হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক কি বংশগতভাবে বা জিনগতভাবে হয়?

শুধু উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নয়, হৃদরোগও যে বংশগত কারণে হতে পারে বলে কেউ মনে করে, তা রীতিমতো আমার ধারণার বাইরে ছিল। অবাক হয়ে গেলাম সেদিন একটি দৈনিক পত্রিকায় খোদ এক ডাক্তারের লেখায় এমন কথা পড়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দৈনিক যুগান্তরের ‘সুস্থ থাকুন’ পাতায় ‘হার্ট ভালো রাখার টিপস’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়, যা লিখেছেন ঢাকার উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডাক্তার সামিয়া তাসনীম। তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রেও কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।’

একসময় অধিকাংশ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতো ষাট-সত্তর বছর বয়সের পর। একজন লোক যদি ষাট বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বা মারা যায় এবং তার কোনো সন্তান পরে কখনো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, ধরে নেয়া হয়, লোকটির হৃদরোগ থাকাতেই তার সন্তানও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এটা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ-

১. লোকটি যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, তার অনেক আগেই, যখন সে হৃদরোগমুক্ত ছিল, তখনই তার সন্তানটি তার স্ত্রীর গর্ভে আসে। তাহলে সন্তানের শরীরে তার শরীর থেকে এ রোগ কিভাবে সংক্রমিত হবে?

২. লোকটি ষাট বছর বয়সে পৌঁছার পরই তো তার শরীরে হৃদরোগ দেখা দেয়। ষাট বছরের আগে যদি সে হৃদরোগ ব্যতীত কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতো, তখন কি তার সন্তান হৃদরোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতো?

৩. সন্তানটি জন্মের পর থেকে চল্লিশ বছর যখন হৃদরোগমুক্ত ছিল, তখন বংশগত কারণটি কোথায় ছিল? বংশগত কারণে যেসব রোগ হয়, সেসব সাধারণতঃ জন্মের সময়েই সন্তান শরীরে করে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। চল্লিশ বছর যখন সে সুস্থ ছিল, তখন এটা বলার কোনো সুযোগই থাকে না, রোগটি তার বংশগত কারণে হয়েছে।

৪. বিগত চার-পাঁচ দশক ধরে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, হৃদরোগে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে এমন মানুষ খুঁজে বের করা কষ্টকর হবে, যার পূর্বপুরুষ কারো হৃদরোগ ছিল। এর প্রধান কারণ, চার-পাঁচ দশক বা তারও আগে মানুষের জীবন শ্রমসাধ্য সব কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলে হৃদরোগ মানুষকে তেমন স্পর্শ করার সুযোগ পেত না। হৃদরোগের উপদ্রব শুরু হয় মানুষের জীবন থেকে কায়িক শ্রম দূরে সরে যেতে থাকার পর থেকে; মানুষ ব্যবসা আর চাকরিমুখী হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে অভ্যস্ত হওয়ার পর থেকে; গাড়ি, লিফট, মেশিন এসব আরামের উপকরণ ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হবার পর থেকে; সর্বোপরি মানুষের শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সুযোগ পাবার পর থেকে।

তাই হৃদরোগকে বংশগত বলে আমরা প্রকারান্তরে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার বিষয়টাকে নিয়তির উপরই ছেড়ে দিচ্ছি এবং হৃদরোগ থেকে আত্মরক্ষার উপায় খোঁজার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ ব্যাপকহারে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার এটা একটা প্রধান কারণ।

 এই নিবন্ধটি ‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বই থেকে নেয়া হয়েছে। পুরো বই অনলাইনে পড়তে হলে এই পেইজে যেতে হবে: https://www.facebook.com/waytogainlonglife/posts/786418842097294

No comments:

Post a Comment