ভেজাল খাদ্য কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার কারণ?

খাদ্যে ভেজাল তথা বাজার থেকে কেনা খাদ্যে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানো বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে অন্যতম আলোচনা-সমালোচনার বিষয়। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রচেষ্টার পরও খাদ্যে ভেজাল এখনো পুরোপুরি দূর করা যায়নি।

বাজারে বিক্রিত ফলমূল, মাছ, সবজিসহ প্রায় সব খাবারে নানা রকম ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানো হয়। যেমন: ফরমালিন, প্যারাথিয়ন, মেলামাইন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথোফ্যান, সোডিয়াম কার্বনেট, ফ্লেভার, কৃত্রিম রং, রাসায়নিক কীটনাশক, ইথাইলিন ইত্যাদি। এসব ক্যামিকেলের মধ্যে কিছু আছে, যেগুলো কাঁচা ফলকে পাকিয়ে দেয় অল্প সময়ে; কিছু আছে, ফলে স্বাদ বৃদ্ধি করে; কিছু ক্যামিকেল আছে, যেগুলো মাছ, সবজি, ফল এসবের দ্রুত পঁচন রোধে ব্যবহার করা হয়; কিছু আছে খাদ্যের রংকে কৃত্রিমভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে; কোনো কোনো ক্যামিকেল ফসল বা সবজিতে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়; কিছু ক্যামিকেল আছে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এসব ক্যামিকেল মানবদেহের অনেক রকম ক্ষতি করে বলে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখা ছাপা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখের দৈনিক ইনকিলাবে ‘খাদ্যে ভেজালের ক্ষতিকারক প্রভাব’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন ডা. লোকমান হেকিম। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের ডা. আহমদ সাইফুল জব্বার বলেন, মেটাল বেইজড ভেজাল খাবারে কিডনি স্বল্পমাত্রা থেকে সম্পূর্ণ বিকল হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রে ভেজাল খাবারের জন্য হজমের গন্ডগোল, ডায়ারিয়া এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এনেসথেশিয়া ডা. মোঃ মিল্লাত-ই-ইব্রাহীম বলেন, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে এ খাবারগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিষক্রিয়া কার্যকর থাকে। যা রান্না করার পরও অটুট থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় করা ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাসট্রিয়াল রং, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়। এগুলো গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভেজাল খাবারের কারণে যে রোগগুলো দ্বারা মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় তাহলো অ্যালার্জি, অ্যাজমা, চর্মরোগ, বমি, মাথাব্যথা, খাদ্য বিষক্রিয়া, অরুচি, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি।’


আরও উল্লেখ করা হয়‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ।’


নিবন্ধটিতে খাদ্যে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানোকে অনেক রোগের জন্য দায়ী করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল মেশানো যখন শুরু হয়নি, তখন মানুষ রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো না। হ্যাঁ, খাদ্যে এসব বিষাক্ত ক্যামিকেল মানুষের ক্ষতি করতেই পারে। কিন্তু তাই বলে এমন অসংখ্য শারীরিক সমস্যার জন্য আমরা এখন খাদ্যে ভেজালকে দায়ী করি, খাদ্যে ভেজালের কারণে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হবার বাস্তব প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। ক্যামিকেলযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে তাৎক্ষণিক উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস এসব রোগে আক্রান্ত হবার উদাহরণ কেউ দিতে পারবে না। ক্যামিকেলযুক্ত খাবার খেয়ে তাৎক্ষণিক বমি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, অজ্ঞান হওয়া, এমনকি মারা যাবার ঘটনাও মাঝে মাঝে আমাদের দেশে ঘটে। যেমন: ১০ জুলাই ২০১৪ তারিখের প্রথম আলোয় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ‘আম খেয়ে চারজন অসুস্থ’ শিরোনামে। সংবাদে বলা হয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় গত মঙ্গলবার রাতে আম খেয়ে তিন ভাইসহ চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে ভাত খাওয়ার পর আম খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবার পেটে ব্যথা শুরু হয়। এরপর বমি ও কয়েকবার পায়খানা হয়।

২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘আম খেয়ে একই পরিবারের ৯ জন হাসপাতালে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ক্যামিকেল মেশানো আম খেয়ে অসুস্থ হয়ে একই পরিবারের শিশু ও মহিলাসহ নয় জন গুরুতর অসুস্থ হয়েছে। পরে তাদেরকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই অর্ধচেতন অবস্থায় রয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য শিমুল জানান, কলাপাড়া পৌর শহরের সদর রোড এলাকার এক বিক্রেতার কাছ থেকে তার শ্বশুর গত সোমবার আম ক্রয় করেন। রাতে সবাই ওই আম খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দফায় দফায় বমি ও পায়খানা করতে থাকে সবাই।

১৪ জুলাই ২০১৬ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে ‘লাখাইয়ে আম খেতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর গ্রামে আম খেতে গিয়ে শারমিন নামে সাড়ে ৩ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলামের মেয়ে। সোমবার বেলা আড়াইটায় এ ঘটনা ঘটে।
তার পরিবার ও এলাকাবাসী থেকে জানা যায়, কৃষক রবিউল ইসলাম রোববার বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর বাজার থেকে এক কেজি ফজলি আম কিনে আনেন। সোমবার দুপুরে তার মেয়ে শারমিন একটি আম খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে সে ছটফট করতে থাকে। এভাবে প্রায় ২০ মিনিট ছটফট করতে করতেই সে মারা যায়।

এরকম ঘটনা অবশ্যই গুরুতর। অন্তত এরকম ঘটনাগুলো প্রতিহতের জন্য খাদ্যে ভেজাল রোধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু যেহেতু এরকম ঘটনা ছাড়া খাদ্যে ভেজালের অন্য কোনো ক্ষতির বাস্তব উদাহরণ নেই, তাই সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কোনো একটা নির্দিষ্ট অপরাধে একজন লোক দোষী প্রমাণিত হলো। সমাজে সংঘটিত অন্য অপরাধগুলোর হোতা খুঁজে না পেয়ে সেগুলোর জন্যও ঐ লোককে কোনো প্রমাণ ছাড়া দায়ী করাটা কি ঠিক হবে? খাদ্যে ক্যামিকেলের জন্য বমি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, অজ্ঞান হওয়া, এমনকি ক্যামিকেলের বিষক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটারও প্রমাণ আছে। কিন্তু ক্যামিকেলযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হবার বাস্তব উদাহরণ যখন খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন এসব রোগের জন্যও খাদ্যে ভেজালকে দায়ী করা কখনোই উচিত নয়।

অনেকে বলে থাকেন, বমি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, অজ্ঞান হওয়া এসব হচ্ছে ক্যামিকেলযুক্ত খাবার খাওয়ার তাৎক্ষণিক ক্ষতি। আর ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি রোগ হচ্ছে খাদ্যে ভেজালের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি। কিন্তু যারা এসব কথা বলেন, তারা তাদের কথার পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারবেন? তারা কি বলতে পারবেন, যেসব দেশে আমাদের দেশের মতো খাদ্যে বিষাক্ত ক্যামিকেল মেশানো হয় না, সেসব দেশে কি ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক এসব রোগে কেউ আক্রান্ত হয় না? বাংলাদেশে খাদ্যে ক্যামিকেল মেশানো যদি পুরোপুরি রোধ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কি ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক এসব রোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে যাবে?
অনেক সাধারণ মানুষকেও প্রায়ই বলতে শুনি, খাদ্যে ভেজালের কারণে আমরা ডায়াবেটিসসহ বিপজ্জনক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। অনুরোধ, মনগড়া মন্তব্য করে কাউকে বিভ্রান্ত করবেন না।

‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে একটি বইয়ের অংশ বিশেষ এই লেখাটি। পুরো বই অনলাইনে পড়তে হলে যেতে হবে এই লিঙ্কে: https://waytogainlonglife.blogspot.com/2019/03/blog-post.html

ধর্ষণ বৃদ্ধির একটি অন্তর্নিহিত কারণ

পত্রপত্রিকায় অহরহ ধর্ষণের সংবাদ আসে। বিচিত্র ধরণের- বিয়ের আগের রাতে কনেকে ধর্ষণ, পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণ, কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ, কোচিং সেন্টারে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ, ফেসবুকে প্রেম, অতঃপর ধর্ষণ ইত্যাদি।

তবু আমার মনে হয় আমাদের সমাজে সংঘটিত ধর্ষণের নব্বই ভাগ খবরই প্রকাশিত হয় না, পত্রিকায় আসা দূরে থাক। এর প্রধান কারণ-  ধর্ষিতা বা তার পরিবার মনে করে, বিষয়টা জানাজানি হলে সমাজে মেয়েটি চরমভাবে হেয় হবে এবং তাকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।

কেন, একটা মেয়ে ধর্ষিত হলে তাকে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়? তার তো এখানে বিন্দুমাত্র দোষ নেই। তাছাড়া বিয়ের পর স্বামীর সাথে মাত্র একটি রাত কাটানোর পর একটি মেয়ের যে অবস্থা, ধর্ষিতা মেয়েটিরও একই অবস্থা। স্বামীর সাথে একশত রাত কাটানোর পরও একটি মেয়ে যদি 'পুরনো' না হয়, মাত্র একবার অল্প সময়ের জন্য একটি মেয়ে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় একজনের সাথে থাকার কারণে পুরনো বা পরিত্যক্ত হবে কেন?

ধর্ষিত হওয়া যদি আমাদের সমাজে নিন্দনীয় (সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে) না হতো, তাহলে নরপশুদের হাতে ধর্ষিত হওয়া থেকে এদেশের হাজার হাজার বালিকা-কিশোরী-তরুণী রেহাই পেতো, যারা আমার বা আপনার স্নেহের বোন বা কন্যা।

গোপনে কারো একটি হাত ভেঙ্গে দেয়ার সাহস যেমন কারো হয় না, তেমনি গোপনে কারো চরিত্রে হস্তক্ষেপ করার সাহসও কেউ করতো না যদি হাত ভেঙ্গে দেয়ার মতো ধর্ষণের বিষয়টিও সবাইকে বলে দেয়া যেতো স্বাভাবিকভাবে।

যতদিন ধর্ষিত মেয়েদের প্রতি আমাদের এ ভ্রান্ত ধারণা দূর না হবে, ততদিন সমাজে আমাদের অজান্তে হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে, কিন্তু কেউ মুখ খুলবে না। এমনকি নরপশুরা মেয়েদের এ দুর্বলতা ও অসহায়ত্বেরই সুযোগ গ্রহণ করতেই থাকবে।

এমনও হতে পারে, আপনার আদরের কন্যাও একদিন কোনো নরাধম কর্তৃক ধর্ষিত হতে পারে, কিন্তু আপনার কন্যা আপনার কাছ থেকেও তা লুকিয়ে রাখবে। কারণ এতে আপনার কাছেই সে ছোট হয়ে যাবে!

