্রাফিক জ্যাম, গাড়ির ধোঁয়া, বিভিন্ন শস্য-ফসলের রেণু যেমন ফুসফুসের ক্ষতি করে, তেমনই ঘরের মধ্যে জমে থাকা ধুলো, রান্নার স্টোভের গ্যাস থেকেও ক্ষতি হয়।’
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেনের ‘ওষুধ থেকেও ফুসফুসের রোগ’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়। তাতে তিনি লিখেন, ‘আমরা বিভিন্ন কারণে ওষুধ সেবন করি, কখনো চিকিৎসকের পরামর্শে, কখনো বিনা পরামর্শে। ... এগুলো ক্ষণিকের কাজ দিলেও ভবিষ্যতে এর মাত্রা হয়ে উঠে অনেক ক্ষতির কারণ। এর মধ্যে কিছু কিছু ওষুধ আমাদের ফুসফুসের নানা সমস্যা করে।’
ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হবার বা ফুসফুসের ক্যান্সার হবার অনেক অনেক কারণ থাকা সত্ত্বেও ঢালাওভাবে ধূমপানকে এজন্য দায়ী করা কি যৌক্তিক? বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এমন পাওয়া যাবে, যারা কয়েক যুগ ধরে ধূমপান করেছে, কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের ফুসফুস সুস্থ ছিল। অথচ যেভাবে ধূমপানকে ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণ বলে প্রচার করা হয়, তাতে একজন ধূমপায়ীও ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাবার কথা নয়। অনেকে হয়তো বলবে, ‘ধূমপায়ী সবাই ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, এমন নয়। কেউ কেউ আক্রান্ত হয়, আবার কেউ কেউ বেঁচে যায়।’ এ কথা বলে কিন্তু ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য ধূমপানকে দায়ী করা ভুল। ধূমপানকে তখনই ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা যেতো, যদি অধিকাংশ ধূমপায়ী বা সব ধূমপায়ী ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো।
হ্যাঁ, ধূমপানে অন্য কোনো ক্ষতি না হোক, ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে কমবেশ। কারণ ফুসফুসের ক্ষতির জন্য যে কারণগুলোকে দায়ী করা হয়, সেগুলোর কোনো কোনোটির সাথে ধূমপানের সাদৃশ্য রয়েছে। তবে আরেকটি কথা আছে, মানুষের শরীরে ক্যান্সারের কারণ এখনো যেহেতু অজ্ঞাত এবং ক্যান্সার শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গে না হয়ে শরীরের যে কোনো জায়গায় হয়ে থাকে, তাই ফুসফুসের ক্যান্সারও ধূমপানের কারণে না হয়ে অজ্ঞাত কারণেই হয়ে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ হিসেবে ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী না করার একটা সুযোগ থাকে। তাছাড়া যারা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, দেখা যায় তাদের অনেকেই ধূমপান করেন না। দু’টি উদাহরণ লক্ষ্য করুন:
(১) আমার এক সহকর্মীর বাড়ি আমাদের স্কুল যে গ্রামে অবস্থিত, তার পাশের বিরাহিমপুর গ্রামে। গত ২৫ অক্টোবর ২০১৮ স্কুলে আসার পর আমার ঐ সহকর্মী জানালেন, তাঁর এক চাচা মারা গেছেন আগের দিন। কিভাবে? মারা যাবার আগে প্রথমে তাঁর শরীরে ক্যান্সার দেখা দিয়েছিল। ক্যান্সার হয়েছিল তাঁর ফুসফুসে। পরে মৃত্যুর আগে তাঁর আবার দেখা দিয়েছিল যক্ষা। শেষে তিনি মারাই গেলেন। লোকটি ধূমপান করতেন। তবে মৃত্যুর ১৫ বছরের বেশি সময় আগে তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবু অনেকে এখন বলছে, তিনি যে একসময় ধূমপান করতেন, তার ফলেই এখন তাঁর ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। আমি একটু আগে বলেছিলাম, বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এমন পাওয়া যাবে, যারা কয়েক যুগ ধরে ধূমপান করেছে, কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের ফুসফুস সুস্থ ছিল। এখন আবার বলছি, বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ লোক এমন পাওয়া যাবে, যারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে ধূমপান করেছেন, তবু ফুসফুস সুস্থ থাকা অবস্থাতেই মারা গিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ লোক যদি আমৃত্যু ধূমপান করেও ফুসফুস ক্যান্সার থেকে রক্ষা পায়, তাহলে যে লোক ১৫ বছরের বেশি সময় আগে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে যে লোক ধূমপান করতো না, সে কেন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে?! ধূমপানে অভ্যস্থ হবার পর আবার ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিল বলেই?!
(২) ২৭ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের দৈনিক আমাদের সময়ে একটি সংবাদ ছাপা হয় ‘অভিনেত্রী রেহানা জলি ক্যানসারে আক্রান্ত’ শিরোনামে। সেখানে বলা হয়, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রেহানা জলি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আমার ফুসফুসে ক্যানসার হয়েছে। সেখান থেকে ইনফেকশন হয়ে মেরুদন্ডেও সমস্যা শুরু হয়েছে।...’
১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা রেহানা জলি মহিলা হয়েও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের মহিলারা যে সাধারণত ধূমপান করেন না, তা আগেই বলা হয়েছে। ধূমপান না করে যদি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে হয় আর দীর্ঘদিন ধূমপান করেও অসংখ্য মানুষ ফুসফুস ক্যান্সার ছাড়াই আমৃত্যু বেঁচে থাকে, তাহলে ফুসফুস ক্যান্সারকে ধূমপানের জন্য কিভাবে দায়ী করা যাবে?
এবার দেখুন ফুসফুস ক্যান্সার সম্পর্কে চায়নার গুয়াংজৌ ক্যান্সার হসপিটালের মতামত।
চায়নার ‘গুয়াংজৌ ক্যান্সার হসপিটালের’ ওয়েবসাইটে (বাংলা) ‘ফুসফুস ক্যান্সার’ শিরোনামে একটা লেখায় দেখলাম একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই ফুসফুস ক্যান্সার তাদের হয়, যারা ধূমপান করেন। তার মানে যারা ধূমপান করেন না তাদের কি এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা নেই? আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ দেখেছে যে, এখন পর্যন্ত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। সুতরাং ধূমপান-ই না, এর সাথে আরও তিনটি কারণ জড়িত থাকতে পারে- ১. বায়ু দূষণ, ২. অতিরিক্ত প্রেসার, ৩. পুষ্টির অভাব। এছাড়াও ভাইরাল ইনফেকশন, মাইকোটক্সিন, টিউবারকুলসিস, ইমিউন ডিসফাঙ্কশন, এন্ডওক্রাইন ডিজঅর্ডার এবং জেনেটিক কারণেও ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।’ [http://www.asiancancer.com/bengali/cancer-topics/lung-cancer]
এখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ‘মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ দেখেছে যে, এখন পর্যন্ত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি’। সুতরাং কারো ফুসফুসে যদি ক্যান্সার বা অন্য কোনো সমস্যা হয়, তা ধূমপানের কারণে না হয়ে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হবার অন্য কারণগুলোর ফলেও হতে পারে।
ধূমপান সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণার বিরোধীতা না করার কারণ
