ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগগুলোর একটার সাথে আরেকটার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রোগগুলো একই সূত্রে গাঁথা। কাউকে এরকম একটা রোগ আক্রমণ করলে অন্য রোগগুলোও তাকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায় এবং আক্রমণ করেও প্রায়ই। কারণ একই ধরনের কারণে রোগগুলো মানুষকে আক্রমণ করে। যাদেরকে রোগগুলো আক্রমণ করে, খুঁজলে দেখা যায়, তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবনযাত্রা প্রায় একই। তাই রোগগুলো যে সমগোত্রীয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে যারা এরকম কোনো একটি বা দু’টি রোগে আক্রান্ত হবার পর সেগুলো নিয়ন্ত্রণের যথাসাধ্য চেষ্টা করে, তাদেরকে সমগোত্রীয় অন্য কোনো রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু যারা অবহেলা করে, রোগ নিয়ন্ত্রণের তেমন চেষ্টা করে না, তাদেরকে খুব দ্রুত অন্য রোগগুলো আক্রমণ করে বসে। বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে হলে প্রথমে আমরা বাস্তবতার দিকে একটু চোখ বুলাই।
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং হাই ব্লাড প্রেসার রোগগুলো পরস্পর সম্পর্কিত
আরামে থাকা এবং মোটা হবার ক্ষতি
কষ্টের কাজ থেকে গা বাঁচিয়ে আরামে আরামে থেকে আর বসে বসে খেয়ে মোটা হয়ে অনেকে প্রথম প্রথম ভাবে, ‘জীবনের সেরা সময়টা বুঝি কাটছে আমার; বেশ সুখী এবং সুস্থ-সবল দেখাচ্ছে আমায়!’ কিন্তু মোটা হবার সাথে সাথে যখন শরীরের ওজন বেড়ে যেতে শুরু করে, শরীরে মেদ জমতে শুরু করে, ভূঁড়ি বেড়ে যায়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তখন নানাভাবে ব্যাহত হয়; পরিশ্রমের সামান্য কাজ করতে গিয়েও মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে।
নতুন নতুন সব বিপদে পড়ে একসময় ভাবে, ‘কেন মোটা হলাম? চিকন থাকাই তো ভালো ছিল!’ মাঝে মাঝে এমন অনেক লোকের কথা জানতে পারি, যারা একসময় চিকন ছিল। অনেক চেষ্টা-সংগ্রামের পর মোটা হয়ে এখন আবার চিকনত্ব ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে, কিন্তু চিকন হতে পারছে না কোনোভাবে!
ভেজাল খাদ্য কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার কারণ?
খাদ্যে ভেজাল তথা বাজার থেকে কেনা খাদ্যে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর ক্যামিকেল মেশানো বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে অন্যতম আলোচনা-সমালোচনার বিষয়। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রচেষ্টার পরও খাদ্যে ভেজাল এখনো পুরোপুরি দূর করা যায়নি।
ধর্ষণ বৃদ্ধির একটি অন্তর্নিহিত কারণ
পত্রপত্রিকায় অহরহ ধর্ষণের সংবাদ আসে। বিচিত্র ধরণের- বিয়ের আগের রাতে কনেকে ধর্ষণ, পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণ, কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ, কোচিং সেন্টারে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ, ফেসবুকে প্রেম, অতঃপর ধর্ষণ ইত্যাদি।
তবু আমার মনে হয় আমাদের সমাজে সংঘটিত ধর্ষণের নব্বই ভাগ খবরই প্রকাশিত হয় না, পত্রিকায় আসা দূরে থাক। এর প্রধান কারণ- ধর্ষিতা বা তার পরিবার মনে করে, বিষয়টা জানাজানি হলে সমাজে মেয়েটি চরমভাবে হেয় হবে এবং তাকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।
কেন, একটা মেয়ে ধর্ষিত হলে তাকে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়? তার তো এখানে বিন্দুমাত্র দোষ নেই। তাছাড়া বিয়ের পর স্বামীর সাথে মাত্র একটি রাত কাটানোর পর একটি মেয়ের যে অবস্থা, ধর্ষিতা মেয়েটিরও একই অবস্থা। স্বামীর সাথে একশত রাত কাটানোর পরও একটি মেয়ে যদি 'পুরনো' না হয়, মাত্র একবার অল্প সময়ের জন্য একটি মেয়ে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় একজনের সাথে থাকার কারণে পুরনো বা পরিত্যক্ত হবে কেন?