তাই ধর্ষিত হবার পর ধর্ষিতা নারী যদি তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়ে দেয়, তাহলে সমাজে ধর্ষণ দিন দিন কমে যেতে পারে।

পোস্টটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাতে পারেন কমেন্টে।

খুন ও ধর্ষণ বন্ধের একটি কার্যকর উপায়

পৃথিবীতে মানুষের হাতে মানুষ খুনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। পৃথিবীর শুরু থেকেই মানব সমাজে খুন-হত্যার মতো চূড়ান্ত অনাকাঙ্খিত ঘটনা চলে আসছে। মানুষের কাছে মানুষের পরাজয়ের অন্যতম দিক খুন। আর ধর্ষণের শুরু কখন থেকে, তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও মানুষের হাতে মানুষের ইজ্জত লুট হওয়াটা মনুষত্ববোধের চরম পরাজয় ছাড়া কিছু নয়। পৃথিবীর অনেক অনেক দেশে খুন এবং ধর্ষণের সংখ্যা কম হলেও অনেক দেশে খুন এবং ধর্ষণ চলছে ব্যাপকহারে।

পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র যদি খুন ও ধর্ষণ পুরোপুরি বন্ধ করতে আন্তরিকভাবে বদ্ধপরিকর হয়, তাহলে সে রাষ্ট্রের উচিত এরকম একটি আইন করা- ‘‘খুন করলে খুনীকে গ্রেফতারের পর একমাসের মধ্যে যেভাবে সে খুন করেছে, যথাসম্ভব একইভাবে খোলা প্রান্তরে তাকে খুন করা হবে আর ধর্ষককেও গ্রেফতারের পর এক মাসের মধ্যে গ্রেফতার করে খোলা প্রান্তরে পুড়িয়ে মারা হবে’’ এবং আইন কার্যকর করা শুরু করা।

যদি এই আইন প্রবর্তন করে অনতিবিলম্বে কার্যকর করা শুরু করা হয়, আমার বিশ্বাস, পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সেই রাষ্ট্রে খুন ও ধর্ষণ আগের চেয়ে ৯০ শতাংশ কমে যাবে। এভাবে শুধু ১০ জনকে শাস্তি দেয়া হলে শত শত মানুষ খুন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, হাজারো নারী ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাবে, মানুষের জীবন আগের চেয়ে আরো নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ হবে। আমার এটাও মনে হয়, যদি শুধু কোনো এক রাষ্ট্র এরকম আইন করে, অন্য অনেক রাষ্ট্রও এমন আইন করতে পারে।

 জানি না, খুন ও ধর্ষণ বন্ধে পৃথিবীর কোনো দেশে এখনো এরকম কোনো আইন প্রণীত হয়নি কেন বা আদৌ কখনো প্রণীত হবে কিনা!

স্র্রষ্টা বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?

আমি যেহেতু ইসলাম ধর্মে জন্মলাভ করেছি, সে সূত্রে ইসলাম-সম্পর্কিত দু’একটা কাহিনী জানি। ইসলামের একজন পন্ডিতের নাম ছিল আবু হানিফা রহ.। তাঁর জীবদ্দশায় একজন নাস্তিক প্রকাশ্যে যেখানে সেখানে প্রচার করতে লাগল, সৃষ্টিকর্তা নামক কিছু নেই। পৃথিবী, মহাবিশ্ব এমনি এমনি (Automatically) সৃষ্ট। এক পর্যায়ে সে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, সৃষ্টিকর্তা আছে, তাহলে সে তৎক্ষণাৎ তার অবিশ্বাস ত্যাগ করবে। তার সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন ইমাম আবু হানিফা রহ.। একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। তারিখ, সময় নির্ধারণ করা হল। লোকজনকে জানানো হল। নির্ধারিত সময়ের আগে কৌতুহলী জনগণ এসে উপস্থিত হল। নাস্তিকও। কিন্তু আবু হানিফার নাম-গন্ধও নেই। অনেকে ভাবতে আরম্ভ করল আবু হানিফা হয়তো রণেভঙ্গ দিয়ে পিছু হটে গেছেন। নাস্তিকও খালি মাঠে গোল দেয়ার আনন্দ অনুভব করতে আরম্ভ করল। অবশেষে দেখা গেল আবু হানিফা আসছেন।

   আসা’র পর নাস্তিক তামাশাচ্ছলে বললেন “আপনি একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, আপনার কথার ঠিক থাকে না, সময় নির্ধারণ করে সময়মত হাজির হওয়ার চেষ্টা করেন না।” ইমাম সাহেব বললেন, “আগে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, পথে কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা, তা জিজ্ঞেস না করেই আমাকে দোষারোপ করছেন কেন?” নাস্তিক একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “পথে কি সত্যি কোনো সমস্যা হয়েছিল?” ইমাম বললেন, “হ্যাঁ, একটা সমস্যা হয়েছিল। আর সেজন্য সময়মত পৌঁছতে পারিনি এখানে। জানতে চাইলে বলতে পারি সমস্যাটা।” নাস্তিক বলল, “বলুন না শুনি।” ইমাম সাহেব বললেন, “আমি রওনা হয়ে কিছুদূর আসার পর দেখি সামনে একটা নদী। কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় আমি অস্থির হয়ে যাই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি নৌকা পাবার আশায়। কিন্তু কোনো নৌকা সেদিকে আসছিল না।

   অবশেষে দেখি আমার সামনেই নদীর তীরে একটি গাছের চারা উঠল। চারাটি দেখতে না দেখতে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হল। এরপর দেখে অবাক হই যে, গাছটি নিজে নিজেই ভেঙ্গে পড়ল। এমনকি ভেঙ্গে এমন মাপের টুকরো টুকরো কাঠে পরিণত হল যেগুলো দিয়ে নৌকা তৈরি হয়। এরপর কাঠগুলো আপনা-আপনি জোড়া লেগে একটি সুন্দর নৌকায় রূপান্তরিত হল। আমি তখন আমার জন্য আশির্বাদ মনে করে নৌকাটি দিয়ে নদী পার হয়ে এখানে আসতে সক্ষম হলাম। নয়তো কী অবস্থা হতো জানি না।”

   নাস্তিক লোকটি ইমাম সাহেবের কাহিনী শুনে বলল, “কী যা-তা বলছেন এসব? আপনি একজন ইমাম হয়ে এমন বানোয়াট গল্প বলতে পারেন?” ইমাম বললেন “বানোয়াট কেন বললেন?” নাস্তিক বলল, “আপনি যে কাহিনী বললেন, এ ধরনের নৌকা তৈরি আপনা আপনি কখনো সম্ভব নয়।” ইমাম সাহেব বললেন, “এ ধরনের কাহিনী আপনা-আপনি কখনো সম্ভব না হলে এ পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ, গাছপালা, ফুল-ফল নিয়ে যে সুশৃঙ্খল সুন্দর বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা, এ কাহিনী তাহলে আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়েছে বলে আপনার বিশ্বাস হয় কিভাবে?” নাস্তিক হতভম্ব হয়ে গেল ইমাম সাহেবের বাস্তবধর্মী প্রশ্ন শুনে।

   যাহোক যখন ধরেই নিয়েছি মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল, তখন এ ব্যাপারে আপাততঃ কথা আর না বাড়িয়ে চলে যাই মানব জাতির প্রাথমিক দু’সদস্যের আবির্ভাবের আলোচনায়।

    এককোষী প্রাণী, কোটিকোষী প্রাণীর পথ পাড়ি দিয়ে যখন মানবজাতির শুভসূচনা ঘটেছিল, তখন তাদের দু’সদস্য দু’লিঙ্গের হল কেন? উভয় সদস্য একই লিঙ্গের হওয়া স্বাভাবিক ছিল। মানুষের বৈশিষ্ট্য যেমনঃ পঞ্চ-ইন্দ্রীয়, যৌন চাহিদা, বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি কোত্থেকে সে অর্জন করল? এসবও না হয় সৌভাগ্যবশতঃ তার সঙ্গী হল, কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে পানাহার দরকার, সে পানাহারের ব্যবস্থা তার জন্য কোত্থেকে হল? মহাবিস্ফোরণের ফলে যে পৃথিবীর অভ্যুদয় হল, সে পৃথিবী বসবাস-উপযুক্ত মাটির তৈরি হল কেন? লোহা বা ইস্পাতের তৈরিও হতে পারত পৃথিবী-পৃষ্ঠ। তাছাড়া মাটিতে উৎপন্ন গাছের ফল মাটির মত না হয়ে মিষ্টি, সুস্বাদু খাদ্যে পরিণত হয় কোন্ যুক্তিতে?

    নাক দিয়ে মানুষ ঘ্রাণ নেয় এবং শ্বাসকার্য চালায়। নাকের সাথে সম্পর্ক রেখে ফুলে-ফলে ঘ্রাণ এল কিভাবে? আবার মানুষের ফুসফুস এবং নাকের সাথে সঙ্গতি রেখে অদৃশ্য বায়ুমন্ডল সৃষ্টি হল কোন্ সূত্রে? প্রারম্ভিক মানুষদ্বয় কি নিজের প্রয়োজনেই এসব গড়ে নিল? সম্ভব? শুধু পানি-জাতীয় কোনো কিছু মহাবিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল না হলেও মানবজাতির প্রারম্ভিক দু’সদস্যের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এ পানি তৈরি হল কিভাবে? মানুষ কি এসব নিজে সৃষ্টি করতে পারে? নাকি অপরিকল্পিত একটি ‘এ্যাটম-বিস্ফোরণ’ থেকে এগুলো তৈরি হওয়া বিশ্বাস করা যায়?

সূর্যটি লাভহীন কেন ঘুরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত?

