পত্রপত্রিকায় অহরহ ধর্ষণের সংবাদ আসে। বিচিত্র ধরণের- বিয়ের আগের রাতে কনেকে ধর্ষণ, পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণ, কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ, কোচিং সেন্টারে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ, ফেসবুকে প্রেম, অতঃপর ধর্ষণ ইত্যাদি।
তবু আমার মনে হয় আমাদের সমাজে সংঘটিত ধর্ষণের নব্বই ভাগ খবরই প্রকাশিত হয় না, পত্রিকায় আসা দূরে থাক। এর প্রধান কারণ- ধর্ষিতা বা তার পরিবার মনে করে, বিষয়টা জানাজানি হলে সমাজে মেয়েটি চরমভাবে হেয় হবে এবং তাকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।
কেন, একটা মেয়ে ধর্ষিত হলে তাকে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়? তার তো এখানে বিন্দুমাত্র দোষ নেই। তাছাড়া বিয়ের পর স্বামীর সাথে মাত্র একটি রাত কাটানোর পর একটি মেয়ের যে অবস্থা, ধর্ষিতা মেয়েটিরও একই অবস্থা। স্বামীর সাথে একশত রাত কাটানোর পরও একটি মেয়ে যদি 'পুরনো' না হয়, মাত্র একবার অল্প সময়ের জন্য একটি মেয়ে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় একজনের সাথে থাকার কারণে পুরনো বা পরিত্যক্ত হবে কেন?
ধর্ষিত হওয়া যদি আমাদের সমাজে নিন্দনীয় (সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে) না হতো, তাহলে নরপশুদের হাতে ধর্ষিত হওয়া থেকে এদেশের হাজার হাজার বালিকা-কিশোরী-তরুণী রেহাই পেতো, যারা আমার বা আপনার স্নেহের বোন বা কন্যা।
গোপনে কারো একটি হাত ভেঙ্গে দেয়ার সাহস যেমন কারো হয় না, তেমনি গোপনে কারো চরিত্রে হস্তক্ষেপ করার সাহসও কেউ করতো না যদি হাত ভেঙ্গে দেয়ার মতো ধর্ষণের বিষয়টিও সবাইকে বলে দেয়া যেতো স্বাভাবিকভাবে।
যতদিন ধর্ষিত মেয়েদের প্রতি আমাদের এ ভ্রান্ত ধারণা দূর না হবে, ততদিন সমাজে আমাদের অজান্তে হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে, কিন্তু কেউ মুখ খুলবে না। এমনকি নরপশুরা মেয়েদের এ দুর্বলতা ও অসহায়ত্বেরই সুযোগ গ্রহণ করতেই থাকবে।
এমনও হতে পারে, আপনার আদরের কন্যাও একদিন কোনো নরাধম কর্তৃক ধর্ষিত হতে পারে, কিন্তু আপনার কন্যা আপনার কাছ থেকেও তা লুকিয়ে রাখবে। কারণ এতে আপনার কাছেই সে ছোট হয়ে যাবে!
তাই ধর্ষিত হবার পর ধর্ষিতা নারী যদি তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়ে দেয়, তাহলে সমাজে ধর্ষণ দিন দিন কমে যেতে পারে।
পোস্টটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাতে পারেন কমেন্টে।
No comments:
Post a Comment