ধূমপান হচ্ছে একটি বৈশ্বিক গিনিপিগ। বাংলাতে একটা কথা আছে, ‘যত দোষ, নন্দঘোষ।’ ধূমপান এবং তামাক সেবন একটা বৈশ্বিক গিনিপিগ বা নন্দঘোষ। যুগ যুগ ধরে ধূমপান এবং তামাক সেবনকে বিভিন্ন গুরুতর রোগের জন্য, শারীরিক ক্ষতির জন্য একতরফাভাবে দায়ী করে আসা হচ্ছে। ধূমপানের বিরুদ্ধে পুরো বিশ^ একজোট। ধূমপানের বিরুদ্ধে আপনি যত কথাই বলেন, আপনাকে স্বাগত জানানো হবে। আপনি ধূমপানের বিরুদ্ধে কোনো কৃত্রিম ভিডিও তৈরি করুন, দেখান যে, মাত্র ৫০০ টি সিগারেট খেলেই মানুষের ফুসফুসে বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত রক্ত জমা হয় বা মানুষের ফুসফুসে পঁচন ধরতে শুরু করে, আপনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে কোটি কোটি ভিউ হবে, লক্ষ লক্ষবার শেয়ার হবে, আপনার ভিডিও ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগবে না। অথচ যদি ধূমপান ক্ষতি করে না, এমন কোনো লেখা ফেসবুকে পোস্ট করতে যান, আপনার পোস্ট আটকে দেয়া হবে। আমি ধূমপান সংক্রান্ত এই অধ্যায়টা আলাদাভাবে ফেসবুকে প্রকাশ করবো বলে ‘ধূমপান কি সত্যিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?’ শিরোনামে একটি পেজ খুলতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম। ‘কম্যুনিটি স্ট্যান্ডার্স’ নাকি লংঙ্ঘিত হচ্ছে! ধূমপান ক্ষতি করে না, এমন কোনো লেখা গুগলেও খুঁজে পাবেন না। হয়তো এ পর্যন্ত আর কেউ এমন লেখা লেখেইনি! তাহলে কিভাবে গুগলে থাকবে! আপনি খুব যুক্তিসংগতভাবে বাস্তবতার নিরিখে তথ্যপূর্ণ এমন কোনো লেখা লিখে কোনো পত্রিকায় পাঠান, তারা শিরোনাম দেখেই আপনার লেখাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেবে, আপনাকেও লেখক হিসেবে ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিতে পারে! কিন্তু বানোয়াট, অবাস্তব ও মনগড়া তথ্য দিয়ে একটি লেখা বা বই লিখুন ধূমপানের বিরুদ্ধে, আপনার লেখা প্রকাশ করতে কেউ দুবার ভাববে না। আপনার লেখা বা বই মানুষও আগ্রহসহ পড়বে।
ধূমপানে ক্যান্সার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হাঁপানী, যক্ষ্মা এসব বিধ্বংসী রোগ হয় বলে যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ধূমপানের এসব ক্ষতি সম্পর্কে প্রচারণা এতো ব্যাপক এবং জঘণ্য যে, ধূমপানে বাস্তবিকই এসব ক্ষতি হয় কিনা, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবার প্রয়োজনও মনে করে না, সাহসও পায় না। ধূমপানের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচারণার আতিশয্যে ঠান্ডা মাথায় কেউ ধূমপানের কথিত ক্ষতিগুলোকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখার সুযোগও পান না। কেউ খতিয়ে দেখলেও বিশ্বব্যাপী ধূমপানবিরোধী প্রবল প্রচারণার স্রোতে টিকতে পারবেন না বলে মনের কথা মনেই রেখে দেন, কারো সাথে শেয়ারের সাহস পর্যন্ত করেন না।
একটি পরিসংখ্যান বলে দেবে ধূমপান যে সত্যিই ক্ষতিকর নয়
আমার একটা অভ্যেস, কোনো কিছু নিয়ে মানুষ যা বলে, তা শুধু শুনেই আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই। সাধ্যমতো খুঁজে দেখি, বাস্তবতার সাথে মানুষের কথার কতটুকু মিল-অমিল। মানুষের অনেক কথাই বাস্তবতার সাথে মিলে যায়, কিন্তু সব কথার মিল আমি বাস্তবতার সাথে খুঁজে পাই না। এরকম একটা বিষয় হচ্ছে, ধূমপানের ব্যাপকপ্রচারিত বহুমুখী ক্ষতি। আমার এ ভিন্ন দৃষ্টি নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক কথা লেখা হয়ে গেলো। নিরপেক্ষ মন নিয়ে যারা পড়েছেন কথাগুলো, তারা অনেকেই আমার কথাগুলোকে চোখ বন্ধ করে ফেলে দিতে পারবেন না। কথাগুলো হজম করতে এখনো যাদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য একটা পরিসংখ্যান উল্লেখ করছি।
দৈনিক ২০ বা তার চেয়ে বেশি সিগারেট খান, অনেকেই এমন অসংখ্য মানুষ তাদের পরিচিতজনদের মধ্যে খুঁজে পাবেন। এমন অনেক মানুষও অনেকে খুঁজে পাবেন, যারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে দৈনিক ২০ টির বেশি সিগারেট খেয়ে আসছেন। এরকম একজন লোক যদি দৈনিক ২৫টি সিগারেট খান, তাহলে মাসে তার সিগারেট খাওয়া হয় ৭৫০টি, বছরে খাওয়া হয় ৯০০০ টি। তাহলে ত্রিশ বছরে তার কতগুলো সিগারেট খাওয়া হয়? ২,৭০,০০০ (দুই লক্ষ সত্তর হাজার) টির মতো! দুই লক্ষ সত্তর হাজার সিগারেট খাওয়ার পরও একজন লোক ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকাটাও হতো অতি অলৌকিক বিষয়, সুস্থ থাকা দূরের কথা, যদি যে ক্ষতিগুলোর জন্য ধূমপানের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়, বাস্তবেই ধূমপানের কারণে মানুষের সেসব ক্ষতি হতো! অথচ ৩০ বছর ধরে নয়, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে দৈনিক ২০টির বেশি সিগারেট খাওয়া অসংখ্য মানুষ শুধু বাংলাদেশেই (বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ১৬ কোটির বেশি) পাওয়া যাবে, যারা, যে রোগগুলোর জন্য ধূমপানকে দায়ী করা হয়, সে রোগগুলো থেকে পুরোপুরি মুক্ত! আর যারা ক্যান্সারের জন্য ধূমপানকে দায়ী করেন, ‘ধূমপান ক্যান্সারের কারণ’ বলে প্রচার করেন, তারা তাদের ধারণা পাল্টাতে কোনো আপত্তি করবেন না, যদি দেখেন বাংলাদেশে হাজার হাজার ধূমপায়ী আছেন, যারা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ধূমপান করে আসছেন, অথচ এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত হননি! কারণ যেভাবে ধূমপানে ক্যান্সার হয় বলে প্রচার করা হয়, চল্লিশ বছর পর্যন্ত যেতে হবে না, পাঁচ-ছয় বছর ধূমপান করলেই মনে হয় মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়বে!
আমাদের বাড়ির দু’তিন বাড়ি দক্ষিণের এক বাড়ির আবুল খায়ের নামক একজন লোকের কথা একটু আগে বলেছিলাম, যিনি ৪৪ বছর ধরে ধূমপান এবং তামাক সেবন উভয়টাই করছেন। তিনি দৈনিক ১৫ টির মতো করে সিগারেট খান, তবু এখনো বেঁচে আছেন! তাঁর কি ক্যান্সার হয়ে আরো অনেক আগে মরে যাবার কথা ছিল না?! হিসেব করে দেখেছি, ৪৪ বছর ধরে তিনি ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০০ টির মতো সিগারেট খেয়েছেন। এরকম আরো অনেক লোক শুধু আমার জানাশোনাতেই আছে। উদাহরণ বেশি দিলে অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন বলে আর কারো কথা উল্লেখ করলাম না। নিজের পরিচিতদের মধ্যেই সবাই এরকম অসংখ্য লোক খুঁজে পাবেন।
জীবনে তিন লক্ষের মতো সিগারেট খেয়েছেন, এমন হাজার হাজার লোক বাংলাদেশেই খুঁজে পাওয়া যাবে। সারা বিশ্বে এমন লোকের সংখ্যা তো কোটির ঘরেও পৌঁছে যেতে পারে। যারা বিশ্বাস করছেন, ‘ধূমপানে ক্যান্সার হয়’; ‘ধূমপান মৃত্যু ঘটায়’, তারা কি বলতে পারবেন, তিন লক্ষ সিগারেট খাওয়া পর্যন্ত একজন ধূমপায়ী বেঁচে থাকে কিভাবে?! বেঁচে থাকে, এটাই সত্য। বেঁচে থাকে এজন্য, ধূমপান যে ক্ষতিগুলো করে বলে সবাই মনে করে, বাস্তবে ধূমপান সে ক্ষতিগুলো করে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে এতো গবেষণা, এতো সতর্কবার্তা, সবই কি ভুল? ভুল হতে পারে, কারণ ‘ভুল করা মানবীয় বৈশিষ্ট্য’। পৃথিবীর অনেক সত্য একটা সময় এসে ভুল প্রমানিত হয়, আবার অনেক ভুল একটা সময় এসে ভেঙ্গে যায়।
ধূমপান আগে, নাকি ক্যান্সার আগে?