  প্রসঙ্গ এলে একটা প্রশ্ন আমি মাঝে মাঝে করে থাকি ছাত্রদেরকে। প্রশ্নটি হল, আমরা যখন কোনো বীজ রোপন করি, তখন তা কখনো কখনো মাটির নিচে চলে যায়। এরপরও তা থেকে চারা উঠে। মাটির নিচে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া বীজটি থেকে চারাগাছটি নিচে, ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পিছনে না গিয়ে উপরের দিকে ঢুঁ মারে কোন্ বুদ্ধিতে? এ প্রশ্নের উত্তর কোনো  ছাত্র কখনো দিতে পারেনি। আমরা অনেকে হয়তো পারি। কিন্তু অনেকের কাছে বিষয়টি বেশ রহস্যময় মনে হবে। মনে হতে পারে বীজের এ ধরনের কোনো জ্ঞান আছে যে, কোন্ দিক উপর। না, বীজের বাস্তবিকপক্ষে এ ধরনের কোনো জ্ঞান নেই। তাহলে সে ঠিকঠাকভাবে উপরে উঠে আসে কিভাবে? এর উত্তর হচ্ছে বীজ যে দিক থেকে তাপ অনুভব করে সেদিকে উঠে আসে, এটা বীজের ধর্ম। এজন্য বেশি নিচে পুঁতে যাওয়া বীজ গজায় না, কারণ সে তাপ অনুভব করতে পারে না।

আরো পড়তে পারেন: ডিম আগে, না মুরগী আগে?- এর উত্তরেই আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়

   এ তাপ কোত্থেকে আসে? সূর্য থেকে। এ সূর্য, তাপের উৎস, নিছক একটি তারকা। রাতের আকাশে আমরা দেখি অসংখ্য-অগণিত তারকা জ্বলজ্বল করছে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে (আকাশে মেঘ না থাকলে) মনে হয় প্রতি রাতেই আকাশে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে, আর নিয়নসাইনের মত হয়ে তারকাগুলো সে অনুষ্ঠানের শোভা বৃদ্ধি করছে। তারকার এ মিটিমিটি আলো আমাদের মনে যেমন আনন্দ সঞ্চার করে, তেমনি রাতে চলাচল করার ক্ষেত্রেও কাজে আসে অল্প হলেও।

   সূর্য এ তারকাগুলোরই একটি সদস্য। মহাবিস্ফোরণের সময় বাকি সব তারকা রাতে পৃথিবীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার মত দূরত্বে অবস্থান করলো, আর সূর্য তারকাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর নিকটে চলে এল পৃথিবীকে আলো-তাপ দেয়ার জন্য, উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য, ফল পাকানোর জন্য, দিন-রাত সৃষ্টি করার জন্য, কোন্ যুক্তিতে? যারা নিজেদের ‘যুক্তিবাদী-যুক্তিবাদী’ দাবি করতে করতে গলা ফাটিয়ে ফেলে, খুবই পুলক অনুভব করে, তাদের কাছে এ প্রশ্নের কী জবাব আছে?

   মানুষের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে সূর্য, পৃথিবী এগুলো নির্দিষ্ট কক্ষপথে নিয়মিত সুদূর অতীতকাল ধরে আবর্তন করে যাচ্ছে কোন্ লাভে, কোন উদ্দেশ্যে? কখনো এমন ঘটেনি যে, সূর্য তার কক্ষপথ থেকে হারিয়ে গেছে আর পৃথিবীর মানুষ অন্তহীন রাতে হাবুডুবু খেয়ে কান্নাকাটি করছে। কী করার থাকবে তখন বিজ্ঞানী-যুক্তিবাদীদের, সূর্যকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনার জন্য?

   অবাক হই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানুষের স্রষ্টার নুন খেয়ে গুণ গাওয়া দূরে থাক, স্রষ্টাকে স্বীকার না করার মতো স্পর্ধা দেখে; যেখানে মানুষের চেয়ে নয়, পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় সৃষ্টিগুলো ঐকান্তিকভাবে স্রষ্টার নির্দেশ পালন করে।

মহাবিস্ফোরণের পরিণতি মাটি, বাতাস, পানি....!

   পৃথিবী বড়ই অভাবিত, উপভোগ্য স্থান। রঙ্গিন এক জগত। এতো সুন্দর, মনোরম, কাঙ্খিত একটা কিছু নিছক একটা বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হওয়াটা কল্পনা করা যায়! পৃথিবীর উপরিভাগ তৈরি মাটি দিয়ে। মহাবিস্ফোরণ থেকে অপরিকল্পিতভাবে একটা পৃথিবী ভূমিষ্ট হল, সেটা মাটির না হলেও তো হত। সেটা হতে পারত তামার তৈরি; পাথর, লোহা বা দস্তার তৈরী। কোন্ যুক্তিতে তা এমন পদার্থের তৈরি হল, যা থেকে উদ্ভিদ জন্মে, গাছপালা, ফুল-ফল, শাকসব্জি জন্মে? পৃথিবী মাটির তৈরি না হলে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা দুরে থাক, নিজের অস্তিত্বের খবরও আমাদের থাকত না।

   ধরে নিলাম, বিগ ব্যাং থেকে পৃথিবী মাটির তৈরি হল অপরিকল্পিতভাবে, কিন্তু সূর্য নামের যে তারকা তাপ দেয়ার ফলে মাটিতে উদ্ভিদ জন্মে, সে তারকাটি যদি অন্য তারকাদের ভীড়েই রয়ে যেত, তাহলে পৃথিবী মাটির তৈরি হয়েও কী লাভ হত? এখন কি ধরে নিতে হবে যে, সূর্যও অপরিকল্পিতভাবে তারকাজগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীতে তাপ, আলো সরবরাহের জন্য ছুটে এসেছে মহাবিস্ফোরণের পর? ঠিক আছে, ধরে নিলাম। 

   ২২ আগস্ট ২০১০, রাত ১০.০০টা। আজ রাত ইশার নামাযের জন্য মসজিদে গিয়েছি চাঁদের আলোয়, ফিরেও এসেছি চাঁদের আলোয়। আস্তিকতা-নাস্তিকতার জ্ঞানহীন একজন নিরপেক্ষ মানুষ যদি একটু চিন্তা করে যে, যে নির্দিষ্ট নিয়মে চাঁদ আবর্তন করে, আলো দেয়, এ নিয়মে চাঁদ কোন্ বুদ্ধিবলে এল? চাঁদের কি বুদ্ধি বলতে কিছু আছে? চাঁদ কি জড়বস্তু নয়? চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি, পূর্ণিমা-অমাবস্যা কিন্তু একটি নির্দিষ্ট পঞ্জিকারও কাজ করে। এ চাঁদ কি কোনো অপরিকল্পিত বিস্ফোরণের ফল হতে পারে? ঐ ব্যক্তিকে যদি কেউ বলে, একটি অজ্ঞাত বিস্ফোরণ থেকে এ চাঁদ সৃষ্টি হয়েছে এবং এভাবে নির্ধারিত কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছে, তবে সে কি বিষয়টি সমর্থন করতে পারে? মেনে নিলাম চাঁদও অপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট এবং স্থাপিত।

   এবার পানির কথায় আসা যাক। ভুপৃষ্ঠের চার ভাগের প্রায় তিন ভাগই পানি। পানি ছাড়া জীবন অচল। সে জীবন উদ্ভিদের হোক আর প্রাণীর হোক। ধরে নিলাম বিগ ব্যাং থেকে চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, উদ্ভিদ, পশু, পাখি, মানুষ প্রভৃতি সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ পানি নামক কোনো কিছু সৃষ্টি হয়নি, তাহলে অবস্থা কেমন হত? মানুষের কি উদ্ভব হত পানি ছাড়া? মানুষ সৃষ্টি হলেও কি সে বেঁচে থাকতে পারত? প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় ভাবে মানুষের পানির প্রয়োজন।

   একটি নিছক বিস্ফোরণ থেকে পানির সৃষ্টি, তা-ও পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই পানি, এমন উদ্ভট গল্প যারা সাজায়, তাদের ‘যুক্তিবাদী’ বলার কোনো সুযোগ থাকে?

   এবার বাতাস নিয়ে একটু আলোচনা করি। বাতাস দেখেছে, এমন গানগল্প কোনো পাগলকেও করতে শোনা যায় না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবনধারণ করে যে প্রাণীগুলো, সে প্রাণীগুলোর মধ্যে নাক এবং ফুসফুস কোত্থেকে স্থাপিত হল? আবার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য বাতাসের ব্যবস্থা হল কোত্থেকে? ঈশ্বর নামক কোনো কিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে যখন বিষয়টি নিয়ে ভাবি, তখন মাথা যেন শুধু ঘোরে, চোখে সব অন্ধকার দেখা যায়। কে দেবে এ প্রশ্নের উত্তর?

   দেখা যায় না যে বাতাস, সে বাতাস যদি মহাবিস্ফোরণের পর সৃষ্টি না হত, তাহলে কেউ কি বলতে পারত, পৃথিবীর উপরিভাগের শূণ্যস্থানে কী একটা যেন নেই, সেটা হল না কেন? নাক আর ফুস্ফুস থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার সৃষ্টি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ত। অন্যান্য প্রাণীর কথা উল্লেখই বাহুল্য। স্বয়ংক্রিয় এক বিস্ফোরণ থেকে বাতাস নামক এ অদৃশ্য জিনিসটা ঘটনাক্রমে সৃষ্টি না হলে সুন্দর, পরিপাটি এ বিশ্বজগত সৃষ্টি কি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হত না?


লেখাটি ‘‘আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন?’’ নামক একটি বইয়ের অংশবিশেষ। বইটি পুরোপুরি অনলাইনে পড়া যাবে। এই লিঙ্কে যেতে হবে:আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন? (পর্ব-১)

জাতীয় বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করার উপায়




আমার চাকরি শুরু হয়েছে ১৫ তম গ্রেডে ৯৭০০ টাকা স্কেলে। পিটিআইতে সি-ইন-এড প্রশিক্ষণের পর এক গ্রেড উন্নীত হয়ে ১৪ তম গ্রেডে এসেছে। বেতন তো বৃদ্ধি পাবার কথা স্বাভাবিকভাবেই। সত্যিই, মূল বেতন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু মোট বেতন গেছে কমে! কিভাবে?

আগে বাড়ি ভাড়া ছিল ৫০ শতাংশ। মাত্র এক গ্রেড বাড়তে না বাড়তেই এবার তা হয়ে গেছে ৪৫ শতাংশ! মূল বেতন বাড়লেও মোট বেতন কমে গেছে। বেতন বৃদ্ধির কথা বলে বরং বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে! একে কি তামাশা বলবেন, নাকি প্রহসন বলবেন, নাকি বঞ্চনা বলবেন, নাকি বলবেন ধোঁকা? যা-ই বলবেন, সবই ঠিক।

২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট প্রকাশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় যখন দেখেছি সরকার চাকরিজীবিদের বেতন আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছে, তখন বেতন স্কেলের অন্য দিকগুলো নিয়ে তেমন ভাববার প্রয়োজন মনে হয়নি। যেমন: আগে আট বছর পর যে টাইম স্কেল দেওয়া হতো, তা বাদ দিয়ে নতুন কাঠামোয় ১০ বছরে একটা গ্রেড বৃদ্ধির নিয়ম করা হয়।

আমার চাকরি শুরু মে ২০০৯ সালে। সেই হিসেবে ৮ বছরের জায়গায় ১০ বছরে, মানে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে একটা গ্রেড বৃদ্ধি পাবার কথা ছিল। কিন্তু ১১ বছর পার হয়ে যাবার পরও এখনো তার কোনো নাম-গন্ধও নেই। ‘‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’’ এবং ‘‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’’ এর মতো দুই দুইটি বড় প্র্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও এমন হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য হবার কথা ছিল না।
কথা সেটা নয়। কথা হচ্ছে, ৮ বছরের জায়গায় ১০ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটা গ্রেড পরিবর্তন হয়ে উন্নীত গ্রেডে যাবার পর আমাদের বেতন কত বৃদ্ধি পেতো?
বর্তমান বেতন কাঠামো বা গ্রেডগুলো সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তাদেরকে এ সম্পর্কে অনুমান করতে বললে তাদের অধিকাংশ মানুষের অনুমানের সাথে বাস্তবতার দূরত্ব অনেক অনেক বেশি হবে, সন্দেহ নেই। কারণ তারা সবাই ভাববে, প্রথমতঃ সরকারি চাকরি, দ্বিতীয়তঃ ১০ বছর চাকরি করার পর একটা গ্রেড বৃদ্ধি পাবে, নিশ্চয়ই অনেক টাকা বাড়বে।