ধর্ষিত হওয়া যদি আমাদের সমাজে নিন্দনীয় (সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে) না হতো, তাহলে নরপশুদের হাতে ধর্ষিত হওয়া থেকে এদেশের হাজার হাজার বালিকা-কিশোরী-তরুণী রেহাই পেতো, যারা আমার বা আপনার স্নেহের বোন বা কন্যা।
গোপনে কারো একটি হাত ভেঙ্গে দেয়ার সাহস যেমন কারো হয় না, তেমনি গোপনে কারো চরিত্রে হস্তক্ষেপ করার সাহসও কেউ করতো না যদি হাত ভেঙ্গে দেয়ার মতো ধর্ষণের বিষয়টিও সবাইকে বলে দেয়া যেতো স্বাভাবিকভাবে।
যতদিন ধর্ষিত মেয়েদের প্রতি আমাদের এ ভ্রান্ত ধারণা দূর না হবে, ততদিন সমাজে আমাদের অজান্তে হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে, কিন্তু কেউ মুখ খুলবে না। এমনকি নরপশুরা মেয়েদের এ দুর্বলতা ও অসহায়ত্বেরই সুযোগ গ্রহণ করতেই থাকবে।
এমনও হতে পারে, আপনার আদরের কন্যাও একদিন কোনো নরাধম কর্তৃক ধর্ষিত হতে পারে, কিন্তু আপনার কন্যা আপনার কাছ থেকেও তা লুকিয়ে রাখবে। কারণ এতে আপনার কাছেই সে ছোট হয়ে যাবে!
তাই ধর্ষিত হবার পর ধর্ষিতা নারী যদি তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়ে দেয়, তাহলে সমাজে ধর্ষণ দিন দিন কমে যেতে পারে।
পোস্টটি সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাতে পারেন কমেন্টে।
খুন ও ধর্ষণ বন্ধের একটি কার্যকর উপায়
পৃথিবীতে মানুষের হাতে মানুষ খুনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। পৃথিবীর শুরু থেকেই মানব সমাজে খুন-হত্যার মতো চূড়ান্ত অনাকাঙ্খিত ঘটনা চলে আসছে। মানুষের কাছে মানুষের পরাজয়ের অন্যতম দিক খুন। আর ধর্ষণের শুরু কখন থেকে, তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও মানুষের হাতে মানুষের ইজ্জত লুট হওয়াটা মনুষত্ববোধের চরম পরাজয় ছাড়া কিছু নয়। পৃথিবীর অনেক অনেক দেশে খুন এবং ধর্ষণের সংখ্যা কম হলেও অনেক দেশে খুন এবং ধর্ষণ চলছে ব্যাপকহারে।
পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র যদি খুন ও ধর্ষণ পুরোপুরি বন্ধ করতে আন্তরিকভাবে বদ্ধপরিকর হয়, তাহলে সে রাষ্ট্রের উচিত এরকম একটি আইন করা- ‘‘খুন করলে খুনীকে গ্রেফতারের পর একমাসের মধ্যে যেভাবে সে খুন করেছে, যথাসম্ভব একইভাবে খোলা প্রান্তরে তাকে খুন করা হবে আর ধর্ষককেও গ্রেফতারের পর এক মাসের মধ্যে গ্রেফতার করে খোলা প্রান্তরে পুড়িয়ে মারা হবে’’ এবং আইন কার্যকর করা শুরু করা।
যদি এই আইন প্রবর্তন করে অনতিবিলম্বে কার্যকর করা শুরু করা হয়, আমার বিশ্বাস, পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সেই রাষ্ট্রে খুন ও ধর্ষণ আগের চেয়ে ৯০ শতাংশ কমে যাবে। এভাবে শুধু ১০ জনকে শাস্তি দেয়া হলে শত শত মানুষ খুন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, হাজারো নারী ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাবে, মানুষের জীবন আগের চেয়ে আরো নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ হবে। আমার এটাও মনে হয়, যদি শুধু কোনো এক রাষ্ট্র এরকম আইন করে, অন্য অনেক রাষ্ট্রও এমন আইন করতে পারে।
জানি না, খুন ও ধর্ষণ বন্ধে পৃথিবীর কোনো দেশে এখনো এরকম কোনো আইন প্রণীত হয়নি কেন বা আদৌ কখনো প্রণীত হবে কিনা!
স্র্রষ্টা বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?