ধূমপান সম্পর্কে নেতিবাচক এ কথাগুলো মানুষের ধারণায় বদ্ধমূল হবার সম্ভাব্য একটি কারণ হচ্ছে, মানুষ যখন প্রথম প্রথম ধূমপান করতে শুরু করেছে, তখন ধীরে ধীরে ধূমপায়ী কেউ কেউ যখন যক্ষা, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগে আক্রান্ত হতে লাগলো, তখন মানুষ এসব রোগের আর কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে (অবশ্য এখনো এসব রোগের প্রকৃত কারণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারিত হচ্ছে) ভাবতে লাগলো, সুস্থ-সবল এ লোকটি হঠাৎ রোগাক্রান্ত হলো কেন? ধূমপান না করলে তার হয়তো রোগটি হতো না। তাহলে নিশ্চয়ই ধূমপানই তার এ রোগের জন্য দায়ী। খুব সম্ভবত এভাবেই ধূমপানের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয় এবং এ ধারণা একসময় প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও পায়।
মানুষ ধূমপানকে যখন এসব রোগের জন্য দায়ী করতে শুরু করলো, তখন একটু চোখ বুলিয়ে দেখেনি, ধূমপান যারা করে না, তারাও এসব রোগে আক্রান্ত হয়। যদি দেখতো, তাহলে ধূমপানকে এসব রোগের কারণ না বলে এসব রোগের কারণ সম্পর্কে নীরব থাকতো বা নতুন করে খুঁজে দেখতো এসব রোগের প্রকৃত কারণ। মানুষ এদিকেও লক্ষ্য করলো না, পৃথিবীতে ধূমপান প্রচলনের আগ থেকেই মানুষ কান্সারে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে।
‘ভয়াবহ ব্যাধি ক্যান্সারের ইতিহাস এবং এর চিকিৎসা’ শিরোনামে ‘ডেইলী বাংলাদেশ’ পত্রিকায় ১৬ জুলাই ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, ‘ক্যান্সারের গায়ে অনেকেই এঁটে দিয়েছেন আধুনিক আমলের রোগের তকমা। তবে ক্যান্সার রোগের ইতিহাসের বয়সটা হয়তো মানুষের অস্তিত্বের একদম সমানে সমান। প্রাচীন মিশরের মমির হাড়েও পাওয়া গেছে ক্যান্সারের অস্তিত্ব। চিলির আতাকামা মরুভূমিতে মমি হয়ে যাওয়া লাশের হাড়েও পাওয়া গেছে অস্টিওসারকোমার চিহ্ন, সহজভাবে এটিকে হাড়ের ক্যান্সারের সাথেই তুলনা করা যেতে পারে। এমনকি খ্রিস্টের জন্মের ১৬০০ বছর আগের দলিল দস্তাবেজে উল্লেখিত অদ্ভুত কিছু রোগের লক্ষণাদি দেখে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন ক্যান্সার সেই আমলেও ছিলো। গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডটাসের ৪৪০ খ্রিস্টপূর্বের লেখনি থেকে জানা যায়, পারস্যের এক রাণী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’
অনেকের মতে, ক্যান্সার মানবজাতির আবির্ভাবের শুরু থেকেই ছিল। American Cancer Society ’র অনলাইনে Early History of Cancer নিবন্ধের Oldest descriptions of cancer
উপশিরোনামে বলা হয়েছে, ‘Human beings and other animals have had cancer throughout recorded history. So it’s no surprise that from the dawn of history people have written about cancer. Some of the earliest evidence of cancer is found among fossilized bone tumors, human mummies in ancient Egypt, and ancient manuscripts. Growths suggestive of the bone cancer called osteosarcoma have been seen in mummies. Bony skull destruction as seen in cancer of the head and neck has been found, too.
Our oldest description of cancer (although the word cancer was not used) was discovered in Egypt and dates back to about 3000 BC. It’s called the Edwin Smith Papyrus and is a copy of part of an ancient Egyptian textbook on trauma surgery. It describes 8 cases of tumors or ulcers of the breast that were removed by cauterization with a tool called the fire drill. The writing says about the disease, “There is no treatment.” [https://www.cancer.org/cancer/cancer-basics/history-of-cancer/what-is-cancer.html]
অপরদিকে উইকিপিডিয়ায় ধূমপানের ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়, ÔÔWith the arrival of the Europeans in the 16th century, the consumption, cultivation, and trading of tobacco quickly spread. The modernization of farming equipment and manufacturing increased the availability of cigarettes following the reconstruction era in the United States. Mass production quickly expanded the scope of consumption, which grew until the scientific controversies of the 1960s, and condemnation in the 1980s.” [https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_smoking]
যদি মানুষের অস্তিত্বের শুরু থেকেই ক্যান্সার মানুষকে আক্রমণ করতে আরম্ভ করে আর ধূমপানের প্রচলন মানুষের অস্তিত্বের অনেক অনেক পরে হয়ে থাকে, তাহলে ধূমপানকে ক্যান্সারের জন্য দায়ী করার কি কোনো সুযোগ থাকে?
ধূমপান না করলেও যখন মানুষকে ক্যান্সার আক্রমণ করে থাকে, তখন ধূমপানকে ক্যান্সারের জন্য দায়ী করার কী অর্থ? যখন ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে ধূমপান করেও লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয়েই অন্য কোনোভাবে মৃত্যুবরণ করে, তখনও কি ‘ধূমপানে ক্যান্সার হয়’ বলার কোনো সুযোগ থাকে? পৃথিবীর সব মানুষ একমত হয়ে যদি পৃথিবী থেকে ধূমপানকে তাড়িয়ে দেয়, তাহলে, ক্যান্সারসহ যে রোগগুলোর জন্য ধূমপানকে দায়ী করা হয়, সে রোগগুলো কি ধূমপানের সাথে সাথে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে?! পৃথিবীর কোনো একটি দেশে যদি তামাক ও সিগারেট উৎপাদন, আমদানী, ক্রয়-বিক্রয় সব নিষিদ্ধ করে দেশটিকে সম্পূর্ণরূপে তামাক ও ধূমপানমুক্ত দেশে পরিণত করা হয়, তাহলে সে দেশে কি কারো ফুসফুস ক্যান্সার বা অন্য কোনো ক্যান্সার হবে না?
বিশ্বব্যাপী ধূমপানবিরোধী ব্যাপক প্রচারণার কারণে ‘ধূমপান ক্ষতিকর’ কথাটি, যারা ধূমপান করে না, তারা তো বিশ্বাস করেই, যারা ধূমপান করে, তারাও প্রায় সবাই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। কিন্তু যখন তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয় যে, অসংখ্য ধূমপায়ী আছে, যারা চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে ধূমপান করেও, জীবনে আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষ সিগারেট খেয়েও বেঁচে আছে, এমনকি অনেকটা সুস্থতার সাথেই, তখন অনেকে বলে উঠে, ধূমপান ক্ষতি করে, এটা ঠিক, তবে সবার ক্ষতি করে না!! মানুষের সূর পাল্টে যেতে সময় লাগে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, শতকরা কত জন ধূমপায়ী ধূমপানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়? বিএমজে’র যে গবেষণার কথা একটু আগে উল্লেখ করা করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, শতকরা সাতজন লোক ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা-ও আবার ক্যান্সার নয়, ধূমপানে তারা অন্য রোগে আক্রান্ত হয়। এই সাত জন লোকের রোগাগ্রস্ত হবার জন্য বা এই সাত জনকে যেসব রোগ আক্রমণ করেছে, সেই রোগগুলোর জন্য ধূমপানকে নিশ্চিতভাবে দায়ী করা যেতো তখন, যখন ধূমপান করেন না, এমন সব মানুষ রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকতো। শুধু যদি ধূমপায়ীরাই ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের শিকার হতো, তখন নিশ্চয়তার সাথে বলা যেতো, ধূমপানেই এসব রোগ হয়, তবে হয়তো সব ধূমপায়ীর হয় না।
ধূমপান এবং তামাক সেবন কি এক?
ধূমপান ও তামাক সেবনকে অনেকে একসাথে মিলিয়ে ফেলেন আবার অনেকে দু’টির প্রতিক্রিয়াকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান এবং তামাক সেবনকে ‘এক’ ধরা হয় এ যুক্তিতে যে, ধূমপান করা হোক আর তামাক সেবন করা হোক, সিগারেট এবং তামাক (সাদাপাতা, জর্দা) উভয়টাতে থাকে নিকোটিন নামক বিষাক্ত বস্তু। আর নিকোটিন যেহেতু মানুষের অনেক ক্ষতির কারণ, তাই ধূমপানের মাধ্যমে নিকোটিন গ্রহণ করা হোক বা তামাক সেবনের মাধ্যমে নিকোটিন গ্রহণ করা হোক, ক্ষতি একই।
বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার কিছু দেশে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন, যারা ধূমপান করেন না, কিন্তু পানের সাথে খুব মজা করে সাদাপাতা বা জর্দা খেয়ে থাকেন। মহিলাদের মধ্যে এ প্রবণতাটা বেশি। বাংলাদেশে আধ্যাত্মিক ধারায় শিক্ষিত অনেক আলেম, হাফেজও পানের সাথে তামাক (সাদাপাতা/জর্দা) খেয়ে থাকেন। আমি এরকম অনেক মানুষ দেখেছি, যারা এভাবে তামাক খাচ্ছেন নিয়মিত, কিন্তু কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হননি। এসব তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে শুধু যারা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি রোগ হচ্ছে। আমার বাবা-মায়েরও, বিশেষ করে আমার মায়ের, পানের সাথে সাদাপাতা, জর্দা খাওয়ার অভ্যাস আছে। আমার শৈশব থেকেই দেখছি আমার মা পানের সাথে সাদাপাতা/জর্দা ছাড়া পান খেতে পারেন না। বাবা মাঝে মাঝে খান। এসব খাওয়ার কারণে তাঁদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাঁদের শরীরে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তাঁরা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ থেকে দূরে সরে যাবার পর থেকে। আমি আর উদাহরণ দিতে চাই না। সবার দায়িত্বে ছেড়ে দিচ্ছি তদন্তের বিষয়টা। এক হাজার তামাকসেবীর ওপর গবেষণা করলে দেখা যাবে, তাদের মধ্যে যারা চিকন এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করছেন পর্যাপ্ত, তাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস নেই। আর যারা মোটা এবং শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে, তাদের অনেকেই এসব রোগে আক্রান্ত। আর এই এক হাজার তামাকসেবীর মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ স্ট্রোক এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, সবাই বা অধিকাংশ মানুষ নয়।
একহাজার তামাকসেবীর মধ্যে অল্প সংখ্যক লোক স্ট্রোক এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার জন্য তামাক সেবন এবং ধূমপানকে দায়ী করার সুযোগ নেই। কারণ- ১. স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের কারণ এখনো উদঘাটন করা যায়নি। তাই যে কারো রোগদু’টি হতে পারে। একটা অপরাধ সংঘটনের পর প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত হবার আগে শুধুই সন্দেহের বশে কাউকে অপরাধী বলে অপবাদ দেয়া চরম বোকামী এজন্য যে, তাতে প্রকৃত অপরাধী নিশ্চিন্তে বার বার অপরাধ করার এবং আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠার সুযোগ পায়; ২. যদি ধূমপান বা তামাক সেবনের কারণে রোগ দু’টি মানুষকে আক্রমণ করতো, তাহলে এই এক হাজার লোকের সবাইকে বা অধিকাংশকে রোগ দু’টি আক্রমণ করতো এবং ৩. যারা তামাক সেবন বা ধূমপান করেন না, তাদের কাউকে রোগ দু’টি কখনো আক্রমণ করতো না।
ধূমপানের কি কোনো পরোক্ষ ক্ষতি আছে?