কিন্তু বাস্তবতা কী বলে?
সেজন্য দেখতে হবে বর্তমান বেতন কাঠামো, যা প্রণয়ন করেছে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী কিছু প্রবীণ আমলা।
‘‘২০ তম গ্রেডের বেতন ৮২৫০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়ে ১৯ তম গ্রেডে বেতন হয় ৮৫০০ টাকা, ১৯ তম গ্রেড থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে ১৮ তম গ্রেডে বেতন হয় ৮৮০০ টাকা, ১৮ তম গ্রেড থেকে ২০০ টাকা বেড়ে ১৭ তম গ্রেডে বেতন হয় ৯০০০ টাকা, ১৭ তম গ্রেড থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে ১৬ তম গ্রেডে বেতন হয় ৯৩০০ টাকা, ১৬ তম গ্রেড থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে ১৫ তম গ্রেডে বেতন হয় ৯৭০০ টাকা, ১৫ তম গ্রেড থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে ১৪ তম গ্রেডে বেতন হয় ১০২০০ টাকা, ১৪ তম গ্রেড থেকে ৮০০ টাকা বেড়ে ১৩ তম গ্রেডে বেতন হয় ১১০০০ টাকা, ১৩ তম গ্রেড থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে ১২ তম গ্রেডে বেতন হয় ১১৩০০ টাকা, ১২ তম গ্রেড থেকে ১২০০ টাকা বেড়ে ১১ তম গ্রেডে বেতন হয় ১২৫০০ টাকা, ১১ তম গ্রেড থেকে ৩৫০০ টাকা বেড়ে ১০ম গ্রেডে বেতন হয় ১৬০০০ টাকা, ১০ম গ্রেড থেকে ৬০০০ টাকা বেড়ে ৯ম গ্রেডে বেতন হয় ২২০০০ টাকা, ৯ম গ্রেড থেকে ১০০০ টাকা বেড়ে ৮ম গ্রেডে বেতন হয় ২৩০০০ টাকা, ৮ম গ্রেড থেকে ৬০০০ টাকা বেড়ে ৭ম গ্রেডে বেতন হয় ২৯০০০ টাকা, ৭ম গ্রেড থেকে ৬৫০০ টাকা বেড়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন হয় ৩৫৫০০ টাকা, ৬ষ্ঠ গ্রেড থেকে ৭৫০০ টাকা বেড়ে ৫ম গ্রেডে বেতন হয় ৪৩০০০ টাকা, ৫ম গ্রেড থেকে ৭০০০ টাকা বেড়ে ৪র্থ গ্রেডে বেতন হয় ৫০০০০ টাকা, ৪র্থ গ্রেড থেকে ৬৫০০ টাকা বেড়ে ৩য় গ্রেডে বেতন হয় ৫৬৫০০ টাকা, ৩য় গ্রেড থেকে ৯৫০০ টাকা বেড়ে ২য় গ্রেডে বেতন হয় ৬৬০০০ টাকা, ২য় গ্রেড থেকে ১২০০০ টাকা বেড়ে ১ম গ্রেডে বেতন হয় ৭৮০০০ টাকা।’’

তার মানে ১৪ তম গ্রেডে যারা আছেন, তারা ১০ বছর চাকরি করার পর একটা গ্রেড বৃদ্ধি পাবার ফলে তাদের বেতন বাড়বে ৮০০ টাকা! ১০ বছর পর ‘মাত্র’ ৮০০ টাকা বেতন বৃদ্ধি করাটা কি রীতিমতো তামাশার বিষয় নয়?
পরবর্তী গ্রেড? পরবর্তী গ্রেডে অবশ্য ৮০০ টাকাও নয়, মাত্র ৩০০ টাকা বৃদ্ধির নিয়ম করা হয়েছে। একজন লোক যত অভিজ্ঞ হয়, চাকরি যত গাঢ় হয়, চাকরি করতে করতে একজন লোক যত দক্ষ হয়, তার বেতন বৃদ্ধির হার তত বাড়বে, এটই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের বেতন কাঠামোর চিত্র তার ঠিক উল্টো মেরুতে

১২ তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে গেলে ৩০০ টাকা থেকে লাফ দিয়ে বেতন বাড়ে ১২০০ টাকা (আগের তুলনায় ৪গুণ), আবার ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন বাড়ে ৩৫০০ টাকা (তিন গুণ প্রায়)! এই ১৪ তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে যাবার পথে বেতন কাঠামো কোনো ফর্মুলা বা ব্যাকরণ-ই অনুসরণ করেনি। কেন? এমন মনগড়া কাঠামো প্রণয়নের কী দরকার ছিল? প্রশ্ন জাগে, এমন ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য দেশের ‘সর্বোচ্চ মেধাবী কিছু প্রবীণ আমলা’কে নিয়োগ করার কি কোনো আবশ্যকতা ছিল? এজন্য তো এসএসসি পাস কয়েকজনকে নিয়োগ দিলেই কাজটা তারা অল্পসময়ে করে দিতে পারতো! প্রশ্ন জাগে, বেতন কাঠামো কি বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলারা প্রণয়ন করেছে? এখনও কি এদেশে বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমল চলছে? মোটেই না।

এই কাঠামো অল্পশিক্ষিত কেউ যেমন প্রণয়ন করেনি, বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলারাও করেনি, করেছে এদশেরই কিছু ‘উচ্চশিক্ষিত স্বার্থপর’ মানুষ, কাজেকর্মে যারা বৃটিশ বা পাকিস্তানী শাসনরীতিই অনুসরণ করে; যারা বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলা না হলেও বৃটিশ বা পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মার মতোই কাজটি করেছে। জমিদারী প্রথা আমরা দেখিনি, কিন্তু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, এখনো কাজেকর্মে আমাদের অনেকেই আমাদের সাথে জমিদারদের মতোই আচরণ করছে। এরা সেইসব জমিদারদের আক্ষরিক অর্থে উত্তরসূরী না হলেও তাদের প্রেতাত্মা, কোনো সন্দেহ নেই।

বর্তমান বেতন কাঠামোকে ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ বলা এবং এই কাঠামো প্রণেতাদেরকে ‘বৃটিশ-পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মা’ বা ‘জমিদারদের প্রেতাত্মা’ বলার কারণ সম্পর্কে উপরে সামান্যই বলা হয়েছে। আমরা এবার এই কাঠামোর আরো কিছু ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ বিষয় এবং কাঠামো-প্রণেতাদের স্বার্থপরতার আরো কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখবো।

২০ তম গ্রেড থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত মোট ৮টা গ্রেড মিলিয়ে যেখানে বেতন বাড়ে মাত্র ৩০৫০ টাকা, সেখানে ৭ম গ্রেড থেকে মাত্র ১টা গ্রেড বেড়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডে গেলেই বেতন বাড়ে ৬৫০০ টাকা, দ্বিগুণেরও বেশি! একটা গ্রেড পরিবর্তনে যেখানে সর্বোচ্চ বেতন বাড়ে ১২০০০ টাকা, সেখানে শেষের দশটা গ্রেড মিলিয়ে বেতন বাড়ে মাত্র ৭৭০০ টাকা!

আমরা উপরে বেতন কাঠামোয় গ্রেডে গ্রেডে বেতন বৃদ্ধির ধারা দেখেছি। বেতন বৃদ্ধির এই ধারা (২৫০<৩০০>২০০<৩০০<৪০০<৫০০<৮০০>৩০০<১২০০<৩৫০০<৬০০০>১০০০<৬০০০<৬৫০০<৭৫০০>৭০০০>৬৫০০<৯৫০০<১২০০০) কি বিজ্ঞানের কোনো সূত্র অনুসরণ করেছে, নাকি গণিতের কোনো সূত্র অনুসরণ করেছে, বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এটাকে লুডু খেলার মইয়ের সাথে তুলনা করারও সুযোগ নেই। কারণ সেখানে যে-কারও ভাগে বড় মইও পড়তে পারে, ছোট মইও পড়তে পারে। কিন্তু এখানে অন্যদের জন্য নির্দিষ্ট (ফিক্স) করে দেয়া হয়েছে শুধু বিভিন্ন আকারের ছোট ছোট মই, আর যারা কাঠামোটি প্রণয়ন করেছে, তাদের নিজেদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সব বড় বড় মই। এখানে প্রতিপক্ষের জন্য বড় মইয়ে ওঠার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি আর যারা খেলাটা আয়োজন করেছে, তাদের ভাগে ছোট মই পড়ার কোনো সম্ভাবনাই রাখা হয়নি। এটাকে ‘বৃটিশ-পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মা’দের কাজ মনে না করার সুযোগ কোথায়! এটাকে ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ না বলেও কি কোনো উপায় আছে?

বেতন বৃদ্ধির এই ধারায় ২৫০ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ২০০ টাকায় নেমে গেছে, আবার বাড়তে বাড়তে ৮০০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে পা পিছলে হঠাৎ নেমে গেছে ৩০০ টাকায়, আবার বাড়তে বাড়তে ৬০০০ টাকায় গিয়ে শেয়ার বাজারের মতো হঠাৎ নেমে গেছে ১০০০ টাকায়! এভাবে নাটকের পর নাটক হয়েছে মাত্র ২০টা গ্রেডের একটা কাঠামোতে। এটা কি শেয়ার বাজারের দরের উঠানামা? এটা সবার বিশ্বাস হবে, যারা এই কাঠামোটা করেছে, তাদের কাছে এই ‘উঠানামা’র পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো যুক্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ মনগড়া, যাচ্ছেতাই। স্বার্থপরতার সর্বোচ্চ প্রদর্শনী। বিমূর্ত কবিতা সম্পর্কে একটি রম্যরচনা পড়েছিলাম অনেক আগে একটি দৈনিক পত্রিকায়। সেখানে একটি গল্প উল্লেখ করা হয় এরকম, ইংল্যান্ডের একজন প্রসিদ্ধ কবির একটি কবিতার অনুষ্ঠানে এক পাঠক ঐ কবিকে তাঁর একটি কবিতার দু’টি চরণ উল্লেখ করে প্রশ্ন করলো, ‘স্যার, এই দু’টি চরণ দ্বারা আপনি কী বুঝিয়েছেন?’ কবি জবাবে বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, কবিতাটি যখন লিখেছিলাম, তখন এই চরণ দু’টির অর্থ শুধু আমি আর ঈশ্বর জানতাম, কিন্তু এখন দেখি শুধু ঈশ্বরই জানেন!’