আমি যেহেতু ইসলাম ধর্মে জন্মলাভ করেছি, সে সূত্রে ইসলাম-সম্পর্কিত দু’একটা কাহিনী জানি। ইসলামের একজন পন্ডিতের নাম ছিল আবু হানিফা রহ.। তাঁর জীবদ্দশায় একজন নাস্তিক প্রকাশ্যে যেখানে সেখানে প্রচার করতে লাগল, সৃষ্টিকর্তা নামক কিছু নেই। পৃথিবী, মহাবিশ্ব এমনি এমনি (Automatically) সৃষ্ট। এক পর্যায়ে সে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, সৃষ্টিকর্তা আছে, তাহলে সে তৎক্ষণাৎ তার অবিশ্বাস ত্যাগ করবে। তার সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন ইমাম আবু হানিফা রহ.। একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। তারিখ, সময় নির্ধারণ করা হল। লোকজনকে জানানো হল। নির্ধারিত সময়ের আগে কৌতুহলী জনগণ এসে উপস্থিত হল। নাস্তিকও। কিন্তু আবু হানিফার নাম-গন্ধও নেই। অনেকে ভাবতে আরম্ভ করল আবু হানিফা হয়তো রণেভঙ্গ দিয়ে পিছু হটে গেছেন। নাস্তিকও খালি মাঠে গোল দেয়ার আনন্দ অনুভব করতে আরম্ভ করল। অবশেষে দেখা গেল আবু হানিফা আসছেন।
আসা’র পর নাস্তিক তামাশাচ্ছলে বললেন “আপনি একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, আপনার কথার ঠিক থাকে না, সময় নির্ধারণ করে সময়মত হাজির হওয়ার চেষ্টা করেন না।” ইমাম সাহেব বললেন, “আগে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, পথে কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা, তা জিজ্ঞেস না করেই আমাকে দোষারোপ করছেন কেন?” নাস্তিক একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “পথে কি সত্যি কোনো সমস্যা হয়েছিল?” ইমাম বললেন, “হ্যাঁ, একটা সমস্যা হয়েছিল। আর সেজন্য সময়মত পৌঁছতে পারিনি এখানে। জানতে চাইলে বলতে পারি সমস্যাটা।” নাস্তিক বলল, “বলুন না শুনি।” ইমাম সাহেব বললেন, “আমি রওনা হয়ে কিছুদূর আসার পর দেখি সামনে একটা নদী। কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় আমি অস্থির হয়ে যাই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি নৌকা পাবার আশায়। কিন্তু কোনো নৌকা সেদিকে আসছিল না।
অবশেষে দেখি আমার সামনেই নদীর তীরে একটি গাছের চারা উঠল। চারাটি দেখতে না দেখতে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হল। এরপর দেখে অবাক হই যে, গাছটি নিজে নিজেই ভেঙ্গে পড়ল। এমনকি ভেঙ্গে এমন মাপের টুকরো টুকরো কাঠে পরিণত হল যেগুলো দিয়ে নৌকা তৈরি হয়। এরপর কাঠগুলো আপনা-আপনি জোড়া লেগে একটি সুন্দর নৌকায় রূপান্তরিত হল। আমি তখন আমার জন্য আশির্বাদ মনে করে নৌকাটি দিয়ে নদী পার হয়ে এখানে আসতে সক্ষম হলাম। নয়তো কী অবস্থা হতো জানি না।”
নাস্তিক লোকটি ইমাম সাহেবের কাহিনী শুনে বলল, “কী যা-তা বলছেন এসব? আপনি একজন ইমাম হয়ে এমন বানোয়াট গল্প বলতে পারেন?” ইমাম বললেন “বানোয়াট কেন বললেন?” নাস্তিক বলল, “আপনি যে কাহিনী বললেন, এ ধরনের নৌকা তৈরি আপনা আপনি কখনো সম্ভব নয়।” ইমাম সাহেব বললেন, “এ ধরনের কাহিনী আপনা-আপনি কখনো সম্ভব না হলে এ পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ, গাছপালা, ফুল-ফল নিয়ে যে সুশৃঙ্খল সুন্দর বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা, এ কাহিনী তাহলে আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়েছে বলে আপনার বিশ্বাস হয় কিভাবে?” নাস্তিক হতভম্ব হয়ে গেল ইমাম সাহেবের বাস্তবধর্মী প্রশ্ন শুনে।
যাহোক যখন ধরেই নিয়েছি মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল, তখন এ ব্যাপারে আপাততঃ কথা আর না বাড়িয়ে চলে যাই মানব জাতির প্রাথমিক দু’সদস্যের আবির্ভাবের আলোচনায়।
এককোষী প্রাণী, কোটিকোষী প্রাণীর পথ পাড়ি দিয়ে যখন মানবজাতির শুভসূচনা ঘটেছিল, তখন তাদের দু’সদস্য দু’লিঙ্গের হল কেন? উভয় সদস্য একই লিঙ্গের হওয়া স্বাভাবিক ছিল। মানুষের বৈশিষ্ট্য যেমনঃ পঞ্চ-ইন্দ্রীয়, যৌন চাহিদা, বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি কোত্থেকে সে অর্জন করল? এসবও না হয় সৌভাগ্যবশতঃ তার সঙ্গী হল, কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে পানাহার দরকার, সে পানাহারের ব্যবস্থা তার জন্য কোত্থেকে হল? মহাবিস্ফোরণের ফলে যে পৃথিবীর অভ্যুদয় হল, সে পৃথিবী বসবাস-উপযুক্ত মাটির তৈরি হল কেন? লোহা বা ইস্পাতের তৈরিও হতে পারত পৃথিবী-পৃষ্ঠ। তাছাড়া মাটিতে উৎপন্ন গাছের ফল মাটির মত না হয়ে মিষ্টি, সুস্বাদু খাদ্যে পরিণত হয় কোন্ যুক্তিতে?