আমাদের পাশ্ববর্তী একটি সরকারি ক্লিনিকের প্রধান, যার নাম সুফিয়া, তাঁর একটি বিবাহিত মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ৫ মার্চ ২০১৯ তারিখের প্রথম আলোর ৪র্থ পৃষ্ঠায় দেখলাম একটি সংবাদ ‘ক্যানসারে আক্রান্ত শিশু নাদিমের চিকিৎসায় সহায়তার আহ্বান’ শিরোনামে। সংবাদে দেখলাম শিশুটির বয়স মাত্র ২ বছর ৪ মাস। এই বয়সেই সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ১০ মার্চ ২০১৯ আমাদের বিদ্যালয়ে একজন মহিলা একটি শিশু নিয়ে এলেন ভর্তি করাতে, যে তাঁর ভাইয়ের মেয়ে। বললেন ওর মা মারা গেছে, তাই তিনি শিশুটিকে নিজের কাছে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জিজ্ঞেস করলাম, ওর মা কিভাবে মারা গেছে? তিনি বললেন, ওর মা মারা গেছে ক্যান্সারে। বাচ্চাদানীতে ক্যান্সার।
এই তিনজন মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সাথে ধূমপানের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। যারা বলবেন, এরা হয়তো পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, তারা বলুন, যাদের প্রত্যক্ষ ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হয়েছে এরা, তারা, মানে প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয়ে পরোক্ষ ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় কিভাবে?
আমাদের বাড়ির দক্ষিণে আমজাদ ভুঁইয়া বাড়ি নামে একটি বাড়ি আছে। সম্পর্কে আমার নানা হন, ঐ বাড়ির এমন একজন লোকের নাম রুহুল আমিন ভুঁইয়া। তিনি একদিন কথায় কথায় আমাকে জানালেন, তাঁর মা মারা গেছেন ক্যান্সারে। এটাও জানালেন, তাঁর মা ধূমপান তো করতেনই না, পানের সাথে সাদাপাতা বা জর্দাও খেতেন না। আমার ওই নানার শাশুড়িও মারা যান ক্যান্সারে। ওই বাড়ির সামনে লিয়াকত আলী নামে একজন লোক দোকান দেন। তিনি বলেন, তাঁর শাশুড়িও মারা যান ক্যান্সারে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত এইসব মহিলা, যাদের কথা এ পর্যন্ত উল্লেখ করা হলো, তারা কেউই ধূমপান করতেন না, এটা নিশ্চিত। কারণ এরা বাংলাদেশী। বাংলাদেশি মহিলারা সাধারণত ধূমপান করেন না, বাংলাদেশে শতকরা ১ জন মহিলাও ধূমপায়ী নন। দশ হাজারে বা এক লক্ষে একজন ধূমপায়ী হলে তা ধর্তব্যও হতে পারে না। এইসব ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলা পরোক্ষ ধূমপানের শিকারও নন। কারণ এদের অনেকের স্বামীই ধূমপায়ী নন। এদের কারো স্বামী ধূমপায়ী হয়ে থাকলেও কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত হননি। যে লোক নিজে ধূমপান করে, সে (তথা প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী) ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয়ে পরোক্ষ ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে, এটা চরম অযৌক্তিক ও হাস্যকর।
আরেকটি কথা হলো, আমাদের দেশের মহিলারা নিজেরা যেমন ধূমপান করেন না, অনেকেই স্বামীর ধূমপানও পছন্দ করেন না। স্বামীর সাথে এ নিয়ে অনেক মহিলার মনোমালিন্য হয়ে থাকে বলে অনেক পুরুষ বাইরে ধূমপান করলেও বাসায়, স্ত্রীর কাছে থাকলে ধূমপান থেকে বিরত থাকেন। অনেকে স্ত্রীর ভয়ে পুরোপুরি ধূমপান ছেড়েও দেন। তাহলে মহিলারা ধূমপানের পরোক্ষ শিকার হবেন কিভাবে?! শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্য অনেক দেশেও মহিলারা তাদের স্বামীদের ধূমপান পছন্দ করেন না। কারণটা খুব সহজেই অনুমেয়। কারণটা হচ্ছে, ধূমপানজনিত কারণে মুখে দুর্গন্ধ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অতীত ও বর্তমানের যে রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে আমার ভালো লাগে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অন্যতম। তাঁর একটা ছোট্ট বিষয় এখানে উল্লেখ করছি। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখের দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় বারাক ওবামা সম্পর্কে একটি সংবাদে বলা হয়, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিন, স্ত্রীর ভয়েই নাকি তিনি ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করেছেন। গত সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি একথা বলেন।’
ধূমপানে ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ এসব গুরুতর রোগ হয় বলে প্রচার করা হয় বিভিন্নভাবে, আমরাও তা বিশ্বাস করি নির্দ্বিধায়। কিন্তু নিজেরা কখনো বিষয়টাকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করিনা। কারণ বিষয়টা ব্যাপক প্রচারিত। বছরখানেক আগ থেকে কেন জানি বিষয়টার প্রতি আমার একটা কৌতুহল সৃষ্টি হল। একদিন আমাদের বিদ্যালয় এলাকার মোস্তফা নামক একজন লোকের সাথে বিষয়টা নিয়ে একান্তে আলাপ করলাম। তিনি নিজেও ধূমপায়ী ছিলেন। বয়স সত্তরের বেশি। ধূমপানও করছেন কয়েক যুগ ধরে। তিনি কথায় কথায় বললেন, ‘আমাদের বাড়ির দু’তিনজন মহিলা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এসবে মারা গেছেন। তারা তো ধূমপান করতেন না! আর আমি নিয়মিত ধূমপান করা সত্ত্বেও এখনো এসব রোগে আক্রান্ত হইনি!’
ধূমপান সম্পর্কে এ আলোচনায় বেশ কয়েক বার ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতির কথা হয়ে গেছে। ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতি সম্পর্কে আর কোনো কথা না বললেও হতো। তবু বিষয়টা আরো পরিষ্কার করার জন্য আর মাত্র একটি কথা বলা প্রয়োজন। ধূমপানে যদি প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীর বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হয়, এ লেখায় যে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, তাহলে পরোক্ষ ধূমপায়ীর ক্ষতি হবে কী করে!
নিকোটিনের ক্ষতি কিভাবে বুঝা যাবে?
ধূমপান বা তামাক সেবনে যে ক্যান্সার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ হয় না, তার আরো একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে, অনেক অনেক ধূমপায়ী আছেন, যারা দীর্ঘ দিন ধরে ধূমপানের পাশাপাশি তামাকও সেবন করেন, তবু তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কথিত সব ক্ষতি থেকে নিরাপদ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধূমপান বা তামাক সেবন যদি মানুষের বড় কোনো ক্ষতি না করে, তাহলে নিকোটিন নামক বস্তু, যা তামাকে থাকে বলে বলা হয়, সেই নিকোটিন যে মানুষের ক্ষতি করে, তা বুঝা যাবে কিভাবে?!
কেন এই লেখায় ধূমপান নিয়ে আলোচনা?
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা, ‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে আমার এ লেখায় এ বিষয়ে আলোচনা করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। মূলত ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ এ তিনটি রোগের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং এ রোগ তিনটি থেকে আত্মরক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘজীবন লাভের পথ প্রসারিত করা সম্পর্কেই এ লেখা। কিন্তু যখন দেখা গেল, অনেক গবেষণায় গবেষকরা এবং অনেক লেখায় চিকিৎসকরা ধূমপানকেও হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব রোগের জন্য দায়ী করেন, তখন ধূমপান নিয়ে এ লেখায় আলোচনা না করে উপায় ছিল না। ধূমপানের কথিত ক্ষতিগুলোর সাথে যতোই বাস্তবতার সাথে মেলাতে যাই, ততোই অবাক হই এটা চোখের সামনে পরিষ্কার হতে দেখে যে, ধূমপান তো আসলেই কোনো ক্ষতি করছে না মানুষের! শুধু হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নয়, বরং ধূমপানের সাথে ক্যান্সার এবং স্ট্রোকেরও কোনো সম্পর্ক নেই!