আমার এক সহকর্মী বললো, ‘১২তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডে বেতন পায় কর্মচারী ও কামলারা, তাই তাদের গ্রেডে বাড়ে ২০০/৩০০ টাকা করে আর ১ম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে বেতন পায় কর্মকর্তা ও আমলারা, এই জন্য তাদের বেতন বাড়ে ৬০০০/৭০০০ টাকা করে।’

আমলা ছাড়া যারা এই বেতন কাঠামোর সুবিধার আওতার বাইরে, এমন ১ লক্ষ সচেতন মানুষের মতামত নেয়া হলে এমন ১ জনও খুঁজে পেতে কষ্ট হতে পারে, যে এরকম ধাপ নির্ধারণকে নিঃস্বার্থ, পক্ষপাতহীন ও যৌক্তিক বলে মতামত দেবে।

আমার মতো যারা ১৫তম গ্রেডে চাকরি শুরু করেছেন, তাদের (কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টে ভিন্ন হতে পারে) চাকরির ১০ম বছরে নতুন গ্রেডে উন্নীত হবার সময় ইনক্রিমেন্ট পেয়ে পেয়ে মূল বেতনের সাথে যোগ হয়েছে ৪৯২০ টাকা। অথচ ১০ বছর পর উন্নীত গ্রেডে যাবার ফলে তার চেয়ে বেশি না বেড়ে যদি মাত্র ৮০০ টাকা বাড়ে, তাহলে বিষয়টা কি পুরোপুরি তামাশা হয়ে যায় না? ১০ বছরে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে পেয়ে যা বেড়েছে, উন্নীত গ্রেডে তার চেয়ে বেশি বাড়লেই ১০ বছর অপেক্ষা করাটা সার্থক হতো। সকল শ্রেণির চাকরিজীবির ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য। এই দৃষ্টিকোণ থেকেও বর্তমান কাঠামোকে ‘যাচ্ছেতাই ও তামাশাপূর্ণ’ বলার সুযোগ থাকে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকার দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমার মনে হয়, দেশের উন্নত হবার পথে এক বড় বাধার নাম আমলাতন্ত্র। জাপানের একটা বিষয় লক্ষ্য করলে আমার এই মতামতের সত্যতা প্রমাণিত হবে। জাপানে শ্রমের মূল্য অনেক বেশি। সেখানে একজন মুচি বা নাপিতের আয়ও দেশের প্রথম সারির পেশাজীবিদের গড় আয়ের অনেকটা কাছাকাছি। দেশের সব নাগরিকের হাতে যেন পর্যাপ্ত টাকা থাকে, সে জন্য জাপান সরকার বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। সেখানে একজন নাপিতের গড় আয় মাসে ২০০০ ডলার। [দেখুন, জাপান কাহিনি ২য় খন্ড, আশির আহমেদ, ঐতিহ্য, পৃষ্ঠা-৬০] জাপানের মতো কোরিয়াতেও মানুষের আয়বৈষম্য নিরসনে সরকার সবসময় সচেষ্ট থাকে। অন্যরা যখন আয়বৈষম্য নিরসনের চেষ্টায় লিপ্ত, আমরা তখন আয়বৈষম্য বৃদ্ধির অপচেষ্টায় লিপ্ত, যার উজ্জ্বল উদাহরণ জাতীয় বেতন কাঠামো।
অস্ট্রেলিয়ায় যান। দেখবেন, সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতন যা, একজন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের বেতনও তার প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু বাংলাদেশে সব শ্রেণির মানুষের হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাক, এটা অন্তত এদেশের আমলাশ্রেণির মানুষ চায় না। এরা মারাত্মক স্বার্থপর, সঙ্কীর্ণ মনের অধিকারী। যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এই চরম বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো, যেখানে নিচের শ্রেণির এক গ্রেড পরিবর্তনে বেতন বাড়ে ৩০০/৮০০ টাকা করে আর উপরের শ্রেণির এক গ্রেড পরিবর্তনে বেতন বাড়ে ৬০০০/৭০০০ টাকা করে। কেন, সব গ্রেডে যদি আনুপাতিকহারে সমানভাবে বেতন বাড়ে, উপরের গ্রেডে চাকরিজীবিদের কি মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বা নিচের গ্রেডের চাকরিজীবিদের বেতন কি উপরের গ্রেডে চাকরিজীবিদের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে?
উপরের গ্রেডের চাকরিজীবিরা হয়তো বলতে পারেন, নিচের দিকের গ্রেডগুলোতে জনবল বেশি। তাই তাদেরকে বেশি বেতন দিতে গেলে দেশের অর্থনীতির উপর চাপ পড়তে পারে। যদি দেশের প্রতি তাদের এতোই মায়া থাকে, তাহলে নিজেদের গ্রেডগুলোর মধ্যকার ব্যবধান এত বেশি রেখেছেন কেন? এমনিতেই উপরের দিকের গ্রেডে চাকরি করছেন, এরপর বেতন বৃদ্ধিটা যদি নিচের দিকের গ্রেডগুলোর চেয়ে দু’তিন গুণ বেশি হতো, তবু কম হতো না। কিন্তু তাদের বেতন বাড়ে নিচের দিকের গ্রেডগুলোর চেয়ে ২০/২৫ গুণ বেশি করে। তাদেরকে এতো বেতন দিতে গেলে দেশের অর্থনীতির উপর কি চাপ পড়ে না? আসলে এসব হচ্ছে বাহানা। নিজেরা বেতন কম নিয়ে দেশপ্রেমের কথা বললে তা সত্যিকার দেশপ্রেম হতো।

বর্তমান বেতনকাঠামো অনুযায়ী মাস-শেষে সরকারের যে টাকা খরচ হয়, সবার বেতন আনুপাতিক হারে সমানভাবে (পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো) বৃদ্ধি করলেও সরকারের খরচ বেশ একটা বাড়বে না। তাছাড়া দেশের সব নাগরিকের প্রতি সুবিচার করতে গেলে যদি দেশের কিছু টাকা বাড়তি খরচ হয়, তা তো আর উপরের গ্রেডের চাকরিজীবিদের পকেট থেকে যাবে না! এদেশে সরকার যতো রাজস্ব পায়, তার বেশির ভাগ পায় সাধারণ মানুষ থেকে। উপরের গ্রেডের অল্প সংখ্যক চাকরিজীবি মুঠোফোনে কথা বলে প্রতি মাসে সরকারকে যা রাজস্ব দেয়, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি রাজস্ব দেয় নিচের দিকের চাকরিজীবিরা।

দেশের তৃণমূলে সরকারি দায়িত্ব পালন করছে নিচের দিকের চাকরিজীবিরা। উপরের শ্রেণির চাকরিজীবিদের কেউ কেউ শুয়ে-বসেই বেতন নিচ্ছে, পাচ্ছে বাড়তি অনেক সুবিধাও। একজন ইউএনও বা জেলা প্রশাসককে কখনো কি দেখেছেন কোনো উপজেলা বা জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর এক মাসের মধ্যে পুরো উপজেলা বা জেলা ঘুরে দেখেছে, সেই উপজেলা বা জেলায় কয়টি রাস্তা, কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুরবস্থায় আছে, কয়টি সংস্কারযোগ্য ক্ষেত্র আছে? কখনো কি দেখা যায়, একজন ইউএনও বা জেলা প্রশাসক কোনো এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর অল্প সময়ের মধ্যে সেই এলাকার প্রতিটা গ্রাম/ইউনিয়ন ভিত্তিক মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের সাথে পরিচিত হতে, তাদের সমস্যার কথা একান্তে শুনার ব্যবস্থা করতে? দেখা যায় না। এরা মূলত মিটিংয়ে মিটিংয়েই সময় কাটায়। এদের দৃশ্যমান কাজ খুব অল্প। যেমন: পাবলিক পরীক্ষা পরিদর্শন, বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দেয়া, কারেন্ট জাল নিধন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা ইত্যাদি।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নাম, কিংবা একজন সংসদ সদস্য বা উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম যেভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাই জানে, একজন ইউএনও বা জেলা প্রশাসকের নাম সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলার মানুষ সেভাবে জানে না। এরা কোনো উপজেলা বা জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর কয়েক বছর চাকরি করলেও সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলার অধিকাংশ মানুষ এদেরকে চেনা দূরের কথা, এদের নামটা পর্যন্ত জানে না। আক্ষরিক অর্থে এরা মানুষের খুব কম কাজেই লাগে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিজীবিরা শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের সেবা করে, খুব কমই এরা শুয়ে-বসে থাকতে পারে। কিন্তু বেতনের ক্ষেত্রে সুবিধাগুলো নিয়ে নেয় প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবিরা। এটাই বৃটিশ বা পাকিস্তানী মানসিকতা, এটাই জমিদারসুলভ আচরণের প্রতিফলন।

উপরের গ্রেডে চাকরিজীবিদের স্বার্থপরতার কাছেই জিম্মি হয়ে আছে দেশের সামগ্রিক মানুষের জীবনমানের উন্নতি। একটা বিশেষ শ্রেণির হাতে দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বেশি। সরকার বিষয়টা যতদিন বিবেচনায় না নেবে, ততদিন দেশ সত্যিকার উন্নতির পথ খুঁজে পাবে না।

বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ যখনই নেয়া হয়, তখন অথবা পরবর্তী পে-স্কেল যখনই দেয়া হয়, তখন কিছু প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ থাকবে।