নাক দিয়ে মানুষ ঘ্রাণ নেয় এবং শ্বাসকার্য চালায়। নাকের সাথে সম্পর্ক রেখে ফুলে-ফলে ঘ্রাণ এল কিভাবে? আবার মানুষের ফুসফুস এবং নাকের সাথে সঙ্গতি রেখে অদৃশ্য বায়ুমন্ডল সৃষ্টি হল কোন্ সূত্রে? প্রারম্ভিক মানুষদ্বয় কি নিজের প্রয়োজনেই এসব গড়ে নিল? সম্ভব? শুধু পানি-জাতীয় কোনো কিছু মহাবিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল না হলেও মানবজাতির প্রারম্ভিক দু’সদস্যের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এ পানি তৈরি হল কিভাবে? মানুষ কি এসব নিজে সৃষ্টি করতে পারে? নাকি অপরিকল্পিত একটি ‘এ্যাটম-বিস্ফোরণ’ থেকে এগুলো তৈরি হওয়া বিশ্বাস করা যায়?
সূর্যটি লাভহীন কেন ঘুরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত?
প্রসঙ্গ এলে একটা প্রশ্ন আমি মাঝে মাঝে করে থাকি ছাত্রদেরকে। প্রশ্নটি হল, আমরা যখন কোনো বীজ রোপন করি, তখন তা কখনো কখনো মাটির নিচে চলে যায়। এরপরও তা থেকে চারা উঠে। মাটির নিচে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া বীজটি থেকে চারাগাছটি নিচে, ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পিছনে না গিয়ে উপরের দিকে ঢুঁ মারে কোন্ বুদ্ধিতে? এ প্রশ্নের উত্তর কোনো ছাত্র কখনো দিতে পারেনি। আমরা অনেকে হয়তো পারি। কিন্তু অনেকের কাছে বিষয়টি বেশ রহস্যময় মনে হবে। মনে হতে পারে বীজের এ ধরনের কোনো জ্ঞান আছে যে, কোন্ দিক উপর। না, বীজের বাস্তবিকপক্ষে এ ধরনের কোনো জ্ঞান নেই। তাহলে সে ঠিকঠাকভাবে উপরে উঠে আসে কিভাবে? এর উত্তর হচ্ছে বীজ যে দিক থেকে তাপ অনুভব করে সেদিকে উঠে আসে, এটা বীজের ধর্ম। এজন্য বেশি নিচে পুঁতে যাওয়া বীজ গজায় না, কারণ সে তাপ অনুভব করতে পারে না।
আরো পড়তে পারেন: ডিম আগে, না মুরগী আগে?- এর উত্তরেই আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়
এ তাপ কোত্থেকে আসে? সূর্য থেকে। এ সূর্য, তাপের উৎস, নিছক একটি তারকা। রাতের আকাশে আমরা দেখি অসংখ্য-অগণিত তারকা জ্বলজ্বল করছে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে (আকাশে মেঘ না থাকলে) মনে হয় প্রতি রাতেই আকাশে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে, আর নিয়নসাইনের মত হয়ে তারকাগুলো সে অনুষ্ঠানের শোভা বৃদ্ধি করছে। তারকার এ মিটিমিটি আলো আমাদের মনে যেমন আনন্দ সঞ্চার করে, তেমনি রাতে চলাচল করার ক্ষেত্রেও কাজে আসে অল্প হলেও।
সূর্য এ তারকাগুলোরই একটি সদস্য। মহাবিস্ফোরণের সময় বাকি সব তারকা রাতে পৃথিবীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার মত দূরত্বে অবস্থান করলো, আর সূর্য তারকাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর নিকটে চলে এল পৃথিবীকে আলো-তাপ দেয়ার জন্য, উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য, ফল পাকানোর জন্য, দিন-রাত সৃষ্টি করার জন্য, কোন্ যুক্তিতে? যারা নিজেদের ‘যুক্তিবাদী-যুক্তিবাদী’ দাবি করতে করতে গলা ফাটিয়ে ফেলে, খুবই পুলক অনুভব করে, তাদের কাছে এ প্রশ্নের কী জবাব আছে?
মানুষের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে সূর্য, পৃথিবী এগুলো নির্দিষ্ট কক্ষপথে নিয়মিত সুদূর অতীতকাল ধরে আবর্তন করে যাচ্ছে কোন্ লাভে, কোন উদ্দেশ্যে? কখনো এমন ঘটেনি যে, সূর্য তার কক্ষপথ থেকে হারিয়ে গেছে আর পৃথিবীর মানুষ অন্তহীন রাতে হাবুডুবু খেয়ে কান্নাকাটি করছে। কী করার থাকবে তখন বিজ্ঞানী-যুক্তিবাদীদের, সূর্যকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনার জন্য?
অবাক হই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানুষের স্রষ্টার নুন খেয়ে গুণ গাওয়া দূরে থাক, স্রষ্টাকে স্বীকার না করার মতো স্পর্ধা দেখে; যেখানে মানুষের চেয়ে নয়, পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় সৃষ্টিগুলো ঐকান্তিকভাবে স্রষ্টার নির্দেশ পালন করে।
মহাবিস্ফোরণের পরিণতি মাটি, বাতাস, পানি....!