আমি নিজে ধূমপায়ী নই, ধূমপানে অভ্যস্ত হবার কোনো ইচ্ছাও নেই, আমাদের পরিবারের কেউই ধূমপান করে না, তবু আমার কথাগুলো ধূমপানের পক্ষে গেল কেন? কারণ, যে রোগগুলোর জন্য ধূমপান দায়ী নয়, ভালোভাবে যাচাই না করে সেগুলোর জন্যও ধূমপানকে একচেটিয়াভাবে দায়ী করার প্রবণতাটা রোগগুলোর প্রকৃত কারণকে আমাদের চোখের সামনে আসতে দিচ্ছে না। ধূমপানের প্রতি একটা সাধারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের চোখের ওপর পর্দা ফেলে রাখছে। আমি শুধু সে পর্দাটি সরানোর চেষ্টা করেছি। এ পর্দাটা সরে গেলে শুধু ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ নয়, ক্যান্সার এবং ব্রেন স্ট্রোকের মত ভয়াবহ রোগগুলোর কারণ অনুসন্ধানের পথ আলোকিত হবে, কোনো সন্দেহ নেই।
হয়তো অনেকে বলবেন, ধূমপান কি তাহলে মোটেই ক্ষতিকর নয়? হ্যাঁ, ধূমপান অবশ্যই ক্ষতিকর। তবে সে ক্ষতি পরিমাণে অল্প এবং সীমিত। যেমন: অর্থের অপচয়; যারা ধূমপান পছন্দ করে না, তাদের বিরক্তি; অধিকাংশ বিড়ি এবং কিছু কিছু সিগারেট পানে মুখে দুর্গন্ধ হয়; সিগারেটের আগুনে অনেক সময় জামা পুড়ে যায় এবং সিগারেট খাওয়া নিয়ে অনেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয় ইত্যাদি।
ধূমপান নয়, মদপান ক্ষতিকর
আসলে ধূমপান নয়, মানুষের বেশি ক্ষতি করে মদপান। পরিবার এবং সমাজের বড় শত্রু হচ্ছে মদপান। মানুষকে মাতাল, অর্ধপাগল বা পুরো পাগল করে ছাড়ে মদপান। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি একটা পরিবারকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করার হাজার হাজার ঘটনা আছে। মদ খেয়ে মানুষ শুধু সাময়িকভাবে মাতাল হয় না, অনেকে পুরো জীবনের জন্য পাগল হয়ে পরিবার ও সমাজের অভিশাপে পরিণত হয়। ধূমপান করে কিন্তু কেউ মাতাল হয় না, পাগল হওয়া দূরের কথা। আর মদপানে অর্থের অপচয়? একবছর নিয়মিত ধূমপানের চেয়ে একবছর নিয়মিত মদপানের খরচের তুলনাটা হবে আকাশ-পাতাল। হেরোইনে আসক্ত হয়ে নিঃস্ব হবার উদাহরণে পৃথিবী ভরপুর। হেরোইন-মদ এসব সেবন করে তিলে তিলে জীবন ধ্বংস করে ফেলার উদাহরণের কোনো অভাব নেই পৃথিবীতে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তবু অনেক দেশেই মদপানের চেয়ে ধূমপানকেই জঘণ্য মনে করা হয়। মদপানকে শতভাগ ছাড় দেয়া হয় আর ধূমপানের বিরুদ্ধে নেয়া হয় কঠোর পদক্ষেপ। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা দেখুন। ১৯৯৮ সালে প্রদীপ দেব নামক একজন বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে যান। তাঁর প্রথম প্রবাসের প্রথম মাসের স্মৃতিকথা তিনি ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ নামক একটি বইতে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেন। পরে ‘অস্ট্রেলিয়ার পথে পথে’ নামক আরেকটি বইতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কে লেখেন। তাঁর এই দু’টি বই থেকে দু’টি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি।
১. ধূমপান এবং ফায়ার অ্যালার্ম
‘‘হোস্টেলে ফিরে এসে দেখলাম বেশ জমজমাট অবস্থা এখন। টিভি রুমে অনেকে বসে অনুষ্ঠান দেখছে। কিচেনে রান্না করছে কেউ কেউ। আমি আর মিকি এখানে সময় না কাটিয়ে দোতলায় উঠে এলাম। পরস্পর ‘গুড নাইট’ বলে যে যার রুমে ঢুকে গেলাম।
সারাদিন প্রচুর ঘোরাঘুরি হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়তে দেরি হলো না। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো ফায়ার অ্যালার্মের শব্দে। কুইন্সল্যান্ডে যখন তখন আগুন লেগে যায়। আতঙ্কে ছটফট করতে করতে আমার ছোট্ট ব্যাগটা টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে। ব্যাগে আমার পাসপোর্ট আর ওয়ালেট আছে।
রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম মিকির রুমের দরজা খোলা। নিচে কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। অ্যালার্ম বেজেই চলেছে। ফায়ার এক্সিট দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে দেখি ঝাপসা অন্ধকারে সিঁড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে মিকি। আমাকে দেখতে পেয়ে বললো, ‘‘হাই!’’
মিকির কথা জড়ানো। ভাবলাম কাঁচা ঘুম থেকে উঠেছে বলেই হয়তো।
‘‘হোয়াট হ্যাপেন?’’ নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলাম।
‘‘সিগারেট ধরিয়েছিলাম রুমের মধ্যে। সাথে সাথে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠেছে। ওটা যে এত সেন্সেটিভ আমার জানা ছিল না।’’
মিকির মুখে তীব্র এলকোহলের গন্ধ। শুধু সিগারেট নয়, মদও টেনেছে সে প্রচুর।’’ [অস্ট্রেলিয়ার পথে পথে, পৃষ্ঠা: ১৫৯-১৬০, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৫]
২. একজন মাদকাসক্ত তরুণের করুণ পরিণতি-১
‘‘...প্রায় ছুটতে ছুটতে ফিরে এলাম হোস্টেলে। তালা খুলে রুমে ঢুকেই চমকে উঠলাম রুমের ভেতর মোমের আলো দেখে। কী যে ভালো লাগলো হঠাৎ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো লোডশেডিং চলছে। সাত তারিখ রাতে ঢাকার হোটেলে এরকম মোমের আলোয় বসে গল্প করেছিলাম আমরা সবাই। তারপর মাত্র বারো দিন কেটেছে, অথচ মনে হচ্ছে বারো বছর।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কেটে গেলো মোমের আলোর ভালো লাগা। আলোর উৎসের দিকে চোখ গেলো। মোমবাতি ঠিকই- কিন্তু অন্যরকম। ছোট্ট একটা এলুমিনিয়ামের কৌটোতে মোমের সলতে জ্বলছে। হঠাৎ একটা হাড্ডিসার হাত আলোর দিকে এগিয়ে আসতেই একটা ঠান্ডা ভয়ের স্রোত বয়ে গেলো আমার সারা শরীরে। লিকলিকে একটা তরুণ ঘরের কোণায় বসে আছে। মোমের শিখার দিকে হাত বাড়িয়ে এলুমিনিয়িঅম ফয়েলে কিছু একটা গরম করছে। ধবধবে সাদা শরীরের সবগুলো হাড় মনে হয় গোনা যাবে। গায়ে বিদ্ঘুটে একটা টি-শার্ট ছাড়া আর কিছুই নেই। দুই কানের লতি ছিদ্র করে বড় বড় দুটো রিং ঢুকিয়ে রেখেছে। হাতের কব্জি থেকে বাহু পর্যন্ত নানরকম উল্কিতে ভর্তি। চুলের অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর। মাথার দু’পাশে কামানো- শুধু মাঝখানের চুলগুলো আছে- এবং কোনো এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় সেগুলো মোরগের ঝুঁটির মতো খাড়া হয়ে আছে।
এরকম একটা মুর্তিমান বিপদের হাতে সেদিন পড়েছিলাম রাসেল স্ট্রিটে। আজ দেখি একবারে রুমের ভেতর! আমাকে দেখে মেঝেতে ছড়ানো পা-দুটো সামান্য সরিয়ে জড়ানো গলায় বললো- ‘‘হাই দেয়ার’’। আমি কোনো রকমে ‘‘হ্যালো’’ বলতে বলতে দেখলাম তার গর্তে ঢোকা চোখ দুটো মোমের আলোয় জ্বলজ্বল করছে। একটু পরেই এলুমিনিয়াম ফয়েল নাকের কাছে এনে চোখ বুজে জোরে জোরে দম নিলো। ড্রাগ নিচ্ছে ছেলেটা! এরকম একটা মাদকাসক্ত লোকের সাথে রুমে থাকতে হবে আজ!
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবার অবস্থা। কিন্তু করার কিছু নেই। হোস্টেলের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ অথচ রুমে বসে ড্রাগ নিচ্ছে এই লোক। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় জানে না ব্যাপারটা। জানার উপায়ও নেই। ধূমপান করলে স্মোক অ্যালার্ম বাজবে- কিন্তু ড্রাগের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু নেই। আমার এখন কী করা উচিত? যারা ড্রাগ নেয় তারা বেশির ভাগ সময় দলবেঁধে থাকে। এই ছেলেটার দলবলও কি আছে আশেপাশে? এ কী বিপদে পড়লাম!...