১. প্রতি গ্রেডে ব্যবধান যেন আনুপাতিকহারে সমান করে দেয়া হয়। এতে উপরের দিকের গ্রেডে যারা চাকরি করে, তাদের কোনো ক্ষতি হবার কথা নয়। কারণ তারা তো বড় স্কেলেই চাকরি শুরু করেছে।
‘আনুপাতিকহারে সমান’ করার প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত চাইলে অনেক রকম মতামত আসতে পারে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, পক্ষপাতহীন ও নিঃস্বার্থ মতামত হতে পারে প্রতি গ্রেডে শতকরা হারে বেতন বৃদ্ধি করার নিয়ম রাখা হলে। যেমন: প্রতি গ্রেডে ২০ শতাংশ বা ২৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি করা হলে গ্রেডে গ্রেডে ‘ব্যবধান’কে কোনোভাবে ‘বৈষম্য’ বলার সুযোগ থাকবে না; কোনো শ্রেণির চাকরিজীবি এতে অসন্তুষ্ট হবে না; সবাই যার যার স্কেল এবং উন্নীত গ্রেড নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। এটা ঠিক বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের মতো।
সর্বশেষ গ্রেড (২০ তম বা ১৬ তম) নির্ধারণ করে সেখান থেকে শতকরা হারে উপরের সব গ্রেডের বেতন নির্ধারণ করা হোক। সর্বশেষ গ্রেডে ৯০০০ বা ১০,০০০ টাকা হলে সহজে উপরের গ্রেডগুলো ১৫ শতাংশ বা ২০ শতাংশ বা ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করে নির্ধারণ করা যাবে।
২. ২০ গ্রেড থেকে কমিয়ে ১৬ গ্রেড করা হলে অনেক দিক থেকে ভালো হতে পারে।
. প্রতি ৮ বছর পর পর যেন সকল চাকরিজীবির বেতন গ্রেড পরিবর্তন করা হয়, চাকরিজীবনে ন্যূনতম ৩ বার যেন উন্নীত গ্রেডে যাবার সুযোগ থাকে। এতে যেসব পদে প্রমোশনের সুযোগ নেই, সেসব পদে চাকরিজীবিদের মনে হতাশা কমবে। যেমন: তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবি যারা, তারা ১২ তম গ্রেডে চাকরি শুরু করবে, এরপর প্রতি ৮ বছর পর পর নতুন গ্রেডে যেতে যেতে শেষে ৯ম গ্রেড পর্যন্ত পৌঁছবে, এভাবে ১ম শ্রেণির চাকরিজীবিরা ৪র্থ গ্রেডে চাকরি শুরু করবে, এরপর প্রতি ৮ বছর পর পর নতুন গ্রেডে যেতে যেতে ১ম গ্রেড পর্যন্ত পৌঁছবে। এতে কোনো শ্রেণির চাকরিজীবি নিজের শ্রেণি অতিক্রম করে উপরের শ্রেণি স্পর্শ করার সম্ভাবনাও থাকবে না, যা বর্তমান কাঠামোয় আছে এবং অযৌক্তিক।
৪. সরকারি চাকরিতে যেহেতু মোট ৪টি শ্রেণি, গ্রেড কমিয়ে ১৬টি করে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৬টি গ্রেডকে ৪ শ্রেণি দিয়ে ভাগ করে প্রতি শ্রেণির প্রান্তিক গ্রেডকে সেই শ্রেণিতে নিয়োগের প্রারম্ভিক গ্রেড হিসেবে নির্ধারণ করা হোক। যেমন: প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবিদের নিয়োগ হবে ৪র্থ গ্রেডে, দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিজীবিদের নিয়োগ হবে ৮ম গ্রেডে। তাহলে সব শ্রেণির চাকরিজীবিই নিজের পদ, সম্মান ও বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে; বর্তমান কাঠামোর অনেক জটিলতা এবং অসঙ্গতিও দূর হবে।

৫. বেতন কাঠামোয় বর্তমান ২০ গ্রেডের ভেতরে ভেতরে যেসব খুচরা খুচরা ধাপ রাখা হয়েছে, সেগুলো রাখার কোনো যৌক্তিকতা আছে কিনা, সে ব্যাপারে জনমত যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এগুলোর যৌক্তিকতা বা প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই অধিকাংশ মানুষ মতামত দিতে পারে। সর্বশেষ গ্রেডের মূল বেতন ৯০০০ বা ১০,০০০ টাকা নির্ধারণ করে ১৫/২০/২৫ শতাংশ হারে প্রতি গ্রেডে বৃদ্ধি করা হলে খুচরা খুচরা ধাপগুলোর প্রয়োজনীয়তা একেবারে দূর হয়ে যাবে।

৬. বর্তমান কাঠামোয় গ্রেড উন্নীতকরণের পাশাপাশি বাড়িভাড়া কমানোর নিয়ম রাখায় উন্নীত গ্রেডে যাওয়াটা অনেকের জন্য বঞ্চনা ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাড়িভাড়া তো দিন দিন বাড়েই, কমে না। তাহলে কেন বাড়িভাড়া কমানো হবে? বাড়িভাড়া কমানোর নিয়ম উন্নীত গ্রেডে যাবার সাথে সাংঘর্ষিক। তাই এই নিয়ম বাতিল করা উচিত।

তবে এখনকার মতো ২০টি গ্রেড রাখলেও বড় ধরনের সমস্যা নেই। তখন প্রতিটি শ্রেণির জন্য গ্রেড হবে ৫টি। প্রতি গ্রেডের চাকরিজীবিকে নিয়োগ দেয়া হবে সেই শ্রেণির প্রাথমিক গ্রেডে। যেমন প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবিদের নিয়োগ হবে ৫ম গ্রেডে, তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবিদের নিয়োগ হবে ১৫তম গ্রেডে। সেক্ষত্রে প্রত্যেক শ্রেণির চাকরিজীবিদেরকে চাকরিজীবনে চারবার উন্নীত গ্রেডে যাবার সুযোগ রাখতে হবে।
এককথায় প্রতি গ্রেডের ব্যবধান আনুপাতিক হারে সমান রাখতে হবে এবং সব শ্রেণির চাকরিজীবির জন্য সমান হারে প্রমোশন/উন্নীত গ্রেডে যাবার সুযোগ রাখতে হবে। তাহলেই বৈষম্য দূর হতে পারে।

নূর আহমদ : সরকারি চাকরিজীবি


লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ জানাতে পারেন এই পেইজে: https://www.facebook.com/nurahmad.bangladeshi/posts/104529757819418

ডিম আগে, না মুরগী আগে?- এর উত্তরেই আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়

'ডিম আগে, না মুরগী আগে?' এক শাশ্বত ধাঁধাপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তরের মীমাংসা নাকি নেই! অথচ এই এক প্রশ্নের আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় অকাট্যভাবে। বিশ্বাস না হলে বাকি অংশ পড়ুন...

কেউ বলে, ডিম আগে; কেউ বলে, মুরগী আগে। উভয় পক্ষের পক্ষে শক্ত (!) যুক্তি থাকার কারণে কোনো পক্ষই প্রতিপক্ষের যুক্তি মেনে নিতে চান না। এখনো বিশ্বের অনেক জ্ঞানী মানুষের কাছে এক সমাধানহীন প্রশ্ন এটি।

যারা মনে করে, ডিম আগে অস্তিত্ব লাভ করেছে,

পরে সেই ডিম থেকেই মুরগী হয়েছে এবং এভাবেই মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে, তাদের যুক্তি হলো, যেহেতু ডিম থেকেই মুরগীর বাচ্চা জন্ম নেয়, তাই পৃথিবীতে ডিমই আগে আসার কথা। তাই, যারা বলে মুরগী আগে এসেছে, তাদেরকে বলতে হবে, ডিম ছাড়া কিভাবে সেই মুরগীটি এসেছে?!

                 আরো পড়তে পারেন:     স্র্রষ্টা বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?

অন্যদিকে যারা বলে, ডিম নয়, বরং মুরগীই পৃথিবীতে আগে এসেছে, তাদের যুক্তি হলো, মুরগী ছাড়া ডিমের অস্তিত্ব যেহেতু্ সম্ভব নয়, আর মুরগী থেকেই যেহেতু কেবল ডিম হতে পারে, তাই আগে মুরগী অস্তিত্ব লাভ করেছে, এরপর সেই মুরগী ডিম দিয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়ার মাধ্যমেই মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে। তাই যারা বলে ডিম আগে এসেছে, তাদেরকে বলতে হবে কোনো মুরগী ছাড়া কিভাবে পৃথিবীতে ডিম অস্তিত্ব লাভ করেছে?

প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নটির অবতারণা প্রথমে যেই ব্যক্তি করেছে এবং এখনো যারা প্রশ্নটির সদুত্তর খুঁজে অস্থির হচ্ছে, তাদের চিন্তাশক্তিএকেবারে অগভীর। কারণ প্রশ্নটি যে একেবারেই অবান্তর! যেহেতু, শুধু একটা ডিম বা একটা মুরগী থেকে পৃথিবীতে মোরগের বংশবিস্তার কখনোই সম্ভব নয়!

যদি শুধু একটা ডিম প্রথমে অস্তিত্বে আসতো, তাহলে ওই ডিমে ‘তা’ দেয়ার জন্য একটি মুরগীর প্রয়োজন নিশ্চয়ই হতো। তাছাড়া ডিম থেকে বাচ্চা হতে হলে যে মুরগীটি ডিম পেড়েছে, ডিম পাড়ার আগে তার সাথে কোনো ‘মোরগ’ -এর শারীরিক সম্পর্ক অবশ্যই প্রয়োজন হতো।

কোনো মুরগী-ই ডিমটিতে ‘তা’ দেয়া ছাড়া এবং ডিম পাড়ার আগে সেই মুরগীর সাথে কোনো একটি মোরগের শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া সেটি থেকে বাচ্চা হবার প্রশ্নই আসে না। অপরদিকে যদি মনে করা হয়, প্রথমে একটিমাত্র মুরগী পৃথিবীতে অস্তিত্বলাভ করেছে এবং সেই মুরগীর ডিম থেকেই মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে, তাহলে এই প্রশ্ন থেকে যায়, যদি মুরগীটি ডিম দেয়, তাহলে কোনো মোরগের সাথে দৈহিক মিলন ছাড়া তো ডিমগুলোতে বীজ হবে না, তবু কী করে মুরগীটির ডিম থেকে বাচ্চা হলো?!

আসলে কোনো একটি ডিম বা মাত্র একটি মুরগী থেকে পৃথিবীতে মোরগের বংশবিস্তার হয়নি; একইসাথে একজোড়া মোরগ-মুরগীর আবির্ভাবের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মোরগের বংশ বিস্তার লাভ করেছে।

এখন প্রশ্ন হলো, ১. অন্য প্রায় সব দিক থেকে একই রকম, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন লিঙ্গের দু’টি প্রাণি একই সাথে পৃথিবীতে কোত্থেকে এলো? ২. মাত্র কোনো এক লিঙ্গের এরকম একটি প্রাণি কেনো এলো না? ৩. তাছাড়া দু’লিঙ্গের দু’টি প্রাণি পৃথিবীর দু’প্রান্তে আবির্ভুত না হয়ে একসাথে একই জায়গায় আবির্ভুত হলো কেনো?

এটা নিশ্চয়ই একটা পরিকল্পিত বিষয়, যা কোনো মহশক্তিশালী সত্ত্বার কাজ। আল্লাহ তায়ালা সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নাম্বার আয়াতে বলেন - سُبْحٰنَ الَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ - "পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সকল জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যমীন যা উৎপন্ন করেছে তা থেকে, মানুষের নিজদের মধ্য থেকে এবং সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না ।" সুবহানাল্লাহ!

পড়তে পারেন একটি বিশেষ নিবন্ধ: ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা বিজ্ঞান-সৃষ্ট ভুত!

দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ‘‘ডিম আগে না মুরগি? জানুন সঠিক উত্তর’’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘‘২০১০ সালে এক বৃটিশ বিজ্ঞানী এক সুপার কম্পিউটারকে নিযুক্ত করলেন এই চিন্তার জন্য। সুপার কম্পিউটার ও বিজ্ঞানীরা মিলিতভাবে মুরগির জরায়ুতে এক স্পেশাল প্রোটিন পেল ওভোক্লেডিডিন-১৭ নামে। দেখা যাচ্ছে এই প্রোটিন ক্যালসিয়ামকে ক্যালসাইটিন ক্রিস্টাল বানিয়ে ডিমের খোলস বানাচ্ছে।

কুসুমের বৃদ্ধি ও নতুন মুরগির জন্ম হতে এই খোসা ও ফ্লুইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী শেফিল্ড ও ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ডিমের গঠন প্রক্রিয়ার ওপর সুপার কম্পিউটার জুম করেন। পরীক্ষা প্রমাণ করেছে ডিমের গঠনের জন্য ওসি-১৭ প্রোটিনের প্রয়োজন আবশ্যক।

এই প্রোটিনের ক্যালসিয়াম কার্বোনেটকে ক্যালসাইট ক্রিস্টালে পরিণত করে যা ডিমের শক্ত খোসার গঠন তৈরি করে। অনেক প্রাণীর শরীরের হাড়ের মধ্যেও ক্যালসাইট ক্রিস্টাল পাওয়া যায়। কিন্তু মুরগির শরীর যে কোনও প্রাণীর থেকে এই ক্রিস্টাল বেশি তাড়াতাড়ি তৈরি করে।

প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬ গ্রাম করে ক্যালসাইট ক্রিস্টাল তৈরি হয় মুরগির শরীরে। শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিয়ারিং মেটিরিয়াল বিভাগের ড. কলিন ফ্রিম্যান জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই মনে করা হত ডিম মুরগির আগে এসেছে। কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে মুরগি ডিমের আগে এসেছে।

ভারত ভিত্তিক দেওবন্দ মাদ্রাসার এক মুফতি বলেছেন, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)। তাকে আল্লাহ পাক পিতা মাতা ছাড়া সৃষ্টি করছেন এবং যুবক বয়স দান করছেন। তার সন্তান হচ্ছি আমরা, এজন্যই আমাদের বলা হয় আদম সন্তান।

এখন সেই সূত্রে প্রমাণিত হয় মানুষের মত সকল জীবের জম্ম মানুষ সৃষ্টির মতই। আদমের (আ.) মাধ্যমে যেমন আমরা ঠিক তেমন মুরগি থেকেই ডিম এবং পরে মুরগির জম্ম। এরকম সব প্রাণী তার পূর্ররূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি ডিম নয়, মুরগি আগে।

ইরান ভিত্তিক একজন ধর্মীয় নেতা বলছেন, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কোরআনের ৫১ নম্বর সূরা যারিয়াতের ৪৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আমি প্রত্যেক প্রাণী সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। এতে প্রমাণিত হয় আগে বীজ নয়, প্রাণীকে অর্থাৎ মুরগিকেই আগে পাঠানো হয়েছে।’’

দৈনিক যুগান্তর: ২৫ আগস্ট ২০১৮, লিঙ্ক: https://www.jugantor.com/useful/83496

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এগুলো কি বংশগত ভাবে হয়?

বিশ্বের প্রায় সব গবেষণার ফলাফল এবং ডাক্তারের মতামত হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এই রোগগুলোর একটা প্রধান কারণ বংশের কারো থাকা। বাবা-মা বা পূর্বপুরুষদের কারো থাকলে নাকি সন্তানের এই রোগগুলো হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।

‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি লেখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ উচ্চ রক্তচাপের কারণ সম্পর্কে প্রথমে বলেন, ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে।’ পরে উচ্চ রক্তচাপের আশংকা বাড়ায়, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রথমেই বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশংকা থাকে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২১ জুলাই ২০১৭ তারিখে ‘বংশগত কারণে কি হৃদরোগ হয়?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লেখায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি)  ডা. এম শমশের আলী বলেন, ‘বাবা অথবা মা যে কোনো একজনের কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগ থাকলে ৫০ ভাগ ছেলেমেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হবে এটা স্বতঃসিদ্ধ।
কিছুদিন আগে এক রোগী দেখলাম। বয়স ৪০ থেকে ৪২ বছরের মতো হবে। পুরুষ মানুষ, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ভদ্রলোক বিগত চার-পাঁচ দিন যাবৎ বুকে ও পিঠে চাপের মতো অনুভব করছেন এবং স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সামান্য বুক-পিঠ ব্যথায় এত বেশি উদ্বিগ্নতা দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ২-৩ মাস আগে তার বড় ভাই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং দুই বছর আগে তার জন্মদাতা পিতাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন নিশ্চয়ই আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটা স্পষ্ট হলো যে, রোগীর হার্টের দেয়াল পুরু হয়ে গেছে, তাও আবার সাধারণ মানুষের হার্টের দেয়ালের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ। এ ধরনের সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিওমাইওপ্যাথি বলা হয়। সচরাচর এসব রোগী সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন বা তারা নিজেরাও কখনো হার্টের অসুস্থতার কোনোরূপ লক্ষণ তার শরীরে বিদ্যমান আছে, তা অনুভব করেন না। তবে এসব রোগী যদি কখনো অতিমাত্রায় পরিশ্রম করতে যান, তখন কারও কারও বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে বা অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে, আবার এ সময় অনেকের বুক ধড়ফড় বা মাথা ঘোরাতে পারে। এ ধরনের লক্ষণকে সব সময় মারাত্মক হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কার্ডিওমাইওপ্যাথি এমন এক ধরনের হৃদরোগ যাকে পুরোপুরি বংশগত হৃদরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে এবং বংশগত অনেক হৃদরোগের মধ্যে কার্ডিওমাইওপ্যাথিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাবা অথবা মা যে কোনো একজনের কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগ থাকলে ৫০ ভাগ ছেলেমেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হবে এটা স্বতঃসিদ্ধ।’

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস’ (বাংলাদেশ) উপলক্ষ্যে ‘প্রতিরোধই বাঁচার উপায়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন বাংলাদেশের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি সেখানে লিখেন, ‘রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হলে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। সাধারণত ডায়াবেটিস বংশগত কারণে এবং পরিবেশের প্রভাবে হয়।...যাদের বংশে রক্ত-সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন খুব বেশি, যাদের বয়স ৪০-এর ওপর এবং যারা শরীরচর্চা করেন না- গাড়ি চড়েন এবং বসে থেকে অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

তাছাড়া বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে কোনো ডায়াবেটিস রোগী গেলে প্রায় সব ডাক্তার খুব কমন একটি প্রশ্ন করেন রোগীকে, ‘আপনার বাবা-মা কারো কি ডায়াবেটিস ছিল?’ রোগী ‘হ্যাঁ’ বললেই হলো। ডাক্তার নিশ্চিন্তে এরকম কথা বলে ফেলেন, ‘আপনার রোগটি তাহলে বংশগত।’ ডাক্তারদের এই মন্তব্যগুলো সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন অসংখ্য মানুষ ডায়াবেটিস রোগটিকে বংশগতই মনে করছে।

রোগ তিনটি যে বংশগত নয়, তা নিয়ে এ লেখায় বেশ কয়েকবার আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ৫ এবং ৬ নং অধ্যায়ে। তবু বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরো পরিষ্কার করার জন্য ভিন্ন অধ্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন মনে হয়েছে।

এক. যারা বলে থাকেন রোগ তিনটি বংশগত কারণে অনেকের হয়ে থাকে, তাদের কেউ কি এটা অস্বীকার করেন, এই তিনটি রোগের জন্য শরীরে কোলেস্টেরলের আধিক্য প্রধান দায়ী?
যদি অস্বীকার না করেন, তাহলে বলতে হবে, যেসব মানুষের বাবা-মা বা বংশের পূর্ব-পুরুষের কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে, যদি সেসব মানুষ শৈশব থেকেই বা রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার আগেই যে কোনো উপায়ে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে না দেয় (যেমন: নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়াম করার ফলে বা কায়িক শ্রমের পেশায় জড়িত থাকার কারণে এমনিতেই দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘন্টা কায়িক শ্রম হয়ে যায়, যার ফলে ওদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না), তবুও কি তাদের শরীরে তাদের পূর্বপুরুষের কারো রোগগুলো থাকার কারণে রোগগুলো জন্ম নেবেই?

দুই. ৫০ বছরের কম বয়সী যেসব লোক এখন এসব রোগে আক্রান্ত, দেখা যাবে তাদের কারো কারো বাবা-মায়েরও হয়তো এসব রোগ ছিল/আছে। কিন্তু ৭০ বছরের বেশি বয়সী যারা এখন এসব রোগে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে, যাদের বাবা-মা কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন বা ডায়াবেটিস/উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছেন। দেখা যাবে, এ বয়সী লোকদের প্রায় সবার বাবা-মা অন্য কোনো রোগে মারা গেছেন। তাই ৫০ বছরের কম বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের রোগটিকে অনেক ডাক্তার বংশগত বলার সুযোগ থাকলেও ৭০ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে রোগটিকে বংশগত বলবেন কিভাবে!

তিন. আমার যে ভগ্নিপতির কথা দিয়ে এ লেখা শুরু করা হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কষ্টকর জীবন যাপন করছেন। তাঁর দু’জন বোনের একজন হার্ট অ্যাটাকেই মারা গেছেন, আরেকজন হার্ট অ্যাটাক এবং সমজাতীয় রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে কষ্টকর জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁর আরও দু’ভাই হার্ট অ্যাটাক এবং সমজাতীয় রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে শেষে হার্ট অ্যাটাকেই মারা যান। তাঁর বাবা বা মা যদি হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতেন, ডাক্তাররা অবশ্যই তাঁর বা তাঁর ভাই-বোনদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত রোগ বলে দিতেন নির্দ্বিধায়। কিন্তু তাঁর বাবা-মা কেউই হার্ট অ্যাটাকে মারা যাননি, তাঁকে জিজ্ঞেস করে বিষয়টা জানতে পেরেছি।

আমাদের বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নাম মরিয়ম বেগম। তাঁর একটা ছেলে ২০১৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠার কিছুদিনের মধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে বসে। ছেলেটি তখন স্থূল ছিল। ডাক্তারের কাছে নেয়ার পর ডাক্তার অবশ্য তার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলেননি। হয়তো বলতেন যদি তার বাবা-মা কারো রোগটি থাকতো। তার বাব-মা অবশ্য পরে কখনো রোগটিকে যে আক্রান্ত হবে না, তা বলা যায় না। জানি না, তখন আবার ডাক্তার বলে বসেন কিনা, ওর ডায়াবেটিস হওয়ার কারণেই ওর বাবা-মা ডায়াবেটিস হয়েছে?!