পৃথিবী বড়ই অভাবিত, উপভোগ্য স্থান। রঙ্গিন এক জগত। এতো সুন্দর, মনোরম, কাঙ্খিত একটা কিছু নিছক একটা বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হওয়াটা কল্পনা করা যায়! পৃথিবীর উপরিভাগ তৈরি মাটি দিয়ে। মহাবিস্ফোরণ থেকে অপরিকল্পিতভাবে একটা পৃথিবী ভূমিষ্ট হল, সেটা মাটির না হলেও তো হত। সেটা হতে পারত তামার তৈরি; পাথর, লোহা বা দস্তার তৈরী। কোন্ যুক্তিতে তা এমন পদার্থের তৈরি হল, যা থেকে উদ্ভিদ জন্মে, গাছপালা, ফুল-ফল, শাকসব্জি জন্মে? পৃথিবী মাটির তৈরি না হলে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা দুরে থাক, নিজের অস্তিত্বের খবরও আমাদের থাকত না।
ধরে নিলাম, বিগ ব্যাং থেকে পৃথিবী মাটির তৈরি হল অপরিকল্পিতভাবে, কিন্তু সূর্য নামের যে তারকা তাপ দেয়ার ফলে মাটিতে উদ্ভিদ জন্মে, সে তারকাটি যদি অন্য তারকাদের ভীড়েই রয়ে যেত, তাহলে পৃথিবী মাটির তৈরি হয়েও কী লাভ হত? এখন কি ধরে নিতে হবে যে, সূর্যও অপরিকল্পিতভাবে তারকাজগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীতে তাপ, আলো সরবরাহের জন্য ছুটে এসেছে মহাবিস্ফোরণের পর? ঠিক আছে, ধরে নিলাম।
২২ আগস্ট ২০১০, রাত ১০.০০টা। আজ রাত ইশার নামাযের জন্য মসজিদে গিয়েছি চাঁদের আলোয়, ফিরেও এসেছি চাঁদের আলোয়। আস্তিকতা-নাস্তিকতার জ্ঞানহীন একজন নিরপেক্ষ মানুষ যদি একটু চিন্তা করে যে, যে নির্দিষ্ট নিয়মে চাঁদ আবর্তন করে, আলো দেয়, এ নিয়মে চাঁদ কোন্ বুদ্ধিবলে এল? চাঁদের কি বুদ্ধি বলতে কিছু আছে? চাঁদ কি জড়বস্তু নয়? চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি, পূর্ণিমা-অমাবস্যা কিন্তু একটি নির্দিষ্ট পঞ্জিকারও কাজ করে। এ চাঁদ কি কোনো অপরিকল্পিত বিস্ফোরণের ফল হতে পারে? ঐ ব্যক্তিকে যদি কেউ বলে, একটি অজ্ঞাত বিস্ফোরণ থেকে এ চাঁদ সৃষ্টি হয়েছে এবং এভাবে নির্ধারিত কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছে, তবে সে কি বিষয়টি সমর্থন করতে পারে? মেনে নিলাম চাঁদও অপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট এবং স্থাপিত।
এবার পানির কথায় আসা যাক। ভুপৃষ্ঠের চার ভাগের প্রায় তিন ভাগই পানি। পানি ছাড়া জীবন অচল। সে জীবন উদ্ভিদের হোক আর প্রাণীর হোক। ধরে নিলাম বিগ ব্যাং থেকে চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, উদ্ভিদ, পশু, পাখি, মানুষ প্রভৃতি সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ পানি নামক কোনো কিছু সৃষ্টি হয়নি, তাহলে অবস্থা কেমন হত? মানুষের কি উদ্ভব হত পানি ছাড়া? মানুষ সৃষ্টি হলেও কি সে বেঁচে থাকতে পারত? প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় ভাবে মানুষের পানির প্রয়োজন।
একটি নিছক বিস্ফোরণ থেকে পানির সৃষ্টি, তা-ও পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই পানি, এমন উদ্ভট গল্প যারা সাজায়, তাদের ‘যুক্তিবাদী’ বলার কোনো সুযোগ থাকে?
এবার বাতাস নিয়ে একটু আলোচনা করি। বাতাস দেখেছে, এমন গানগল্প কোনো পাগলকেও করতে শোনা যায় না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবনধারণ করে যে প্রাণীগুলো, সে প্রাণীগুলোর মধ্যে নাক এবং ফুসফুস কোত্থেকে স্থাপিত হল? আবার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য বাতাসের ব্যবস্থা হল কোত্থেকে? ঈশ্বর নামক কোনো কিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে যখন বিষয়টি নিয়ে ভাবি, তখন মাথা যেন শুধু ঘোরে, চোখে সব অন্ধকার দেখা যায়। কে দেবে এ প্রশ্নের উত্তর?