লাইট জ্বালালাম। ছেলেটা বিছানায় নেই। ঘরের কোণে চোখ গেলো। ওখানেই পড়ে আছে সে। মোম শেষ হয়ে বাতিটা নিভে গেছে। তখন আবছা আলো-আঁধারে যতটা ভয়ংকর লাগছিলো- এখন আর সেরকম মনে হচ্ছে না। বরং খুব অসহায় দেখাচ্ছে তাকে। মাদকের বিষে জর্জরিত এই তরুণ ক্রমাগত আত্মহত্যা করছে দিনের পর দিন। কেন এমন করে এরা? এদেশে এদের কিসের অভাব?...’’ [ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন, পৃষ্ঠা- ১৪৮-১৫০, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১১]
প্রথম ঘটনা আমাদের জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় ধূমপানের বিরুদ্ধে কঠোরতা সম্পর্কে। দ্বিতীয় ঘটনা অস্ট্রেলিয়ায় মদপানের ব্যাপারে নীরবতা সম্পর্কে আমাদের বার্তা দিচ্ছে। অবাক হবার মতো বিষয়। হোস্টেলের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও মানুষ অবাধে মদপান করতে পারে! যে মদপান মানুষকে তিলে তিলে চোখের সামনে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, সে সম্পর্কে চরম উদাসীন হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। অথচ ধূমপানের চাক্ষুস ক্ষতির তেমন কোনো উদাহরণ না থাকা সত্ত্বেও ধূমপানের বিরুদ্ধে আরোপ করা হয় কড়াকড়ি!
অস্ট্রেলিয়ায় স্মোক অ্যালার্ম সম্পর্কে প্রদীপ দেবের ‘অস্ট্রেলিয়ার পথে পথে’ বই থেকে আরো একটা অনুচ্ছেদ উল্লেখ না করলেই নয়। ‘‘শুয়ে শুয়ে রিসেপশান (হোস্টেলের) থেকে দেয়া ফোল্ডারটা খুললাম। হোস্টেলের কিছু নিয়ম কানুন লেখা আছে। এই আবাসিক হোস্টেলের পুরোটাই ধূমপানমুক্ত এলাকা। প্রত্যেক রুমে স্মোক অ্যালার্ম লাগানো আছে। অ্যালার্ম বাজলে সাথে সাথে ফায়ার ব্রিগেডে খবর চলে যাবে আর তারা ঘন্টা বাজাতে বাজাতে চলে আসবে। ধূমপানজনিত কারণে ধোঁয়ার উৎপত্তি বুঝতে পারলে ৩২০ ডলার ফাইন।...’’ [পৃষ্ঠা: ৮৫]
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির করুণ পরিণতি-২
‘এক যাযাবর মন এক দেশ থেকে অন্য দেশ’ নামক একটি ভ্রমণকাহিনীমূলক বইয়ে (প্রকাশক: দিব্য প্রকাশ) লেখক আহমেদ ইকবাল ফারুক একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন। লেখক ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায় অবস্থিত আমাজান অরণ্যে ভ্রমণের কথা বর্ণনার সময় মাদকাসক্ত লোকটির কথা আলোচনায় আসে। ২৪ নং পৃষ্ঠা থেকে শুরু করে ৪৫ নং পৃষ্ঠা পর্যন্ত আলোচনাটি বিস্তৃত। শুধু মাদকাসক্তের কথাটিই সেখান থেকে উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে।
‘‘এ্যাবাগিলের সাথে পরিচয় হয়েছে মাস ছয়েক আগে আটলান্টা শহরে। সংক্ষিপ্ত নাম এ্যাবি বলেই ডাকি। এক বড় এনজিওতে কাজ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা আর পূর্ব ইউরোপে কাজ করছে। দেশ ভ্রমণে উৎসাহী আর রাজনীতিতে উদারপন্থী। বন্ধত্ব হতে সময় লাগেনি। প্রায় সমবয়সী, বিয়ে করেনি, কোনো ছেলেপুলে নেই। কথা একটু বেশি বলে, সাইকেল চালানো আর স্কুবা ড্রাইভিংয়ে পারদর্শী। ছেলে বন্ধুর মতো একজন আছে, তবে সেটা কোন পর্যায়ে পড়ে তা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। লোকটার বয়স মধ্য চল্লিশের মতো, ব্যাংকে চাকরি করে। নাম এন্ডারসন, সংক্ষেপে এন্ডি। তার আবার একজন ছেলে বন্ধুও রয়েছে, তবে সম্পর্কটা নড়বড়ে মনে হয়। এককথায় সে সে মেয়ে-পুরুষে ভেদাভেদ করে না, অর্থাৎ বাইসেক্সুয়াল। ওয়াটার স্কি আর সাইকেল চালানোর ঝোঁক। এইচআইভি আছে তবে ওষুধের কল্যাণে ভালোই রয়েছে। দুজনেই আলান্টার কাছাকাছি দুই শহরে থাকে, খুবই বন্ধুত্বপরায়ণ। এন্ডি সারাক্ষণ মদ খায়, যাকে বলে ফাংসানিং অ্যালকোহলিক।...
রাত নয়টায় বিমান ছাড়ল ম্যানাউসের উদ্দেশ্যে। আমাজান যাবার কেন্দ্রবিন্দু ম্যানাউস। বিশাল লোকের বিশাল শহর, আমাজান নদীর ওপর আমাজানিয়া স্টেটের রাজধানী। খুবই বিখ্যাত আর কুখ্যাত একই সাথে। আমাজান জঙ্গলে যেতে হলে এখানে আসতেই হবে। এসে পৌঁছালাম, তখন রাত দুইটা বেজে গেছে। ইমিগ্রেশন কাস্টম চুকিয়ে হোটেলে পৌঁছাতে ভোর চারটা। পাশাপাশি দুইটা রুমে জায়গা হলো। এ্যাবি আর এন্ডি এক রুমে। সে অবশ্য সারাক্ষণ প্লেনে হুইস্কি টেনে গেছে।...
উরুগুয়ে যাবার প্ল্যান মাত্র এক দিনের জন্য, সকালে গিয়ে রাতে ফিরে আসা। বাস এল সকাল আটটায় ফেরিঘাটে নেবার জন্য। এন্ডি যাবে না। শরীর খারাপ আর দুর্বল হয়ে গেছে, একটু জ্বর। মনে হয় রুমে শুয়ে আবার চিকেন স্যুপ আর হুইস্কি খেয়ে সারা দির ঘুমোবে।...
বিকেল হয়ে আসছিল, আমরা বাসে উঠে রওনা দিলাম। পথের দুই পাশে খোলা মাঠ, কৃষকেরা কাজ করছে, গাধার গাড়ি চলছে আর গরু দিয়ে লাঙল টানা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু-একটা ট্রাক্টর। বাস কলোনিয়াতে ফিরে এল তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। ফেরি ধরে এক ঘন্টা পর বুয়েনস আয়ার্স। হোটেলে ফিরলাম রাত নয়টার দিকে। একটু কিছু খেয়ে যার যার রুমে ফিরে গেলাম। পরদিন ফিরে আসার পালা। এন্ডির শরীর ভালো যাচ্ছে না। একটু জ্বর, শরীর শুকিয়ে গেছে, পায়ে পানি জমেছে, চোখগুলো একটু হলুদ।... নিষেধ করা সত্ত্বেও এন্ডি হুইস্তর অর্ডার দিল। বুঝতে কষ্ট হয় না যে তার হেপাটাইটিস বা সিরোসিস হয়েছে আর এইচআইভি বাড়াবাড়ি শুরু করছে। তাকে বলি, তুমি কি সব আশা ছেড়ে আত্মহনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছ? একটা হাসি দিয়ে বলল, মোটেই না, আমি মরতে চাই না, তবে বাঁচতেও চাই না।.....