আমার মেঝো ভাইয়ের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার কথাও এ লেখায় বলা হয়েছে। তিনি উচ্চ রক্তচাপে যখন আক্রান্ত হন, তখন আমার বাবা-মা কারো উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। পরে একসময় আমার বাবা-মা সাংসারিক কাজকর্ম অনেকটা ছেড়ে দেয়ার পর উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। এখন কি বলা যাবে, সন্তানের উচ্চ রক্তচাপ তার বাবা-মায়ের শরীরেও সংক্রমিত হয়?!

আমার ছোট বোনের একমাত্র ননদের স্বামী ৩৫ বছরের মতো বয়সে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কর্মরত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বছর তিনেক আগে, যখন তাঁর বাবা-মা কেউ হার্ট অ্যাটাক বা সমজাতীয় বাকি রোগ দু’টিতে আক্রান্ত হয়নি। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা চল্লিশ বছর বয়সের আগেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, অথচ তাদের বাবা-মা কেউ তখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তও হননি, মারা যাওয়া দূরের কথা। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের বাবা-মা কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে না হতে নিজেরা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে যায় কি ভুলবশত? অর্থাৎ তাদের বাবা-মা আগে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা, তারা আক্রান্ত হলে তাদের সন্তানরা উত্তরাধিকার সূত্রে পরে আক্রান্ত হবে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক ভুল করে আগে সন্তানকে আক্রমণ করে বসেছে! এমন হওয়া কি সম্ভব? সম্ভব না হলে রোগগুলোকে বংশগত বলা যাবে কিভাবে?

চার. যেসব লোকের ক্ষেত্রে বলা হয়, তারা তাদের বাবা-মায়ের কেউ এসব রোগে আক্রান্ত হবার কারণেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে, সেসব লোকের বাবা-মায়ের পূর্বপুরুষেরও এসব রোগ ছিল কিনা, তা কি কোনো ডাক্তার যাচাই করে দেখেন? যদি তৃতীয় পক্ষ (শেষ প্রজন্ম) বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে এসব রোগের উত্তরাধিকারী হয়, তাহলে দ্বিতীয় পক্ষও নিশ্চয় তাদের বাবা-মা থেকে এসব রোগের উত্তরাধিকারী হবার কথা। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যায়, এখন যারা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের তেমন কারোই দাদা-দাদী বা নানা-নানী এসব রোগে আক্রান্ত হয়নি। তাহলে তাদের রোগগুলো বংশগত বা জিনগত হলো কিভাবে?! ‘জিনগতভাবেও রোগগুলো বংশপরম্পরায় সংক্রমিত হয়’, কথাটি তখনই সত্য হবে, যখন কারো রোগগুলো হবার পর দেখা যায়, তার পূর্বপুরুষদের যত সিঁড়ির খবর নেয়া যায়, সবাই রোগগুলোতে আক্রান্ত ছিল। যদি শুধু বাবা-মা কারো থাকে, কিন্তু দাদা-দাদী কারো না থাকে, তাহলে রোগগুলোকে বংশগত বলা হবে চরম ভুল।

পাঁচ. ২০ বছরের কম বয়সী যেসব শিশু-কিশোর এখন ডায়াবেটিস বা সমগোত্রীয় কোনো রোগে আক্রান্ত, যদি ওরা ওদের বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে এদের বাবা-মা কেউই এখনো রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়নি। তবে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, এরা স্থূল (বেশি বেশি খাওয়ার কারণে বা শারীরিক পরিশ্রমের সাথে খুব কম জড়িত থাকার কারণে)। এসব শিশু-কিশোরের অধিকাংশের পিতামাতা-ই যদি এখনো ডায়াবেটিসসহ সমগোত্রীয় রোগগুলোতে আক্রান্ত না হয়ে থাকে, তাহলে অল্প অংশের উপর ভিত্তি করে এদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলা কিভাবে ঠিক হবে? আর যেহেতু এদের প্রায় সবাই স্থূল, আর স্থূলতা থেকেই অনেকে এসব রোগে আক্রান্ত হয়, তাই স্থূলতাকে এদের এসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করতে অসুবিধা কোথায়?

আর ২০ বছরের কম বয়সী যেসব শিশু-কিশোর এসব রোগে আক্রান্ত, সে প্রথম সন্তান হোক বা শেষ সন্তান হোক, যদি দেখা যায় ওর বাবা-মাও এসব রোগে আক্রান্ত, দেখা যাবে ওর বাবা-মা শারীরিকভাবে স্থূল, না হয় শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে বা খাওয়া-দাওয়ায় রসিক। ওর বাবা-মা যে কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত, সে-ও একই কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত হতে পারে। ওর রোগটাকে তখন বংশগত বলার কোনো মানে নেই।

ছয়. বিষয়টা নিয়ে আগের আলোচনায় একটা যুক্তি দেয়া হয়েছে এভাবে, ডাক্তাররা এমন অসংখ্য মানুষের এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলে থাকেন, যারা জন্মের সময় তাদের বাবা-মা কারো রোগগুলো ছিল না, তাদের থাকা তো দূরের কথা। পরে তাদের বাবা মা হয়তো ৬০-৭০ বছর বয়সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হলো এবং তারা রোগগুলোতে আক্রান্ত হলো তাদের বয়স যখন ৩০-৪০ বছর। তাদের জন্মের সময় তাদের বাবা-মায়ের যে রোগগুলো ছিল না, তাদের জন্মের ৩০-৪০ বছর পর তাদের বাবা-মাকে যে রোগগুলো আক্রমণ করলো, সে রোগগুলো তাদের জন্মের ৩০-৪০ বছর পর তাদের বাবা-মায়ের শরীর থেকে তাদের শরীরে আসে কিভাবে?! বায়ুবাহিত না হলে এমন হওয়া সম্ভব নয়।

এই লেখায় এ কথাটা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এই তিনটি রোগের মূল কারণ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা। যদি শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরের থাকার পাশাপাশি কেউ বেশি বেশি খায় বা মুটিয়ে যায়, তার এ রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় শতভাগ।

যদি কারো বাবা-মা বা পূর্বপুরুষ কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, আর সে এখনো রোগগুলোতে আক্রান্ত না হয়, তাহলে নিয়মিত অন্তত এক ঘন্টা যে কোনো উপায়ে শারীরিক পরিশ্রম করলে সে এই রোগগুলো থেকে নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। কোনো কারণে যদি কেউ কখনো শারীরিক পরিশ্রম করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখনই শুধু সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
রোগগুলোকে বংশগত রোগ বলার কারণে কমপক্ষে দুই শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়- (১) যাদের এখনো রোগগুলো হয়নি, তারা যখন জানে রোগগুলো বংশগত, তখন দেখে নিজের বাবা-মা কারো রোগগুলো হয়েছে কিনা। যদি দেখে হয়নি, তখন সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিশ্চিন্ত থাকে, রোগগুলো প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করে না। এভাবে একসময় সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, সত্যিকারার্থে যে কারণে রোগগুলো হয় সে কারণে। (২) যেসব লোকের বাবা-মা কেউ রোগগুলোতে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে গেছে, তারা যখন জানে, রোগগুলো বংশগত, তখন তাদের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, কখন তারা আবার রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে বসে! এই আতঙ্ক তাদের মন থেকে কোনোভাবে দূর করা যায় না এবং রোগগুলো প্রতিরোধের কোনো চেষ্টাই তারা করে না। কারণ রোগগুলো যে বংশগত! এভাবে একসময় এরাও রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এই দু’রকম ঘটনা এখন সমাজে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে শুধুই রোগগুলোকে বংশগত বলে অপপ্রচারের কারণে। আশা করি এই অপপ্রচার বন্ধ হবে।

হ্যাঁ, রোগগুলোকে তখনই বংশগত বলার সুযোগ থাকবে, যখন দেখা যাবে কোনো শিশু মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে ওর বাবা-মা কারো রোগগুলো থাকে এবং শিশুটি ভুমিষ্ট হবার পর পরই বা মায়ের দুধ পান করা শেষ হতে না হতেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুটি মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে যদি ওর বাবা-মা কারো রোগগুলো না থাকে এবং ভুমিষ্ট হবার কয়েক বছর পর বা মায়ের দুধ পান শেষ হবার কয়েক বছর পর যদি ওর বাবা-মা কারো শরীরে রোগগুলো দেখা দেয়ার পর পরে কখনো শিশুটিও রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, তখন শিশুটির রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলার কোনো সুযোগই থাকবে না। কারণ বাবা-মায়ের ঐসব রোগই কেবল সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে, যেসব রোগ সন্তান মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে বাবা/মা কারো থাকে এবং ঐ সময়েই সন্তানের দেহে সংক্রমিত হয়। এসময় যদি বাবা-মা কারো শরীরে রোগগুলো না থাকে বা থাকলেও সন্তানের শরীরে সংক্রমিত না হয়, তাহলে পরে আর সংক্রমিত হবার কোনো সুযোগ থাকে না। বায়ুবাহিত রোগ হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এগুলো বায়ুবাহিত রোগ নয়।

শিশু মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে যদি বাবা/মা কারো রোগগুলো থাকে এবং তাদের শরীর থেকে তার শরীরে এরকম কোনো রোগ সংক্রমিত না হয়, তাহলে পরে যতদিন সে বেঁচে থাকে, যদি সে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম (খেলাধুলা, হাঁটা, সাঁতার, শারীরিক শ্রমের যে কোনো কাজ ইত্যাদি) করার পাশাপাশি স্থূলতা, বেশি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে পারে, তার শরীরে রোগগুলো জন্ম নিতে পারবে না। আর যদি কোনো সন্তান জন্মের অনেক বছর পর ওর বাবা-মা কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, তাহলে তো কোনোভাবেই রোগগুলো সন্তানের শরীরে সংক্রমিত হতে পারবে না।

ডাক্তারদের মধ্যে একটা সাধারণ প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, যা মানুষকে মারাত্মকভাবে বিভ্রান্ত করছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত কোনো রোগী ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক সময় ডাক্তার প্রথমে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার বাবা/মা কারো কি রোগটি ছিল?’ রোগী ‘হ্যাঁ’ বললে ডাক্তার সাথে সাথে মন্তব্য করে, ‘তাহলে আপনার রোগটি বংশগত’। কিন্তু রোগী যদি ‘না’ বলেন, তখন ডাক্তার অন্য কোনো কারণে রোগটি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব রোগীর বাবা/মা কারো রোগটি ছিল না, সেসব রোগী যে কারণে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, ঐ একই কারণেই ঐসব রোগীও কি রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে না, যাদের বাবা/মা কারো রোগটি ছিল?
কোনো রোগের সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে রোগটি রোগীর বাবা/মা কারো থাকার কথা জেনেই রোগটিকে বংশগত বলে ফেলা যে ক্ষতিকর, ডাক্তাররা তা বুঝতে পারলে কখনোই এভাবে মন্তব্য করতেন না।

পুরো বই শুরু থেকে পড়তে হলে: https://waytogainlonglife.blogspot.com/2019/03/blog-post.html