দেখা যায় না যে বাতাস, সে বাতাস যদি মহাবিস্ফোরণের পর সৃষ্টি না হত, তাহলে কেউ কি বলতে পারত, পৃথিবীর উপরিভাগের শূণ্যস্থানে কী একটা যেন নেই, সেটা হল না কেন? নাক আর ফুস্ফুস থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার সৃষ্টি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ত। অন্যান্য প্রাণীর কথা উল্লেখই বাহুল্য। স্বয়ংক্রিয় এক বিস্ফোরণ থেকে বাতাস নামক এ অদৃশ্য জিনিসটা ঘটনাক্রমে সৃষ্টি না হলে সুন্দর, পরিপাটি এ বিশ্বজগত সৃষ্টি কি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হত না?
লেখাটি ‘‘আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন?’’ নামক একটি বইয়ের অংশবিশেষ। বইটি পুরোপুরি অনলাইনে পড়া যাবে। এই লিঙ্কে যেতে হবে:আল্লাহকে বিশ্বাস করি কেন? (পর্ব-১)
জাতীয় বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করার উপায়
আমার চাকরি শুরু হয়েছে ১৫ তম গ্রেডে ৯৭০০ টাকা স্কেলে। পিটিআইতে সি-ইন-এড প্রশিক্ষণের পর এক গ্রেড উন্নীত হয়ে ১৪ তম গ্রেডে এসেছে। বেতন তো বৃদ্ধি পাবার কথা স্বাভাবিকভাবেই। সত্যিই, মূল বেতন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু মোট বেতন গেছে কমে! কিভাবে?
আগে বাড়ি ভাড়া ছিল ৫০ শতাংশ। মাত্র এক গ্রেড বাড়তে না বাড়তেই এবার তা হয়ে গেছে ৪৫ শতাংশ! মূল বেতন বাড়লেও মোট বেতন কমে গেছে। বেতন বৃদ্ধির কথা বলে বরং বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে! একে কি তামাশা বলবেন, নাকি প্রহসন বলবেন, নাকি বঞ্চনা বলবেন, নাকি বলবেন ধোঁকা? যা-ই বলবেন, সবই ঠিক।
২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট প্রকাশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় যখন দেখেছি সরকার চাকরিজীবিদের বেতন আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছে, তখন বেতন স্কেলের অন্য দিকগুলো নিয়ে তেমন ভাববার প্রয়োজন মনে হয়নি। যেমন: আগে আট বছর পর যে টাইম স্কেল দেওয়া হতো, তা বাদ দিয়ে নতুন কাঠামোয় ১০ বছরে একটা গ্রেড বৃদ্ধির নিয়ম করা হয়।১২ তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে গেলে ৩০০ টাকা থেকে লাফ দিয়ে বেতন বাড়ে ১২০০ টাকা (আগের তুলনায় ৪গুণ), আবার ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন বাড়ে ৩৫০০ টাকা (তিন গুণ প্রায়)! এই ১৪ তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে যাবার পথে বেতন কাঠামো কোনো ফর্মুলা বা ব্যাকরণ-ই অনুসরণ করেনি। কেন? এমন মনগড়া কাঠামো প্রণয়নের কী দরকার ছিল? প্রশ্ন জাগে, এমন ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য দেশের ‘সর্বোচ্চ মেধাবী কিছু প্রবীণ আমলা’কে নিয়োগ করার কি কোনো আবশ্যকতা ছিল? এজন্য তো এসএসসি পাস কয়েকজনকে নিয়োগ দিলেই কাজটা তারা অল্পসময়ে করে দিতে পারতো! প্রশ্ন জাগে, বেতন কাঠামো কি বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলারা প্রণয়ন করেছে? এখনও কি এদেশে বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমল চলছে? মোটেই না।
এই কাঠামো অল্পশিক্ষিত কেউ যেমন প্রণয়ন করেনি, বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলারাও করেনি, করেছে এদশেরই কিছু ‘উচ্চশিক্ষিত স্বার্থপর’ মানুষ, কাজেকর্মে যারা বৃটিশ বা পাকিস্তানী শাসনরীতিই অনুসরণ করে; যারা বৃটিশ বা পাকিস্তানী আমলা না হলেও বৃটিশ বা পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মার মতোই কাজটি করেছে। জমিদারী প্রথা আমরা দেখিনি, কিন্তু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, এখনো কাজেকর্মে আমাদের অনেকেই আমাদের সাথে জমিদারদের মতোই আচরণ করছে। এরা সেইসব জমিদারদের আক্ষরিক অর্থে উত্তরসূরী না হলেও তাদের প্রেতাত্মা, কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমান বেতন কাঠামোকে ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ বলা এবং এই কাঠামো প্রণেতাদেরকে ‘বৃটিশ-পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মা’ বা ‘জমিদারদের প্রেতাত্মা’ বলার কারণ সম্পর্কে উপরে সামান্যই বলা হয়েছে। আমরা এবার এই কাঠামোর আরো কিছু ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ বিষয় এবং কাঠামো-প্রণেতাদের স্বার্থপরতার আরো কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখবো।
২০ তম গ্রেড থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত মোট ৮টা গ্রেড মিলিয়ে যেখানে বেতন বাড়ে মাত্র ৩০৫০ টাকা, সেখানে ৭ম গ্রেড থেকে মাত্র ১টা গ্রেড বেড়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডে গেলেই বেতন বাড়ে ৬৫০০ টাকা, দ্বিগুণেরও বেশি! একটা গ্রেড পরিবর্তনে যেখানে সর্বোচ্চ বেতন বাড়ে ১২০০০ টাকা, সেখানে শেষের দশটা গ্রেড মিলিয়ে বেতন বাড়ে মাত্র ৭৭০০ টাকা!
আমরা উপরে বেতন কাঠামোয় গ্রেডে গ্রেডে বেতন বৃদ্ধির ধারা দেখেছি। বেতন বৃদ্ধির এই ধারা (২৫০<৩০০>২০০<৩০০<৪০০<৫০০<৮০০>৩০০<১২০০<৩৫০০<৬০০০>১০০০<৬০০০<৬৫০০<৭৫০০>৭০০০>৬৫০০<৯৫০০<১২০০০) কি বিজ্ঞানের কোনো সূত্র অনুসরণ করেছে, নাকি গণিতের কোনো সূত্র অনুসরণ করেছে, বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এটাকে লুডু খেলার মইয়ের সাথে তুলনা করারও সুযোগ নেই। কারণ সেখানে যে-কারও ভাগে বড় মইও পড়তে পারে, ছোট মইও পড়তে পারে। কিন্তু এখানে অন্যদের জন্য নির্দিষ্ট (ফিক্স) করে দেয়া হয়েছে শুধু বিভিন্ন আকারের ছোট ছোট মই, আর যারা কাঠামোটি প্রণয়ন করেছে, তাদের নিজেদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সব বড় বড় মই। এখানে প্রতিপক্ষের জন্য বড় মইয়ে ওঠার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি আর যারা খেলাটা আয়োজন করেছে, তাদের ভাগে ছোট মই পড়ার কোনো সম্ভাবনাই রাখা হয়নি। এটাকে ‘বৃটিশ-পাকিস্তানী শাসকদের প্রেতাত্মা’দের কাজ মনে না করার সুযোগ কোথায়! এটাকে ‘মনগড়া ও যাচ্ছেতাই’ না বলেও কি কোনো উপায় আছে?
বেতন বৃদ্ধির এই ধারায় ২৫০ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ২০০ টাকায় নেমে গেছে, আবার বাড়তে বাড়তে ৮০০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে পা পিছলে হঠাৎ নেমে গেছে ৩০০ টাকায়, আবার বাড়তে বাড়তে ৬০০০ টাকায় গিয়ে শেয়ার বাজারের মতো হঠাৎ নেমে গেছে ১০০০ টাকায়! এভাবে নাটকের পর নাটক হয়েছে মাত্র ২০টা গ্রেডের একটা কাঠামোতে। এটা কি শেয়ার বাজারের দরের উঠানামা? এটা সবার বিশ্বাস হবে, যারা এই কাঠামোটা করেছে, তাদের কাছে এই ‘উঠানামা’র পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো যুক্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ মনগড়া, যাচ্ছেতাই। স্বার্থপরতার সর্বোচ্চ প্রদর্শনী। বিমূর্ত কবিতা সম্পর্কে একটি রম্যরচনা পড়েছিলাম অনেক আগে একটি দৈনিক পত্রিকায়। সেখানে একটি গল্প উল্লেখ করা হয় এরকম, ইংল্যান্ডের একজন প্রসিদ্ধ কবির একটি কবিতার অনুষ্ঠানে এক পাঠক ঐ কবিকে তাঁর একটি কবিতার দু’টি চরণ উল্লেখ করে প্রশ্ন করলো, ‘স্যার, এই দু’টি চরণ দ্বারা আপনি কী বুঝিয়েছেন?’ কবি জবাবে বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, কবিতাটি যখন লিখেছিলাম, তখন এই চরণ দু’টির অর্থ শুধু আমি আর ঈশ্বর জানতাম, কিন্তু এখন দেখি শুধু ঈশ্বরই জানেন!’
আমার এক সহকর্মী বললো, ‘১২তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডে বেতন পায় কর্মচারী ও কামলারা, তাই তাদের গ্রেডে বাড়ে ২০০/৩০০ টাকা করে আর ১ম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে বেতন পায় কর্মকর্তা ও আমলারা, এই জন্য তাদের বেতন বাড়ে ৬০০০/৭০০০ টাকা করে।’
আমলা ছাড়া যারা এই বেতন কাঠামোর সুবিধার আওতার বাইরে, এমন ১ লক্ষ সচেতন মানুষের মতামত নেয়া হলে এমন ১ জনও খুঁজে পেতে কষ্ট হতে পারে, যে এরকম ধাপ নির্ধারণকে নিঃস্বার্থ, পক্ষপাতহীন ও যৌক্তিক বলে মতামত দেবে।
আমার মতো যারা ১৫তম গ্রেডে চাকরি শুরু করেছেন, তাদের (কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টে ভিন্ন হতে পারে) চাকরির ১০ম বছরে নতুন গ্রেডে উন্নীত হবার সময় ইনক্রিমেন্ট পেয়ে পেয়ে মূল বেতনের সাথে যোগ হয়েছে ৪৯২০ টাকা। অথচ ১০ বছর পর উন্নীত গ্রেডে যাবার ফলে তার চেয়ে বেশি না বেড়ে যদি মাত্র ৮০০ টাকা বাড়ে, তাহলে বিষয়টা কি পুরোপুরি তামাশা হয়ে যায় না? ১০ বছরে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে পেয়ে যা বেড়েছে, উন্নীত গ্রেডে তার চেয়ে বেশি বাড়লেই ১০ বছর অপেক্ষা করাটা সার্থক হতো। সকল শ্রেণির চাকরিজীবির ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য। এই দৃষ্টিকোণ থেকেও বর্তমান কাঠামোকে ‘যাচ্ছেতাই ও তামাশাপূর্ণ’ বলার সুযোগ থাকে।
বর্তমান বেতনকাঠামো অনুযায়ী মাস-শেষে সরকারের যে টাকা খরচ হয়, সবার বেতন আনুপাতিক হারে সমানভাবে (পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো) বৃদ্ধি করলেও সরকারের খরচ বেশ একটা বাড়বে না। তাছাড়া দেশের সব নাগরিকের প্রতি সুবিচার করতে গেলে যদি দেশের কিছু টাকা বাড়তি খরচ হয়, তা তো আর উপরের গ্রেডের চাকরিজীবিদের পকেট থেকে যাবে না! এদেশে সরকার যতো রাজস্ব পায়, তার বেশির ভাগ পায় সাধারণ মানুষ থেকে। উপরের গ্রেডের অল্প সংখ্যক চাকরিজীবি মুঠোফোনে কথা বলে প্রতি মাসে সরকারকে যা রাজস্ব দেয়, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি রাজস্ব দেয় নিচের দিকের চাকরিজীবিরা।
দেশের তৃণমূলে সরকারি দায়িত্ব পালন করছে নিচের দিকের চাকরিজীবিরা। উপরের শ্রেণির চাকরিজীবিদের কেউ কেউ শুয়ে-বসেই বেতন নিচ্ছে, পাচ্ছে বাড়তি অনেক সুবিধাও। একজন ইউএনও বা জেলা প্রশাসককে কখনো কি দেখেছেন কোনো উপজেলা বা জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর এক মাসের মধ্যে পুরো উপজেলা বা জেলা ঘুরে দেখেছে, সেই উপজেলা বা জেলায় কয়টি রাস্তা, কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুরবস্থায় আছে, কয়টি সংস্কারযোগ্য ক্ষেত্র আছে? কখনো কি দেখা যায়, একজন ইউএনও বা জেলা প্রশাসক কোনো এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর অল্প সময়ের মধ্যে সেই এলাকার প্রতিটা গ্রাম/ইউনিয়ন ভিত্তিক মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের সাথে পরিচিত হতে, তাদের সমস্যার কথা একান্তে শুনার ব্যবস্থা করতে? দেখা যায় না। এরা মূলত মিটিংয়ে মিটিংয়েই সময় কাটায়। এদের দৃশ্যমান কাজ খুব অল্প। যেমন: পাবলিক পরীক্ষা পরিদর্শন, বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দেয়া, কারেন্ট জাল নিধন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা ইত্যাদি।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নাম, কিংবা একজন সংসদ সদস্য বা উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম যেভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাই জানে, একজন ইউএনও বা জেলা প্রশাসকের নাম সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলার মানুষ সেভাবে জানে না। এরা কোনো উপজেলা বা জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর কয়েক বছর চাকরি করলেও সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা জেলার অধিকাংশ মানুষ এদেরকে চেনা দূরের কথা, এদের নামটা পর্যন্ত জানে না। আক্ষরিক অর্থে এরা মানুষের খুব কম কাজেই লাগে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিজীবিরা শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের সেবা করে, খুব কমই এরা শুয়ে-বসে থাকতে পারে। কিন্তু বেতনের ক্ষেত্রে সুবিধাগুলো নিয়ে নেয় প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবিরা। এটাই বৃটিশ বা পাকিস্তানী মানসিকতা, এটাই জমিদারসুলভ আচরণের প্রতিফলন।
উপরের গ্রেডে চাকরিজীবিদের স্বার্থপরতার কাছেই জিম্মি হয়ে আছে দেশের সামগ্রিক মানুষের জীবনমানের উন্নতি। একটা বিশেষ শ্রেণির হাতে দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বেশি। সরকার বিষয়টা যতদিন বিবেচনায় না নেবে, ততদিন দেশ সত্যিকার উন্নতির পথ খুঁজে পাবে না।
বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ যখনই নেয়া হয়, তখন অথবা পরবর্তী পে-স্কেল যখনই দেয়া হয়, তখন কিছু প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ থাকবে।
নূর আহমদ : সরকারি চাকরিজীবি