চার-পাঁচ মাসের মাথায় এন্ডি মারা গেল। কারণটা অনুমানসাধ্য। খুব খারাপ লেগেছিল, এমন একটা টগবগে তরুণ জেনেশুনে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিল। বয়স আটচল্লিশ, সুন্দর চেহারার জন্য আরো কম মনে হতো।...’’ [পৃষ্ঠা-৪৫]
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির অকপট জবানবন্দী
এবার একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির জবানবন্দী পড়ুন, যা ছাপা হয়েছে প্রথম আলোর সাথে প্রতি রোববার প্রকাশিত ক্রোড়পত্র ‘স্বপ্ন নিয়ে’র ৫ মে ২০১৯ সংখ্যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির পরিচয় অনেকে তার জবানবন্দী পড়ার সময় বুঝে ফেলতে পারেন। যারা পারবেন না, তারা শেষে তার পরিচয় দেখে অবাক হতে পারেন।
জবানবন্দীমূলক লেখাটির শিরোনাম, ‘জীবন বদলে গেল, যখন বললাম -- আর না’। পুরো লেখাটি এখানে উল্লেখ করা হলো।
‘‘মাত্র আট বছর বয়সে আমি মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। পরিবার থেকে সেই আসক্তি আমাকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু এ জন্য আমি আমার মা-বাবাকে কখনোই দায়ী করি না। মাদক সেবন আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতির অংশ ছিল। আমার মা-বাবা ছিলেন উদার। তাঁরা সেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল আর সামাজিক রীতির অংশ হয়েই আমার হাতে মাদক ধরিয়ে দেন। কিন্তু আমি সব সময়ই বলি, আমার মা-বাবার সঙ্গে পৃথিবীর কারও তুলনা হয় না। তাঁরা আমার জন্য অনেক করেছেন। তাঁরা আমার আদর্শ। তবে আমি আমার সন্তানদের বড় করছি সব সামাজিক রীতিনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে। আমার সামনে আমার সন্তান ধূমপান করবে, এটা আমি মেনেই নিতে পারি না।
অবশ্য এই মেনে না নেওয়ার পেছনে কারণও আছে। আমি আট বছর বয়সে ধূমপান শুরু করি, এরপর গাঁজা। আমাদের বাড়িতে গাজার সেবন ছিল অনেকটা দৈনন্দিন খাবার খাওয়ার মতোই। এরপর ১৯৯৫ সালে আমি ক্র্যাক কোকেন আর ব্ল্যাক টার হেরোইনেও আসক্ত হয়ে যাই। কোকেন আর হেরোইনের আসক্তি ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। এটা সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। একবার এটার স্বাদ নেওয়ার পর এর থেকে দূরে থাকা কঠিন। আমি একসময় দেখলাম নিজের ওপর থেকে আমার সব নিয়ন্ত্রণ আমি হারিয়ে ফেলছি। মাদক সেবনের পর আমি অনেক অঘটন ঘটিয়েছে। প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে তাঁর বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলাম একবার। আরেকবার নগ্ন হয়ে পোরশে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম রাস্তায়। আমার প্রতিটি বিব্রতকর কান্ড জনসমক্ষে আমাকে প্রতিবার হেয় করেছে। আদালতে যেতে হয়েছে বারবার। আমাকে অনেকবার আদালত থেকে সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবার আমি পালিয়ে আসতাম।
আমার সহকর্মীরা চরম বিপদের সময় আমার পাশে ছিল। যখন আমি বাজেভাবে মাদকে আসক্ত ছিলাম, ২৪ ঘণ্টা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতাম, সেই সময় আমি জোডি ফস্টার পরিচালিত একটা ছবিতে অভিনয় করছিলাম। একদিন জোডি আমার কাছে বললেন, ‘এভাবে চলবে না রবার্ট।’ আমার বিবেচনা বোধ বলে কিছুই ছিল না তখন। কিন্তু জোডি খুব বিচক্ষণভাবে ধৈর্য নিয়ে আমাকে সে সময় বোঝান। তিনি বলেন, ‘তুমি ভেবো না যে আমি আমার ছবি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি। এই ছবি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, এর কাজ এখন শেষের দিকে। ছবিতে তোমার না হলেও চলবে। আমি চিন্তিত তোমাকে নিয়ে। এভাবে চললে তুমি বেশি দিন টিকতে পারবে না।’
সেদিন খুব শান্তভাবেই আমি জোডির কথা শুনেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। আমি নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। বরং আরও বেশি জড়িয়ে গেছি। আমার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল, অভিনেতা শন পেন রীতিমতো সিনেমাটিক কায়দায় দরজা ভেঙে নেশাগ্রস্থ আমাকে উদ্ধার করেছিলেন। আমি নেশাগ্রস্থ হয়ে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তিও করেছিলাম। জিততে পারিনি। এরপর নিজের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে শন আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। বেচারা শনের সেই চেষ্টাও বৃথা হয়। আমি নিরাময় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাই।
১৯৯৮ সালের দিকে আমাকে আদালতে হাতকড়া পরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সেবার তিন বছরের সাজা শোনানো হয় আমাকে। রায়ে বলা হয়েছিল, আমি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও স্থানীয় জেলহাজতে কাটাব তিন বছর। সেটা ছিল আমার জন্য খুব কঠিন একটি দিন। বিচারক জানতে চেয়েছিলেন, কেন আমি বারবার এমন করছি? কিসের ক্ষুধা আমার? আমি বলেছিলাম, আমার মনে হয় আমার মুখে একটা বন্দুকের নল ঢোকানো, আর বন্দুকের ট্রিগারে আমার আঙুল। আমি নলের তামাটে স্বাদটা নিচ্ছি, এখন আমার বুলেটের বারুদের স্বাদটাও চাই। তাই আমি নিজেকে বারবার বিধ্বংসী পর্যায়ে নিতেও দ্বিধা বোধ করি না। মোট কথা নিয়ন্ত্রণ বলতে আমার মধ্যে আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।
তবে জেলহাজতের দিনগুলো আমাকে পুরোপুরি বদলে দেয়। সেখানে আমি কোনো নায়ক ছিলাম না। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন ছিল সেগুলো। জেলে যাওয়ার পর প্রথম দিন আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। পুরো আলাদা একটি জগৎ সেটি। একটা সময় মনে হবে যে এটাই বুঝি শেষ, এরপর আর জীবন নেই। কিন্তু এখন বর্তমানে দাঁড়িয়ে মনে হয়, আমি যেহেতু সেই কঠিন সময় পেরিয়ে আসতে পেরেছি। এখন আমি সব অসম্ভবকেই উতরে যেতে পারব।
জেলহাজতে আমাকে দিনে ৯ ঘণ্টা করে জেলখানার হেঁশেলে কাজ করতে হয়েছে। রাতদিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেই সময়টায় আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আর না। আর সেই ছোট্ট ‘আর না’ আমার জীবনকে পাল্টে দেয়। আমি এখনো সবাইকে বলি, অসহায়ত্বকে স্বীকার করে নেওয়া, ব্যর্থতার কাছে আত্মসমর্পণ করে দেওয়া সহজ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দুর্যোগের মুহূর্তেও দৃঢ় থাকলে একটা সময় ঠিকই এর ফল পাওয়া যায়। জীবনের কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও হার না মানা একটা বিরাট ব্যাপার। আমিও তাই হার মানিনি কখনো। দৃঢ় মনোবল নিয়ে আমি আমার ৩০ বছরের মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছি। আর এত প্রতিকূল পথ পেরিয়ে এসে এখন আমার মনে হয়, কঠিন বলে কিছু নেই। কঠিন হলো সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর একবার যদি মন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সবকিছু সম্ভব।’’ [ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আদর রহমান। সূত্র: অপরাহ্ উইনফ্রে শো]
জবানবন্দী দেওয়া মানুষটিকে ইতোমধ্যে হয়তো অনেকেই চিনে ফেলেছেন। হ্যাঁ, তিনি হলেন হলিউডের আয়রনম্যান খ্যাত অভিনেতা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। বিগত ২২ এপ্রিল ২০১৯ বিশ্বজুড়ে মুক্তি পায় রবার্ট ডাউনি জুনিয়র অভিনীত মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ২২তম এবং সর্বশেষ ছবি ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’। এই অভিনেতা নিজের শতভাগ ঢেলে দিয়ে অভিনয় করলেও, মেধার প্রমাণ দিলেও একসময় কিন্তু মাদকাসক্ত ছিলেন। এখানে তাঁর মাদকাসক্ত জীবনের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই। জানি না, এভাবে আর কেউ নিজের মাদকাসক্ত জীবনের বিভীষিকাময় অবস্থা বর্ণনা করেন কিনা বা করার সুযোগ পান কিনা!
বিশ্বব্যাপী ধূমপানের বিরুদ্ধে যত কঠোরতা ও আইন; মদপানের বিরুদ্ধে কঠোরতা ও আইন তার চেয়ে অনেক কম। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পাবলিক প্লেসে মানুষ অবাধে মদপান করে, মদপান কোনো নিন্দনীয় বিষয় নয়। ধূমপানকে মানুষ যত ক্ষতিকর মনে করে, মদপানকে তত ক্ষতিকর মনে করে না। জানি না, কেন? চোখের সামনেই মদপানের ভয়াবহ পরিণতির হাজারো উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও মদপান থেকে দূরে থাকার জন্য মানুষকে তেমন একটা সতর্ক করা হয় না। অথচ ধূমপানের ক্ষতি অস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও, বাস্তবে ধূমপানের ক্ষতির উদাহরণ তেমন একটা দেখা না যাওয়া সত্ত্বেও ধূমপানের বিরুদ্ধে দেশে দেশে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ, মানুষকে নানারকমভাবে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা হয়, প্রচার করা হয় ভয়াবহ সব সতর্কবার্তা। এমনকি ধূমপানের সাথে এমন সব রোগের সম্পর্ক জুড়ে দেয়া হয়, বাস্তবে যে রোগগুলো ধূমপানের কারণে সৃষ্টি হবার স্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই, এ লেখায় যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কিছু লোক আছে, যারা মদপানের চেয়েও ধূমপানকে ভয়ঙ্কর মনে করে। কিন্তু এসব লোক বাস্তবতা দেখে না। এসব লোকের নিকট প্রশ্ন: ধূমপায়ী ধূমপানের টাকার জন্য কখনো কাউকে হত্যা করার কথা শুনেছেন? শুনেননি। কিন্তু বাংলাদেশে মাদকের টাকা না পেয়ে বাবা, মা বা স্ত্রীকে হত্যা করার অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। আপনি যদি নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা না পড়েন বা এরকম কোনো ঘটনার কথা কোনোভাবে না জানেন, তাহলে গুগলে ‘‘মাদকের টাকা না পেয়ে বাবাকে হত্যা’’ বা ‘‘মাদকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা’’ বা ‘‘মাদকের টাকা না পেয়ে মাকে হত্যা’’ বা ‘‘নেশার টাকা না পেয়ে হত্যা’’ বা ‘‘মাদকসেবীর হাতে খুন’’ এসব লিখে সার্চ করুন। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত মাদকাসক্ত ব্যক্তির হাতে তার বাবা, মা, স্ত্রী বা অন্য কেউ হত্যার ভুরি ভুরি সংবাদের লিঙ্ক পেয়ে হতভম্ব হয়ে যাবেন মাদকের ভয়াবহতা দেখে। দু’একটা শিরোনাম এখানে উল্লেখ করছি।
(১) শিবগঞ্জে মাদকের টাকা না পেয়ে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা [দৈনিক যুগান্তর, ৯ জুন ২০১৮]
(২) মাদকের টাকা না পেয়ে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে পলাতক [প্রথম আলো, ৩ জুন ২০১৮]
(৩) কটিয়াদীতে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মুক্তিযোদ্ধা বাবা খুন [দৈনিক জনকন্ঠ, ৯ মার্চ ২০১৬]
(৪) মাদকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা! [দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২১ জুন ২০১৮]
(৫) নারায়ণগঞ্জে মাদকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে ‘হত্যা করে’ গলায় ফাঁস [প্রিয়.কম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮]
(৬) সাভারে মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা [দৈনিক যুগান্তর, ০৭ জুন ২০১৭] (৭) মাদকের টাকা না পেয়ে হাতুড়ির আঘাতে মাকে হত্যা [দৈনিক যুগান্তর, ১৩ মার্চ ২০১৮]
(৮) কিশোরগঞ্জে মাদকের টাকা না দেয়ায় মাকে গলা কেটে হত্যা [দৈনিক যুগান্তর, ০১ আগস্ট ২০১৮]
(৯) মাদকের টাকা না পেয়ে মাকে খুন করল ছেলে [দৈনিক জনকন্ঠ, ২৯ মে ২০১৮]
(১০) নেশার টাকা না পেয়ে মাকে হত্যা [প্রথম আলো, ২৭ মার্চ ২০১৭]
(১১) মাদকসেবীদের হাতে যুবক খুন, নারী আটক [প্রথম আলো, ০৬ মার্চ ২০১৯]
(১২) মাদকসেবী ছেলের হাতে বাবা খুন, ছেলে আটক [বাংলানিউজ২৪, ০৯ মার্চ ২০১৬]
(১৩) সাভারে মাদকসেবীর হাতে শিশু হত্যার অভিযোগ [সময়নিউজ ০১ এপ্রিল ২০১৭]
(১৪) মাদকসেবীর হাতে ইমাম খুন [জাগোনিউজ২৪, ০২ অক্টোবর ২০১৬]
(১৫) মাদকসেবীর হাতে মাদকসেবী খুন [বাংলাট্রিবিউন, ২৭ নভেম্বর ২০১৫]
(১৬) কিশোরগঞ্জে মাদকসেবীর হাতে যুবক খুন [দৈনিক যুগান্তর, ০৩ জুলাই ২০১৮]
(১৭) মাদকসেবীর হাতে দর্জি খুন [দৈনিক জনকন্ঠ, ২৬ জুন ২০১৬]।
আশা করি, এরপরও বলা যাবে না, মদপানের চেয়েও ধূমপান ভয়ঙ্কর! কিছু লোক আছে, মনে করেন, ধূমপান হচ্ছে মদপানের সিঁড়ি। যারা ধূমপান করে, তারাই মদপানের দিকে ঝোঁকে বেশি। এরা এটা স্বীকার করতে আপত্তি করেন না যে, ধূমপান সম্পর্কে প্রচারিত ক্ষতিগুলোর বাস্তবতা তেমন না থাকলেও ধূমপান সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি করে, তা হচ্ছে এটি মানুষকে মদপানের দিকে ধাবিত করে। এটা বরং প্রচারিত ক্ষতিগুলোর চেয়েও জঘণ্য। তাই ধূমপান কোনোভাবেই সমর্থিত নয়।
‘ধূমপান মানুষকে মদপানের দিকে ধাবিত করে বা ধূমপায়ীরাই মদপান করে বেশি’ বলে যারা মনে করে, তাদেরকে যখন প্রশ্ন করা হয়, ‘যেহেতু মাদক ক্ষতিকর, এ ব্যাপারে আপনার কোনো দ্বিমত নেই, তাই মাদককে যদি পৃথিবী থেকে পুরোপুরি দূর করে দেয়া যায়, তখন কি ধূমপান মানুষকে মদপানের দিকে ধাবিত করবে?’, তখন এরা এটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়, পৃথিবী থেকে আগে মাদক দূর করা দরকার।
ধূমপান নিয়ে অনেক গবেষণায় দেখানো হয়, (১) আমেরিকায় বা অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি চারজন ধূমপায়ীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। অথবা (২) প্রতি চারজন ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে একজন ধূমপায়ী। এই রকম গবেষণা-ফলাফল থেকে আমরা প্রায় সবাই নিশ্চিত হই, ধূমপানে আর কোনো রোগ না হলেও নিশ্চিতভাবে ক্যান্সার হয়। আমাদের এই নিশ্চিত বিশ্বাসের কারণ বিশ্বব্যাপী ধূমপানকে নন্দঘোষ বানানো হয়েছে অনেক আগেই।
কিন্তু আমি মনে করি, এই রকম গবেষণা-ফলাফল নিশ্চিত করে, ধূমপানের সাথে ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম ফলাফল অনুযায়ী যেই চারজন ধূমপায়ীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, সেই একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে সেই কারণে, যেই কারণে অধূমপায়ী মানুষরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ধূমপায়ী মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারবে না কেন সেই কারণে, অধূমপায়ীরা যেই কারণে আক্রান্ত হয়? আমাদের চিন্তাধারায় এমন এক কেন্দ্রিকতা কেন? ধূমপানকে গিনিপিগ বানাতে আমাদের এতো আগ্রহ কেন? ধূমপায়ী মানুষ ধূমপান না করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো না, কে বলেছে আপনাকে?
যদি অধূমপায়ী কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতো, তাহলে বলার সুযোগ থাকতো সেই একজন ধূমপানেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া যদি ধূমপানে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো, তাহলে বাকি তিনজন কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়নি? বাকি তিনজন মানে শুধুই কিন্তু তিনজন নয়, বাকি তিনজন মানে তিন লক্ষও হতে পারে। কারণ চারজনে তিনজন শুধুই একটি আনুপাতিক হার। চারজনে তিনজন মানে চার লক্ষে তিন লক্ষ। চার লক্ষ ধূমপায়ী মানুষের মধ্যে যদি তিন লক্ষ মানুষ-ই ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয়, তাহলে ‘ধূমপানে মানুষের ক্যান্সার হয়’ বলার কোনো সুযোগ-ই থাকে না। ধূমপানে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে চার লক্ষের মধ্যে তিন লক্ষ মানুষ ক্যান্সার থেকে কিভাবে বেঁচে যায়? যদি অধূমপায়ী কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতো, বরং শুধু যারা ধূমপান করে, তারাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো, তাহলে চারজন ধূমপায়ীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও ধূমপানে ক্যান্সার হয় বলে মনে করার সুযোগ থাকতো।
দ্বিতীয় ফলাফল অনুযায়ী, প্রতি চারজন ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে একজন ধূমপায়ী হতেই পারে। বাকি তিনজন যেই কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, ওই একজন যদি ধূমপান না করতো, সেও সেই কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াকে কেন আমরা অসম্ভব মনে করছি? ধূমপানে যদি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতো, তাহলে চারজনে চারজনই অথবা কমপক্ষে তিনজনই ধূমপায়ী হতো। কেন তিনজনই অধূমপায়ী হলো? কারণ ক্যান্সারের কারণ ধূমপান নয়। অন্যকিছু, যা এখনো কেউ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।
অনেকে বলে থাকেন, ধূমপান শুধু ক্যান্সারের একটি কারণ। ক্যান্সারের আরো অনেক কারণ আছে। যারা এমন কথা বলেন, তারা মোটেই না ভেবে বলেন। ধূমপান যদি ক্যান্সারের একটি কারণ হতো, তাহলে ‘চারজন ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে একজন ধূমপায়ী’ এমন ঘটনাগুলোই শুধু ঘটতো, কিন্তু চারজন ধূমপায়ীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত, এমন ঘটনা ঘটতো না কোনোভাবে।
সময় এসেছে, ধূমপানের পরিবর্তে মদপানের বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বন করার। বাংলাদেশে একটি আশার আলো জ্বলে উঠেছে। বর্তমান সরকার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত অভিযানে নেমেছে। বিগত কয়েক মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। শুধু মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা নয়, মাদক উৎপাদন এবং মদপানের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দারকার। মাদক উৎপাদন এবং অস্ত্র ব্যবসা যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, ততদিন পৃথিবীতে মানুষের শান্তির সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে।